এক মামলায় জামিনের পর সংস্কৃতিকর্মী শামীমকে আরও দুই মামলায় গ্রেপ্তার
Published: 16th, October 2025 GMT
ময়মনসিংহে ধর্ম অবমাননা ও সাইবার সুরক্ষা আইনের মামলায় সংস্কৃতিকর্মী শামীম আশরাফকে (৩৮) আদালত জামিন দিলেও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরও দুই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল হকের আদালতে কারাগারে থাকা শামীম আশরাফের জামিন শুনানি হয়। শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। এরপরই কোতোয়ালি থানা-পুলিশ সন্ত্রাসবিরোধী আইনের দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে আদালতে। পরে সেই আবেদন গ্রহণ করেন আদালত।
ময়মনসিংহের আদালত পরিদর্শক পি এস এম মোস্তাছিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শামীম আশরাফকে আরও দুই মামলায় দেখানোর নথি কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নগরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক পরিচালিত শামীম এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়ের ভেতরে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে হওয়া একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছরের ২৫ জুন নগরের নতুন বাজার এলাকার ক্যাপিটাল কলেজের অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেন খান আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার মামলায় গ্রেপ্তার হন। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পুলিশের করা সেই মামলাতেও শামীম আশরাফকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তার দেখানোর দুটি আবেদনেই শামীম আশরাফকে ‘আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো.
শামীম আশরাফ ‘গ্রাফিটি’ নামে একটি মুদ্রণশিল্পের ব্যবসা পরিচালনা করেন। পাশাপাশি ‘পরম্পরা’ নামের সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্টে একজনের মন্তব্যের জবাবে ধর্ম অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে। পরে সেই মন্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান অনেকে।
এ নিয়ে ৬ অক্টোবর রাতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে শামীম আশরাফের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন খেলাফত মজলিসের ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইয়াসিন আরাফত। পরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের ধারায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। ওই রাতেই নগরের আমলাপাড়া এলাকা থেকে শামীম আশরাফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এদিকে শামীম আশরাফকে গ্রেপ্তার দেখানোর সমালোচনা করেছেন অনেকে। জাতীয় নাগরিক পার্টির(এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরজু আহমেদ ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘শামীম আশরাফকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে করা মামলায় জামিন প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু জামিনে তাঁকে বাইরে আসার সুযোগ দেওয়া হয়নি। উল্টো জামিনের দিনে তাঁকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। শামীম আশরাফকে পছন্দ করার কারণ তাঁর বন্ধুদের আছে, অপছন্দ করার কারণেরও অভাব নেই! তাঁকে ঘৃণা করার সুযোগও হয়তো আছে! কিন্তু জুলাইয়ে প্রতিদিন রাজপথে থাকা শামীমকে সন্ত্রাসবিরোধী দুটি মামলায় গ্রেপ্তার কিছুটাও কি বিস্ময়ের নয়!’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ম ম আশর ফ
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহ বোর্ডে চার বছরে সর্বনিম্ন পাস, ১৫ কলেজে শতভাগ ফেল
ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে এবার পাসের হার ৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এটি গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এবার জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে। বোর্ডে শতভাগ ফেলের ঘটনা ঘটেছে ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই পাস করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, এবার এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ৩০৬টি প্রতিষ্ঠানের ৭৯ হাজার ২৩৭ শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেন। পরীক্ষায় অংশ নেন ৭৫ হাজার ৮৫৫ জন। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করেছেন ৩৯ হাজার ৯৬ জন। পাসের হার ৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। বোর্ডে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ হাজার ৬৮৪ শিক্ষার্থী। শাখাভিত্তিক পাসের হার সবচেয়ে কম ব্যবসায় শিক্ষা শাখায়।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত চার বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে জিপিএ-৫ কম পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এবার ২ হাজার ৬৪৮ জন জিপিএ–৫ পেলেও ২০২৪ সালে ৪ হাজার ৮২৬ জন, ২০২৩ সালে ৩ হাজার ২৪৪ জন এবং ২০২২ সালে ৫ হাজার ২৮ শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ পেয়েছিলেন। এ বছর পাসের হার ৫১ দশমিক ৫৪ হলেও গত বছর ছিল ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ। ২০২৩ সালে ৭০ দশমিক ৪৪ এবং ২০২২ সালে পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩২ শতাংশ।
৩ কলেজে শতভাগ পাসময়মনসিংহ বোর্ডের অধীনে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় তিনটি কলেজের সব শিক্ষার্থী পাস করেছেন। শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ, জেলার ঈশ্বরগঞ্জের চরজিথর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলার আবদুল জব্বার রাবেয়া খাতুন গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ।
১৫ কলেজের কেউ পাস করেননিএবার এই বোর্ডের ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করেননি। এর মধ্যে ময়মনসিংহের ৭টি, জামালপুরের ২টি, শেরপুরের ২টি ও নেত্রকোনার ৪টি কলেজ আছে। এই ১৫টি কলেজ থেকে পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন ১৩২ জন। এর মধ্যে ১০ জনের বেশি পরীক্ষার্থী ছিল চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষার্থী ২ থেকে ৯–এর ঘরে ছিল।
বোর্ড চেয়ারম্যানের কথাফলাফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, পাসের হার কম হওয়ার নানা কারণ আছে। এর মধ্যে আছে মনোযোগের অভাব, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার অভাব, ভালো মানের শিক্ষকের অভাব ইত্যাদি। বিশেষ করে ইংরেজি, আইসিটি, হিসাববিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ের দক্ষ শিক্ষকের অভাব আছে। এ ছাড়া আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, চরাঞ্চল, হাওর অঞ্চল ও সীমান্ত অঞ্চলে প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ–সুবিধার ঘাটতি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, স্থানীয় প্রশাসন, ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষার বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ থেকে উত্তরণ ঘটানোর চেষ্টা করা হবে বলে তিনি জানান।