বিএমডিএ’র ২ দপ্তরে দুদকের অভিযান, নথিপত্র তলব
Published: 14th, January 2025 GMT
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) দুই দপ্তরে এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে বিএমডিএর সেচ শাখার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান ও ‘ভূগর্ভস্থ সেচ নালা বর্ধিতকরণের মাধ্যমে সেচ এলাকার সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) শহীদুর রহমানের দপ্তরে অভিযান চালান দুদক কর্মকর্তারা।
দুদকের দলটির নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন। অভিযানে ছিলেন উপ-সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন এবং উপ-সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান। তারা জাহাঙ্গীর আলম খানের দপ্তরে বিএমডিএর গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগ সংক্রান্ত নথিপত্র দেখেন।
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় বিএমডিএর ১৬ হাজারের বেশি গভীর নলকূপ রয়েছে। আওয়ামী সরকারের পতনের পর সব অপারেটরের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এরপর নতুন অপারেটর নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এসব নলকূপের অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পেতে ২৩ হাজার ৭৫২ জন আবেদন করেন। মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের পর প্রায় ৮ হাজার জনকে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছিল। এই তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোরে বিএমডিএর জোন কার্যালয় ঘেরাও, এমনকি কার্যালয়ে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
আরো পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় বিএডিসি কার্যালয়ে দুদকের অভিযান
মোরেলগঞ্জে কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে দুদকের অভিযান
এর ফলে মনোনীত হওয়া প্রায় সাড়ে ৪ হাজার অপারেটরের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। এখন আবারো পুরনো আবেদন থেকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর দুদক এই এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে।
জানতে চাইলে বিএমডিএর সেচ শাখার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে থাকার সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার হবে না। বড়জোর ৫ থেকে ৬ শতাংশ হতে পারে। যাদের ব্যাপারে অভিযোগ এসেছে, সেগুলো আটকে আছে। দুদক এসে নথিপত্র দেখেছে। কিছু নথিপত্র চেয়েছেও। নথিপত্র সরবরাহের জন্য একটু সময় নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সেচ শাখার অভিযানের পর দুদক দল বিএমডিএর ‘ভূগর্ভস্থ সেচ নালা বর্ধিতকরণের মাধ্যমে সেচ এলাকার সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) শহীদুর রহমানের দপ্তরে যান। এই কর্মকর্তা ১৯ কোটি টাকার পাইপলাইন স্থাপনের কাজ ঠিকাদারদের কাছে ‘বিক্রি’ করেছেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এর ভিত্তিতেই দুদক দল সেখানেও অভিযান পরিচালনা করে। তবে এ অভিযোগের সত্যতা মেলেনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানতে চাইলে পিডি শহীদুর রহমান জানান, যে ১৯ কোটি টাকার কাজ টাকার বিনিময়ে দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সঠিক নয়। কারণ, ওই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় শেষই হয়নি। কোনো ঠিকাদারকে কার্যাদেশও দেওয়া হয়নি। দুদক দলকে তিনি এ সংক্রান্ত নথিপত্র দেখিয়েছেন।
অভিযান শেষে সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন জানান, কর্মকর্তারা তাদের স্বপক্ষে কাগজপত্র দেখিয়েছেন। অপারেটর নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু নথিপত্র চাওয়া হয়েছে। এগুলো হাতে পাওয়ার পর বিশ্লেষণ করা হবে। এরপর প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ঢাকা/কেয়া/বকুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সিআইডিতে বিচারবহির্ভূত হত্যার তদন্ত বিষয়ে আন্তর্জাতিক কর্মশালা
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে ‘সম্ভাব্য অবৈধ মৃত্যুর তদন্তসংক্রান্ত মিনেসোটা নীতিমালা’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর (ইউএনআরসি) কার্যালয় এবং বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) যৌথ আয়োজনে ৩০ ও ৩১ জুলাই ঢাকার সিআইডি সদর দপ্তরে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় সিআইডি।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন সিআইডির প্রধান ও বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. ছিবগাত উল্লাহ। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সিআইডি এখন একটি আধুনিক, তথ্যভিত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর তদন্ত সংস্থা হিসেবে গড়ে উঠছে। মানবাধিকার রক্ষা ও বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে প্রমাণনির্ভর নিরপেক্ষ তদন্ত অপরিহার্য এবং এ ধরনের আন্তর্জাতিক কর্মশালা আমাদের সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করে।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের বিচারবহির্ভূত, সংক্ষিপ্ত বা ইচ্ছামতো মৃত্যুবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক মরিস টিডবল-বিন্জ। তিনি বলেন, মিনেসোটা নীতিমালা একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদণ্ড, যা সন্দেহজনক মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা সৃষ্টি করে। উপস্থাপনায় তিনি লিবিয়া ও ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জে আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্তের উদাহরণ তুলে ধরেন।
কর্মশালার শুরুতে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার শম্পা ইয়াসমীন দেশের ডিএনএ ও ফরেনসিক সক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করেন। দুই দিনব্যাপী এই কর্মশালায় অংশ নেন দেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিচারক, চিকিৎসক ও ফরেনসিক সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধি এবং প্রযুক্তি ও অনুসন্ধান-সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা।
আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল, আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী মৃতদেহ শনাক্তকরণ (দুর্যোগে নিহত ব্যক্তি শনাক্তকরণ), নিরপেক্ষ ফরেনসিক প্রতিবেদন তৈরির কৌশল, মানবাধিকার সংরক্ষণে তদন্তকারীদের নৈতিক ও পেশাগত দিকনির্দেশনা এবং বাস্তব ক্ষেত্রভিত্তিক কেস স্টাডি উপস্থাপন।
বিশেষ অধিবেশন পরিচালনা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ আরা, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক জান্নাতুল হাসান এবং সিআইডির ডিএনএ বিশ্লেষক আহমেদ ফেরদৌস। তাঁদের আলোচনায় জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত অপরাধের তদন্তের অগ্রগতি, সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জও উঠে আসে।
সমাপনী দিনে বক্তারা বলেন, প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশের তদন্তপ্রক্রিয়াকে আরও মানবিক, কার্যকর ও স্বচ্ছ করা সম্ভব। সিআইডির প্রধান ভবিষ্যতে ফরেনসিক সক্ষমতা সম্প্রসারণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সমাপনী বক্তব্যে মরিস টিডবল-বিন্জ বলেন, আইনবহির্ভূত মৃত্যুর তদন্তে প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভ্রাম্যমাণ ডিএনএ পরীক্ষাগার, ঘটনাস্থলে মরদেহ শনাক্তকরণ পদ্ধতি ও অন্যান্য প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগে জাতিসংঘ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত।