বাসে স্কুলছাত্রীকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ, গ্রেপ্তার চালক কারাগারে
Published: 15th, October 2025 GMT
বগুড়ায় যাত্রীবাহী আর.কে পরিবহনের একটি বাসে দশম শ্রেণির ছাত্রীর শ্লীলতাহানীর অভিযোগে গ্রেপ্তার চালক সোহাইল হাসান শাকিবকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে পুলিশ তাকে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ওই ছাত্রীর ভগ্নিপতি মো.
মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, তার শ্যালিকা দুপুর দেড়টায় তাকে ফোন দিয়ে জানায় যে, ঢাকা থেকে আসা তার এক বন্ধু এবং সে সকাল ১০টায় সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড় থেকে আর.কে পরিবহনের একটি বাসে বগুড়া যাওয়ার জন্য ওঠে। বাসটি বগুড়া শহরের প্রবেশের পথে দুপুর সাড়ে ১২টায় শহরতলীর বনানী মোড়ে হক পেট্রোল পাম্পের থেমে যায়।
সেসময় বাসের সকল যাত্রী নেমে যায়। তারাও বাস থেকে নামতে চাইলে বাসের চালক সোহাইল হাসান শাকিব (২৬) ও হেলপার সৈকত (২২) তাদেরকে বাস থেকে নামতে নিষেধ করে এবং তাদেরকে জোর করে গাড়ির ভিতরে আটকে রাখে। পরে তারা ছেলেটিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। এরপর চালক শাকিব স্কুলছাত্রীকে গাড়ির ভিতরের পিছনের ছিটে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে।
স্কুলছাত্রী চিৎকার করলে চালক তার মুখ চেপে ধরে। এসময় ওই স্কুলছাত্রীর বন্ধু তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে আসামিরা তাকে জোর করে ঢাকাগামী একটি গাড়িতে তুলে দেয়।
পরে তারা বাসসহ ওই স্কুলছাত্রীকে নিয়ে পর্যটন মোটেলের পশ্চিমে হাইওয়ে রোডের পার্শ্বে অবস্থিত গাড়ি ওয়াশ করার একটি ডকে নিয়ে যায়। সেখানে তারা তাকে বাসের পিছনের সিটে বসিয়ে রাখে। এর কিছুক্ষণ পর বাসের চালক ও হেলপারের সাথে অজ্ঞাত আরো ২/৩ জন বাসে প্রবেশ করে ঘটনাটি কাউকে না বলার জন্য ভয় দেখায়।
এরপর গাড়ি ওয়াশ করা শেষে স্কুলছাত্রীকে ওই বাসে করে বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া বাস স্ট্যান্ডে নিয়ে যায় তারা। সেখানে গাড়ি থেকে নামিয়ে ঢাকাগামী অন্য একটি গাড়িতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী বিষয়টি আর.কে বাসের কাউন্টারে গিয়ে জানালে সেখানে লোকজন থানায় সংবাদ দেয়।
শাজাহানপুর থানা পুলিশ সেখান থেকে মহিলা পুলিশের মাধ্যমে ভিকটিমকে থানায় নিয়ে যায় এবং থানা হেফাজতে রাখে।
এ বিষয়ে শাজাহানপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, “ঘটনা জানার পর টাঙ্গাইলের হাইওয়ে পুলিশের সহযোগিতায় বগুড়া ডিবি এলেঙ্গা থেকে বাস চালককে গ্রেপ্তার করে। পরে ভুক্তভোগীর ভগ্নিপতি এ ঘটনায় থানায় লিখিত এজাহার দিলে সেটাকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার পর তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”
ঢাকা/এনাম/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জিসান হত্যা: আদালতে জবানবন্দি দিলেন ৩ আসামি
খুলনার দিঘলিয়ায় সাত বছরের শিশু জিসানকে হত্যা করেন প্রতিবেশী ফয়সাল। তার লাশ গুম করতে সহযোগিতা করেন অভিযুক্তের মা-বাবা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিঘলিয়া থানার জিআরও এএসআই ইমাম আলী।
তিনি জানান, রবিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে ফয়সাল ও তার বাবা-মাকে খুলনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার বিশ্বাসের আদালত-১ এ হাজির করা হয়। সেখানে গ্রেপ্তারকৃতরা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালতে প্রথমে ফয়সাল (২৬), এরপর তার বাবা জিএম হান্নান (৫২) ও সর্বশেষ তার মা মাহিনুর বেগম (৪৫) জবানবন্দি দেন। পরে আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
আরো পড়ুন:
শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ, যুবক গ্রেপ্তার
খুলনায় শিশু জিসান হত্যা: আসামির বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
এদিকে, সন্তান হারা জিসানের মায়ের আহাজারি যেন থামছে না। ১২ বছর বয়সী বড় ছেলে রাশেদকে জড়িয়ে একের পর এক বিলাপ করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাজান তো কোনো অন্যায় করে নাই। আমার লগে ওদের কোনো শত্রুতা নাই। কেন ওরা আমার বাজানরে মাইরা ফালাইলো। কেমনে আমার বাজানরে খুন করল? আমি এইডার বিচার চাই। সুষ্ঠু বিচার চাই।”
তিনি বলেন, “আমার বাবারে ওরা যে কষ্ট দিছে, আমিও ওগো সেই কষ্ট দিবার চাই। আমার বাবারে যেভাবে শাস্তি দিছে, আমিও ওদের সেভাবে শাস্তি চাই। আমি ওগো ফাঁসি চাই। আমার বাজান মসজিদ থেইক্যা নামাজ পইড়া বাহির হইছে বৃহস্পতিবারের দিন। ওই শয়তানও সঙ্গে নামাজ পড়ছে। নামাজ পইড়া দু’জন একসাথে বাহির হইছে। এরপর আমার বাবারে হাত ধরে লইয়া কাম করছে।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লিটন কুমার মন্ডল বলেন, “৯ অক্টোবর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে শিশু জিসানকে ফয়সাল তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে তিনি দড়ি দিয়ে বেঁধে রান্নাঘর থেকে দা এনে কুপিয়ে হত্যা করেন জিসানকে। ঘটনাটি প্রথমে ফয়সালের মা মাহিনুর বেগম আঁচ করতে না পারলেও পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন, তার ছেলে একটি শিশুকে হত্যা করেছে। এরপর তিনি ফয়সালের বাবা হান্নানকে খবর দেন।”
তিনি বলেন, “তারা উভয়ে জিসানের মরদেহ প্রথমে প্লাস্টিকের বস্তায় এবং পরবর্তীতে একটি চটের বস্তায় করে বাড়ির পূর্ব পাশের দেওয়ালের কাছে মাটি চাপা দেন। বিষয়টি যাতে কেউ আঁচ করতে না পারেন সেজন্য মাটির উপর রোদে শুকানোর জন্য পাটখড়ি সাজিয়ে রাখেন তারা।”
দিঘলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এইচএম শাহীন বলেন, ‘কি কারণে এবং কেন শিশু জিসানকে হত্যা করা করেছে এর উত্তর বের করার জন্য অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন। বাদীর সাথে তাদের কোনো শত্রুতাও ছিল না। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ফয়সাল মাদকাসক্ত ছিলেন।”
অভিযুক্ত ফয়সালের চাচা জিএম আকরাম বলেন, “সরকারি সেনহাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ফয়সাল এসএসসি পাস করে। এরপর স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে। ওদের স্বভাব চরিত্রের কারণে আমি খোঁজখবর রাখি না। মাঝেমধ্যে ওর মাথা ঠিক থাকতো না, পাগলামি করত।”
উল্লেখ্য, বড় ছেলে রাশেদ নানা নানির সঙ্গে ভোলায় থাকে। ছোট ছেলে জিসান বাবা-মায়ের সঙ্গে দৌলতপুর-দেয়াড়া খেয়াঘাট সংলগ্ন মন্ডল টেক্সটাইল মিলের কোয়ার্টারে বসবাস করত। জিসানের বাবা আলমগীর হোসেন মন্ডল টেক্সটাইল মিলের মেকানিক্যাল বিভাগের শ্রমিক।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ