সাইফের হামলাকারী শাহরুখের বাড়িতেও নজর রেখেছিল?
Published: 17th, January 2025 GMT
মুম্বাই পুলিশ সন্দেহ করছে যে, সাইফ আলী খানের হামলাকারী কয়েক দিন আগে শাহরুখ খানের বাড়ির উপরে নজর রেখেছিল। সাইফের ওপর হামলার পর, বিষয়টি তদন্তের জন্য পুলিশের একটি দল শাহরুখ খানের বাসভবন ‘মান্নাত’ পরিদর্শন করেছে। খবর ইন্ডিয়া টুডের।
পুলিশের একটি সূত্র বলেন, “গত ১৪ জানুয়ারি শাহরুখ খানের আবাসিক ভবন মান্নাতের আশেপাশে সন্দেজনকভাবে ঘুরাফেরা করতে দেখা গেছে এক ব্যক্তিকে। মান্নাত সংলগ্ন রিট্রিট হাউজের পেছনের দিকে ৬-৮ ফুট দীর্ঘ লোহার সিঁড়ি ফেলে একজন ব্যক্তি নজরদারির চেষ্টা করেছিল। পুলিশ সন্দেহ করছে, শাহরুখের বাড়ির উপরে নজরদারি করেছে সেই ব্যক্তি সাইফ আলী খানের হামলাকারী।”
শাহরুখের বাসভবন মান্নাতের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। তাতে যে ব্যক্তিকে দেখা যায় তার উচ্চতা, গড়নের সঙ্গে মিল রয়েছে সাইফ আলী খানের বাড়ি থেকে পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজের ওই ব্যক্তির সঙ্গে।
আরো পড়ুন:
রক্তে যখন শরীর ভেসে যাচ্ছিল, তখন সিংহের মতো হাঁটছিলেন সাইফ: চিকিৎসক
সাইফের ওপরে হামলা, মুখ খুললেন কারিনা
পুলিশের সূত্রটি দাবি করেছে— একজন ব্যক্তি এসব কাজ করতে পারে না। লোহার যে সিঁড়ি মান্নাতের পাশে ব্যবহার করা হয়েছে সেটার ওজন অনেক। সুতরাং একজন মানুষের পক্ষে সেটা ওঠানামা করানো সম্ভব নয়। এ ঘটনার সঙ্গে অন্তত দুই-তিনজন জড়িত।
মান্নাতের উপরে নজরদারির ব্যাপারে কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি শাহরুখ। তবে পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। মান্নাতের পাশে ব্যবহৃত সিঁড়িটি চুরির কিনা তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
সাইফ আলী খানের হামলাকারীকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে সন্দেহজনক একজনকে আটক করেছে। হামলাকারীকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের ৩৫টি টিম কাজ করছে।
গত ১৫ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাতে সাইফ আলী খানের মুম্বাইয়ের বান্দ্রার বাড়িতে এক দুর্বৃত্ত ঢুকে পড়ে। সে সময় বাড়ির সবাই ঘুমাচ্ছিলেন। স্টাফ নার্স লিমার চিৎকারে ঘুম ভাঙে সাইফের। এরপর ওই দুর্বৃত্তের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় তার।
একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে একাধিকবার সাইফকে আঘাত করে পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় অভিনেতাকে মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল সকালে অস্ত্রোপচার শেষে আইসিইউতে রাখা হয়। আজ সাধারণ বেডে স্থানান্তর করা হয়েছে। খুব শিগগির হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন চিকিৎসকরা।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
‘“এ সকল নষ্ট মাইয়াদের জন্য বাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। যা যা বাস থেকে নেমে যা নষ্ট মাইয়াছেলে”—বাস কন্ডাক্টরের এই মন্তব্য শোনার পর নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি।’ কথাগুলো বলছিলেন বাসে হেনস্তার শিকার ওই তরুণী। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে দীর্ঘ আলাপে তিনি সেদিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানান। বললেন, ঘটনার সময় বাসে একজন মানুষও প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছেন। যিনি এ ঘটনার ভিডিও করেছিলেন, তাঁর কাছ থেকেও কটু কথা শুনতে হয়েছিল। এমনকি তিনি বাস থেকে নামতে গিয়েও পারছিলেন না। যতবার নামার চেষ্টা করেন, চালক বাস টান দিচ্ছিলেন।
তবে দৃঢ়তার সঙ্গে এই তরুণী জানিয়েছেন, এই হেনস্তার ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন।
জুতা হাতে বাস কন্ডাক্টরের আচরণের প্রতিবাদ জানানোর ওই ঘটনা ঘটে গত ২৭ অক্টোবর। বাসের এক ব্যক্তি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার রমজান পরিবহন নামের বাসের হেনস্তাকারী কন্ডাক্টর নিজাম উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তরুণীর এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় (যৌন নিপীড়নের অভিযোগ) মামলাটি করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বাসের সামনের আসনে বসা এক ব্যক্তির কোনো একটি মন্তব্য নিয়ে এক তরুণী তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তিনি তেড়ে যান লোকটির দিকে। ওই সময় লোকটি আসন ছেড়ে উঠে তরুণীকে চড় মারেন। একপর্যায়ে দুজন জুতা খুলে দুজনের দিকে তুলে ধরেন। সে সময় ওই ব্যক্তি তরুণীকে আঘাত করেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ওই ব্যক্তি এরপর বারবার তরুণীর গায়ে ধাক্কা মারেন ও আঘাত করার চেষ্টা করেন। তরুণী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তুই আমার পোশাক তুলে কেন কথা বলবি?’ এ সময় সামনের দিকে থাকা দুই নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী ছাড়া আর কেউ আঘাত করা ব্যক্তিটিকে থামানোর চেষ্টা করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মা–বাবা ও ভাই–বোনরা চাঁদপুরে থাকেন। বাবার দোকান রয়েছে। ভাই–বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। চাঁদপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর এখন ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবাকে সহায়তা করতে নিজেও টুকটাক কাজ করেন। হাতের কাজ, ছবি আঁকার কাজ করেন, টেলিভিশন চ্যানেলে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। রাজধানীর বছিলা এলাকায় কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন।
‘শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি’
সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তরুণী বলেন, তিনি মুঠোফোন ঠিক করতে হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজায় গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার জন্য সেখান থেকে ধানমন্ডি–১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসেন এবং রমজান পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন। তখন বেলা দুইটা কি আড়াইটা। তিনি বাসে উঠে মাঝামাঝি জায়গায় একটি আসনে বসেন। বাস কন্ডাক্টর তাঁর কাছে এসে ভাড়া চাইলে ‘স্টুডেন্ট’ (শিক্ষার্থী) জানিয়ে তিনি অর্ধেক ভাড়া দেন। তরুণী দাবি করেন, বাস কন্ডাক্টর তখন বলে ওঠেন, ‘চেহারা আর পোশাক দেখলে তো মনে হয় না স্টুডেন্ট!’ তখন তিনি রাগ হলেও কন্ডাক্টরকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘স্টুডেন্টের সঙ্গে পোশাকের কী সম্পর্ক? আপনি এসব কী ধরনের কথা বলছেন? ওই সময় কিছুটা কথা-কাটাকাটি হয়। শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি।’
রাজধানীর বছিলায় বাসের মধ্যে পোশাক নিয়ে কটূক্তির সাহসী প্রতিবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর প্রশংসা করে এমন চিত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে