বরিশালে কৃষকদের সমাবেশ: ধানের দাম মণপ্রতি দেড় হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি
Published: 13th, January 2025 GMT
বরিশালে কৃষকদের সমাবেশে চলতি মৌসুমে ধানের দাম মণপ্রতি দেড় হাজার টাকা নির্ধারণ করে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার দাবি জানানো হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে বরিশাল নগরের বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনে এই সমাবেশের আয়োজন করে সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট।
সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের বাকেরগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি রণজিৎ মালির সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাসদের বরিশাল জেলা সমন্বয়ক মনীষা চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য শহিদুল শেখ, বেল্লাল গাজী, কৃষক ফ্রন্ট সংগঠক ও সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের বাকেরগঞ্জ উপজেলা শাখার সহসভাপতি সূর্যভান বেগম প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে ক্রয়কেন্দ্র খুলে ধানের দাম মণপ্রতি দেড় হাজার টাকা নির্ধারণ করে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি শস্য কিনতে হবে। সার, বীজ, কীটনাশকসহ সব কৃষি উপকরণের দাম কমাতে হবে। কৃষকদের কৃষিপণ্য স্বল্প মূল্যে পরিবহন করার জন্য সরকারি পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের রক্তস্নাত বাংলায় যদি কৃষকেরা আবারও সিন্ডিকেট আর মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে জিম্মি হয়ে যান, তাহলে শহীদের আত্মত্যাগ বৃথা হয়ে যাবে।
মনীষা চক্রবর্তী বলেন, কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শস্য উৎপাদন করেন, কিন্তু দেশে সবকিছুর দাম বাড়ে, কৃষকদের ধানের দাম বাড়ে না। জমি চাষ, সার, কীটনাশক, বীজ, সেচ—সবকিছুতে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এক মণ ধান উৎপাদন করতে কৃষক যে অর্থ ব্যয় করেন, ধান বিক্রি করে তাতে লাভ তো দূরে থাক, উৎপাদন ব্যয় ওঠে না। তবু কৃষকেরা পূর্বপুরুষের পেশাকে ধরে রেখেছেন। কিন্তু যুগ যুগ ধরে এই বঞ্চনার কারণে কৃষকের কোমর ভেঙে গেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে কৃষি পেশা থেকে মুখ থুবড়ে পড়বেন তাঁরা। এ জন্য কৃষকদের দিকে নজর দিতে হবে।
মনীষা বলেন, ‘আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরশাসনের পতন করেছি। এখন কৃষিক্ষেত্রে সংস্কার দরকার। কৃষকদের বৈষম্য বিলোপ করা দরকার। প্রয়োজনে দাবি আদায়ে কৃষকদের নিয়ে আমরা রাজপথে নামব, কিন্তু এই বঞ্চনা থেকে তাঁদের মুক্তি দিতে হবে।’ এ সময় কৃষি বিষয়ে কৃষকসহ সব অংশীজনের মতামত নিয়ে কৃষিব্যবস্থা সংস্কার করার জন্য ‘কৃষি কমিশন’ গঠনের দাবি জানান মনীষা।
সমাবেশ শেষে উপজেলা চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিল শেষে একটি প্রতিনিধিদল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর ১০ দফা দাবিতে একটি স্মারকলিপি পেশ করে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইসলাম অনুসারে সন্তানের আধুনিক নাম
সন্তানের নাম দেওয়া একটি পবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ দায়িত্ব। ইসলামে নামকরণ শুধু একটি সামাজিক রীতি নয়, বরং এটি সন্তানের পরিচয়, যা চরিত্র ও ভবিষ্যৎ জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
আধুনিক যুগে মুসলিম পরিবারগুলো সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে এমন নাম খুঁজছে, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, অথচ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক, সংক্ষিপ্ত ও শ্রুতিমধুর।
ফলে ইসলামের আলোকে মুসলিম সন্তানের নামকরণের গুরুত্ব, আধুনিক নামের প্রবণতা এবং কীভাবে ইসলামি ও আধুনিকতার সমন্বয় ঘটানো যায়, তা নিয়ে আলোচনার দাবি রাখে।
ইসলামে নামকরণের গুরুত্বইসলামে সন্তানের নামকরণ একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দায়িত্ব। রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক সন্তানের বেলায় পিতার দায়িত্ব হলো তাকে একটি সুন্দর নাম দেওয়া এবং তাকে ভালো শিক্ষা দেওয়া।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,৯৪৯)
নাম শুধু একটি পরিচয় নয়, বরং এটি সন্তানের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ইসলামে নামের অর্থের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। রাসুল (সা.) নিজে কিছু নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন, যদি সেগুলোর অর্থ ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বা অশোভন হতো। তিনি ‘হারব’ (যুদ্ধ) নামটি পরিবর্তন করে ‘হাসান’ (সুন্দর) রেখেছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,১৯০)
এটি প্রমাণ করে যে নামের অর্থ সুন্দর, ইতিবাচক ও ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।
আরও পড়ুনদস্তরখানের নামে সুরার নাম০৪ মার্চ ২০২৫রাসুল (সা.) নিজে কিছু নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন, যদি সেগুলোর অর্থ ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বা অশোভন হতো। তিনি ‘হারব’ (যুদ্ধ) নামটি পরিবর্তন করে ‘হাসান’ (সুন্দর) রেখেছিলেন।আধুনিক নামকরণের প্রবণতাআধুনিক যুগে মুসলিম সমাজে নামকরণের ক্ষেত্রে কিছু নতুন প্রবণতা লক্ষ করা যায়। মা–বাবা এখন এমন নাম পছন্দ করেন, যা সংক্ষিপ্ত, উচ্চারণে সহজ এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্য। যেমন ‘আয়ান’, ‘ইয়াসির’, ‘জায়ান’, ‘নুয়াইরা’, ‘আদিয়া’ ইত্যাদি নাম বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই নামগুলোর অর্থও ভালো, যেমন ‘আয়ান’ অর্থ ‘ঐশী উপহার’ এবং ‘নুয়াইরা’ অর্থ ‘আলো’ বা ‘দীপ্তি’।
আধুনিক নামের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো প্রায়ই লিঙ্গ-নিরপেক্ষ। ‘রায়ান’, ‘ইমান’ বা ‘নূর’–এর মতো নাম ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্যই ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলা, আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষার শব্দের পাশাপাশি কিছু নাম স্থানীয় সংস্কৃতি থেকেও গৃহীত হচ্ছে, যা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।
ইসলামি ও আধুনিক নামের সমন্বয়ইসলামি নাম বলতে শুধু আরবি নাম বোঝায় না। ইসলাম যেকোনো ভাষার নাম গ্রহণ করতে উৎসাহিত করে, যতক্ষণ তা অর্থপূর্ণ ও ইতিবাচক। শায়েখ উসাইমিন (রহ.) বলেন, ‘নাম যেকোনো ভাষার হতে পারে, যদি তা শরিয়াহের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয় এবং অর্থে কোনো নেতিবাচকতা না থাকে।’ (ফাতাওয়া নূর আলা আদ-দারব, পৃষ্ঠা: ১২৫, দারুল ইফতা প্রকাশনী: ১৯৯৮)
আধুনিক নামকরণে এই নীতি মেনে চলা যায়। যেমন ‘তাহা’ (কোরআনের সুরার নাম), ‘ইলিয়াস’ (একজন নবীর নাম), ‘আমিনা’ (রাসুলের মায়ের নাম) ইত্যাদি নাম ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং আধুনিক পরিবেশেও গ্রহণযোগ্য।
নাম যেকোনো ভাষার হতে পারে, যদি তা শরিয়াহের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয় এবং অর্থে কোনো নেতিবাচকতা না থাকে।শায়েখ সালেহ উসাইমিন (রহ.), ফাতাওয়া নূর আলা আদ-দারবএ ছাড়া ‘জায়নাব’, ‘ফাতিমা’, ‘আলি’, ‘ওমর’ ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী নাম আজও জনপ্রিয় এবং সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে।
আরও পড়ুনপাপ থেকে প্রত্যাবর্তন করার নাম তওবা২৮ জানুয়ারি ২০২৫নামকরণে সতর্কতানামকরণের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।
প্রথমত, নামের অর্থ যেন ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়। কোনো দেব-দেবীর নাম বা শিরকের সঙ্গে সম্পৃক্ত নাম ব্যবহার করা উচিত নয়।
দ্বিতীয়ত, জটিল বা উচ্চারণে কঠিন নাম এড়িয়ে চলা ভালো।
তৃতীয়ত, নামটি এমন হওয়া উচিত, যা সন্তানের জন্য গর্বের এবং সমাজে তার পরিচয়কে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে।
অনেক মা–বাবা পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে এমন নাম রাখেন, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ‘ডায়ানা’র মতো নাম অর্থের দিক থেকে সুন্দর হলেও ইসলামি পরিচয়ের সঙ্গে সব সময় মানানসই না–ও হতে পারে। এই ক্ষেত্রে মা–বাবাকে নামের অর্থ ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
মা–বাবার করণীয় অনেক মা–বাবা পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে এমন নাম রাখেন, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।ইসলামে নামকরণের জন্য কিছু নির্দেশনা রয়েছে।
প্রথমত, সন্তান জন্মের পর সপ্তম দিনে নামকরণ করা সুন্নাহ। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৮৩২)
এই সময়ে আকিকা দেওয়ার রীতিও রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, নাম রাখার আগে পরিবারের সদস্য, আলেম বা বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
তৃতীয়ত, নামটি এমন হওয়া উচিত, যা সন্তানের জন্য আত্মবিশ্বাসের উৎস হয়।
আধুনিক যুগে নামকরণের ক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, বই ও অ্যাপের সাহায্য নেওয়া যায়। তবে এসব ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, কারণ, অনেক সময় ভুল অর্থ বা অপ্রমাণিত তথ্য দেওয়া হতে পারে।
নাম শুধু একটি শব্দ নয়, এটি সন্তানের পরিচয়, চরিত্র ও সমাজে তার অবস্থানের প্রতিফলন। তাই মা–বাবার উচিত এমন নাম নির্বাচন করা, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও শ্রুতিমধুর।
আরও পড়ুন‘আল-ওয়াহিদ’ আল্লাহর অনন্য নাম২৩ জুন ২০২৫