ভারতের সঙ্গে করা সব চুক্তি প্রকাশের দাবি
Published: 11th, January 2025 GMT
এক দশকের অনির্বাচিত সরকার ও স্বৈরশাসন ছিল বাংলাদেশে ভারতের আধিপত্য বিস্তারের প্রধান অবলম্বন। এ দেশে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে প্রতিবেশী দেশটি নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে। ট্রানজিট, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসম চুক্তির মাধ্যমে তারা এই আধিপত্য সৃষ্টি করেছে। তাদের সেই আধিপত্য রুখতে সব কটি চুক্তি সরকারকে প্রকাশ করতে হবে ও দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলো বাতিল করতে হবে।
আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশে ভারত রাষ্ট্রের আধিপত্য: স্বরূপ ও করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। আনু মুহাম্মদ সম্পাদিত ত্রৈমাসিক প্রকাশনা সর্বজনকথা ওই সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ভারত প্রসঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের সুনির্দিষ্ট কিছু বক্তব্য, অভিযোগ ও সমস্যা আছে। এটা সাম্প্রদায়িক কোনো বিষয় নয়। এটি আধিপত্যের সমস্যা।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে আনু মুহাম্মদ বলেন, সমস্যাগুলো শুধু শেখ হাসিনার আমলে হয়েছে, তা নয়। তার আগেও হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার শর্তহীনভাবে আত্মসমর্পণ করেছে। একের পর এক চুক্তি করেছে। এর প্রধান কারণ ছিল নির্বাচন ছাড়া চিরস্থায়ী ক্ষমতা তৈরি করা। সে কারণে তাঁর পুরো নির্ভরশীলতা তৈরি হয় ভারত রাষ্ট্রের ওপরে। এক দশকের যে অনির্বাচিত সরকার ও স্বৈরশাসন এটা ছিল ভারতের আধিপত্য বিস্তারের প্রধান অবলম্বন।
আনু মুহাম্মদ মনে করেন, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সরকার এসেছে, তাদের যে প্রতিশ্রুতি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, সে অনুযায়ী অগ্রসর হতে হলে প্রথম কাজ হচ্ছে, সামরিক-বেসামরিক সব চুক্তি জনগণের সামনে প্রকাশ করা। যেসব চুক্তি জনস্বার্থবিরোধী, দেশের জন্য ক্ষতিকর সেগুলো বাতিল করা। চুক্তি বাতিলের পথ অনুসন্ধান করা সরকারের প্রথম দায়িত্ব। তিনি ভারতের সঙ্গে করা সব চুক্তির পাশাপাশি অন্যান্য দেশের সঙ্গে সই করা চুক্তিগুলোও প্রকাশ করার দাবি জানান।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পসহ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্রকল্প, নদীর পানি বণ্টন ও সীমান্ত হত্যার কথা তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ন্যূনতম গণতান্ত্রিক নির্বাচন যখন ছিল, তখন ভারতের সঙ্গে দর–কষাকষির একধরনের জায়গা ছিল। ২০০৮ সালের পর যখন ন্যূনতম নির্বাচনী গণতন্ত্রও আর থাকল না, তখন বাংলাদেশ ভারতের অনাচারের একটি ছিটমহলে পরিণত হয়। এই ছিটমহলের দায়িত্বে যিনি ছিলেন তাঁকে এখন তাঁকে সুরক্ষা দিচ্ছে ভারত। বাংলাদেশে পরিবর্তনের পর ভারতের যে প্রতিক্রিয়া, তাতে স্পষ্ট হয়ে গেছে বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনায় নিতেও তাদের কষ্ট হচ্ছে। কারণ, ছিটমহলের দায়িত্বে যিনি ছিলেন, তিনি এখন নেই।
উত্তেজিত হয়ে কথাবার্তা বলে মূল সংকটের জায়গায় নজর দেওয়া হচ্ছে না—এমন মন্তব্য করে তানজীমউদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে সেগুলো প্রকাশ করে বুঝিয়ে দেওয়া জরুরি, কীভাবে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করা হয়েছে বা অন্য কেউ কুক্ষিগত করেছে। চুক্তিগুলো প্রকাশ করা না হলে বোঝা যাবে না বাংলাদেশ এখনো কীভাবে ভারতের কাছে ছিটমহল হয়ে আছে। চুক্তিগুলো এখনো বহাল আছে। এগুলো শুধু আধিপত্যের নয়, চুক্তিগুলো নিপীড়নের।
সেমিনার সঞ্চালনা করেন গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহা মির্জা। তিনি বলেন, অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারত সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। সীমান্তে নিয়মিত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। এসব কারণে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমের একটি অংশ ধারাবাহিকভাবে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। এর ফলে সামাজিক মাধ্যমে দুই দেশের মানুষের মধ্যে একধরনের বৈরিতা দেখা যাচ্ছে। ভারতবিরোধী রাজনৈতিক পাটাতন ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে। এর কারণে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিকাশ হচ্ছে, এটা খুব ভীতিকর।
‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ স্লোগান জনপ্রিয় হচ্ছে উল্লেখ করে মাহা মির্জা বলেন, একধরনের রাজনৈতিক ‘রেটরিক’ ব্যবহার করা হচ্ছে; কিন্তু আধিপত্যবাদের স্বরূপ কী, কীভাবে আধিপত্য হচ্ছে এসব বিশ্লেষণে ঘাটতি আছে। পরিবেশবিধ্বংসী প্রকল্প, জনস্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলোর ব্যাপারে পদক্ষেপ কী হবে, বাতিল করার প্রক্রিয়া কী হবে—এসব ভাবতে হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত কৌশলগতভাবে বাংলাদেশে ভারতের আধিপত্য বিস্তারের একটি মাধ্যম বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল। ভবিষ্যতে এই নির্ভরতা আরও বাড়তে পারে। একবার নির্ভরতার জালে আটকে গেলে সেখান থেকে বের হয়ে আসা কঠিন হয়ে যায়।
লেখক-গবেষক কল্লোল মোস্তফা বলেন, ভারত বাংলাদেশে তার আধিপত্য বজায় রাখতে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে। এমনকি নির্বাচনব্যবস্থার ওপরও প্রভাব বিস্তার করে। শেখ হাসিনার সময়ে ভারতের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। এখন কি আধিপত্য নেই? এখন যে অনেকে স্লোগান দিচ্ছে, এই স্লোগান দিলেই কি আধিপত্য থেকে মুক্ত হয়ে যাব?’
সীমান্তে হত্যা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসম চুক্তি, যৌথ নদীর পানি বণ্টনসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে কল্লোল মোস্তফা বলেন, সমুদ্রের গভীর থেকে শুরু করে মহাকাশ পর্যন্ত যত বিষয় আছে, সব বিষয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি আছে। এসব চুক্তি নিয়ে কখনো আলোচনা হয়নি। জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলো বাতিল না হলে ভারতীয় আধিপত্য থেকে যাবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সৌন্দর্য বাড়াতে বোটক্স করা কতটা ভালো
সৌন্দর্য ও তারুণ্য ধরে রাখতে এ দেশেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বোটক্স। মুখে বয়সের ছাপ কমিয়ে, মসৃণ ও প্রাণবন্ত চেহারা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই চিকিত্সাপদ্ধতি। বোটক্স শব্দটি এসেছে বটুলিনাম টক্সিন থেকে। এটি একধরনের প্রোটিন, যা ক্লস্ট্রিডিয়াম বটুলিনাম নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি হয়।
বোটক্স প্রয়োগ করা হয় ইনজেকশনের মাধ্যমে। এটি বলিরেখা ছাড়াও অন্যান্য সূক্ষ্ম রেখা কমাতে সাহায্য করে। যে কারণে ত্বক দেখায় আরও তরুণ। এটি একটি নন-সার্জিক্যাল কসমেটিক পদ্ধতি, যা মুখের বিভিন্ন অংশে প্রয়োগ করা হয়। এর মধ্যে আছে কপাল, চোখের চারপাশ ও ঠোঁটের আশপাশ। যদিও এটি একটি বিষাক্ত পদার্থ, কিন্তু নিয়ন্ত্রিত ও সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করা হলে এটি নিরাপদ ও উপকারী।
বোটক্স যেভাবে কাজ করেআমাদের মুখের বিভিন্ন অভিব্যক্তি, যেমন হাসি, রাগ বা চিন্তার ফলে মাসল সংকোচন হয়। বারবার এ সংকোচনের ফলে ত্বকে ভাঁজ বা বলিরেখা পড়ে। বোটক্স ইনজেকশন মাংসপেশির ওই সংকোচনপ্রক্রিয়াকে সাময়িকভাবে শিথিল করে দেয়। এটি স্নায়ু ও মাসলের সংযোগস্থলে অ্যাসিটাইলকোলিন নামে একধরনের রিসিপ্টরকে ব্লক করে, ফলে স্নায়ু থেকে মাসলে সংকোচনের সংকেত পৌঁছায় না। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মাসল শিথিল থাকে আর ওই জায়গার বলিরেখা কমে যায় বা সম্পূর্ণ মিলিয়ে যায়। ত্বক দেখায় মসৃণ।
সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বোটক্সকপালে বলিরেখা দূর করে।
চোখের পাশের কুঁচকে যাওয়া বা ক্রস ফিট কমায়।
ভ্রুর মাঝের ভাঁজ কমায়।
ঠোঁটের পাশের রেখা ও চোয়ালের অংশকে সুগঠিত করে।
কিছু ক্ষেত্রে ঘাম কমাতেও সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঅ্যাস্থেটিক ডার্মাটোলজি কি খুব ব্যয়বহুল?২১ আগস্ট ২০২৪চিকিত্সায় ব্যবহারবোটক্স দীর্ঘস্থায়ী মাইগ্রেন কমাতে সাহায্য করে।
চোখের পাতা ঝুলে যাওয়া বা চোখের পাতার খিঁচুনি কমাতে বোটক্স ব্যবহার করা হয়।
এ ছাড়া প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা, অতিরিক্ত লালা ঝরার মতো অসুখেও বোটক্স ব্যবহার করা হয়।
প্রভাব ও স্থায়িত্ববোটক্স প্রয়োগের প্রভাব সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে দেখা যায়। এটি তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এরপর আবার প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে।
সতর্কতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বোটক্স নিরাপদ, তবু এটি প্রয়োগের পর কিছু সাময়িক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন হালকা ব্যথা, ফোলা ভাব, মাথাব্যথা বা ইনজেকশনের স্থানে অস্বস্তি। তাই অবশ্যই এটি প্রশিক্ষিত চিকিত্সকের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে করা উচিত।
বয়সের ছাপ লুকিয়ে তারুণ্য ধরে রাখতে বা সৌন্দর্য বাড়াতে বিশ্বজুড়ে বোটক্স এখন একটি জনপ্রিয় ও কার্যকর উপায়। তবে মনে রাখা উচিত, সৌন্দর্য শুধু বাহ্যিক নয়, আত্মবিশ্বাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা সৌন্দর্যের অন্যতম উপাদান।
আরও পড়ুনডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, ওজন ও ইউরিক অ্যাসিড কমানোসহ কত গুণ চিচিঙ্গার ২২ ঘণ্টা আগে