ফাঁসির বদলে ইনজেকশন দেওয়া হোক, চান ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা
Published: 16th, October 2025 GMT
ভারত সরকার চাইলে ভবিষ্যতে মৃত্যুদণ্ডও অনেক মানবিকভাবে, কম যন্ত্রণা দিয়ে কার্যকর করা সম্ভব হতে পারে। ফাঁসির বদলে প্রয়োগ হতে পারে প্রাণঘাতী ইনজেকশন কিংবা গ্যাস চেম্বারের মতো তুলনামূলক কম যন্ত্রণাদায়ক পদ্ধতি।
সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হওয়া এক জনস্বার্থ মামলায় বিচারপতিদের মন্তব্য থেকে এ সম্ভাবনার জন্ম। বিচারপতি বিক্রম নাথ ও বিচারপতি সন্দীপ মেহতার ডিভিশন বেঞ্চ গত বুধবার ওই মামলার শুনানির সময় মন্তব্য করেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির বদল হয়। মুশকিল হলো, সরকার সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত নয়।
ভারতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে এখনো অপরাধীকে ফাঁসি দেওয়া হয়। এই একটি ব্যবস্থাই এখন পর্যন্ত কার্যকর। আইনজীবী ঋষি মালহোত্রা এ ব্যবস্থাকে মানবিক ও কম যন্ত্রণাদায়ক করতে বিকল্প অন্যান্য ব্যবস্থা প্রচলনের আবেদন জানিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছেন। সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলারই শুনানি ছিল গতকাল বুধবার।
আবেদনে বলা হয়েছে, ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা অত্যন্ত নিষ্ঠুর। কারণ, ওভাবে মৃত্যু খুবই যন্ত্রণাদায়ক ও অমানবিক। ওই পদ্ধতিতে মৃত্যু হতে অনেক সময় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগে। ফাঁসির পাশাপাশি প্রাণঘাতী ইনজেকশন, ফায়ারিং স্কোয়াড, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট কিংবা গ্যাস চেম্বারের মতো তুলনামূলকভাবে কম কষ্টদায়ক পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে।
আবেদনকারীর যুক্তি, সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে জীবনের মর্যাদা রক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সেই অধিকার মৃত্যুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
আদালতে আইনজীবী ঋষি মালহোত্রা বলেন, সবচেয়ে ভালো উপায় হলো প্রাণঘাতী ইনজেকশন প্রয়োগ করা। এ পদ্ধতিতে তুলনামূলকভাবে দ্রুত মৃত্যু হয়। এটা অনেক মানবিক ও শালীন। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৪৯টিতে প্রাণঘাতী ইনজেকশনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ব্যবস্থা চালু আছে।
আবেদনকারীর আরজি, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। তাঁকেই ঠিক করতে দেওয়া হোক কোন পদ্ধতি তিনি বেছে নিতে চান।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট সোনিয়া মাথুর বলেন, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার আগেই জানিয়েছে, ফাঁসির বিকল্প হিসেবে ইনজেকশন বা অন্য কোনো পদ্ধতি চালু করা সম্ভব না–ও হতে পারে। তিনি বলেন, এটি এক নীতিগত সিদ্ধান্ত, যা আদালত নয়, সরকারকেই নিতে হবে।
বিচারপতি মেহতা তখন বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির বদল ঘটে। মুশকিল হলো, সরকার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে প্রস্তুত নয়। কেন্দ্রের আইনজীবীকে তিনি বলেন, এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে যেন আরও আলোচনা করা হয়।
সোনিয়া মাথুর এ প্রসঙ্গে ২০২৩ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্টের এক নির্দেশের উল্লেখ করেন। সেই নির্দেশ অনুসারে অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানি জানিয়েছিলেন, বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য সরকার কমিটি গঠনের কথা ভাবছে। সোনিয়া এজলাসে বলেন, ওই কমিটি গঠন নিয়ে সরকারি পদক্ষেপের বিষয়টি জেনে তিনি আদালতকে জানাবেন। এ মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১১ নভেম্বর।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইনজ কশন ব চ রপত ব যবস থ ম নব ক সরক র র বদল
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাবাকে হত্যায় ছেলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে বাবাকে হত্যার দায়ে ছেলে জসিম মিয়াকে (৪৩) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর পাশাপাশি তাকে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) বেলা ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা ও দায়রা জজ মো. শহিদুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।
আরো পড়ুন:
ভারতীয় ভ্যাকসিন-বীজ বিক্রি করায় ৪ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
শেরপুরে বালু উত্তোলন: ৯ জনকে কারাদণ্ড
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের জিনোদপুর ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে পাট কাটা নিয়ে লিল মিয়ার (৭৫) সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় তার ছেলে জসিম উদ্দিনের। একপর্যায়ে ঘর থেকে কাঠ নিয়ে এসে বাবার মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করেন জসিম উদ্দিন। এতে রক্তাক্ত হয়ে বৃদ্ধ লিল মিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মমতাজ বেগম বাদী হয়ে নবীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে জসিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জসিম উদ্দিনকে দায়ী করে ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। একই বছরের ২৭ আগস্ট একমাত্র আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেওয়া হয় এবং ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩০২/৩২৩ ধারায় চার্জ গঠন করা হয়। সাক্ষ্য-প্রমাণ ও যুক্তি-তর্ক শেষে আজ আদালত জসিমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন খান সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, এ রায়ের মাধ্যমে বাদী ন্যায়বিচার পেয়েছেন।
তবে, আসামিপক্ষের আইনজীবী নাজমুল হক রিটন বলেছেন, এ রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।
ঢাকা/পলাশ/রফিক