দুনিয়াজুড়ে আজ ট্রানজিশন বা জাস্ট ট্রানজিশন কথাটি বহুল আলোচিত। কথাটি এনার্জি বা জ্বালানি স্থানান্তরের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। বস্তুত জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়াকেই ট্রানজিশন বা জাস্ট ট্রানজিশন বলা হচ্ছে। কার্বন নির্গমন/নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনতেই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে স্থানান্তরিত হওয়া। অবশ্য জাস্ট ট্রানজিশন একেকটি দেশের জন্য একেক রকম। আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ জ্বালানি স্থানান্তর বা ট্রানজিশনের যে অঙ্গীকার করেছে, তা পূরণের একটি পরিকল্পনাও করেছে। অঙ্গীকারটি হচ্ছে: চলতি ২০২৫ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ সক্ষমতা অর্জন করা; যা ২০৩০ সালে ৩০ শতাংশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগে উন্নীত করার কথা। অর্থাৎ ২০৫০ সালের পরে আমরা আর জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করব না।
প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের দিকে এগোচ্ছি? এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের কথা। এই বিনিয়োগ স্বাভাবিকভাবে আসে আর্থিক প্রতিষ্ঠান (ব্যাংক ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান) থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৯-১০ সালে গ্রিন ফিন্যান্স বা সবুজ অর্থায়নসংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে; এর অধীনে তপশিলি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে অর্থায়ন করে।

সিইপিআর (সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ) এবং ক্লিন (কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক)-এর সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা যায়, দেশের ৬২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ৪৩টি ব্যাংক সবুজ অর্থায়নে (গ্রিন ফিন্যান্স) বিনিয়োগ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রিন ফিন্যান্সের আওতায় ২০১৮-১৯ সাল থেকে গত ছয় বছরে দেশীয় ব্যাংকগুলো ৭৩ হাজার ১৭২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। ২০১৮-১৯ সালে এই পরিমাণ ছিল মাত্র ৯ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ সালে ২২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। অর্থাৎ গ্রিন ফিন্যান্স প্রতিবছর গড়ে ২৭.

৮ শতাংশ বেড়েছে। অবশ্য ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই হার ৮.৫ শতাংশ কমে যায়। ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিনিয়োগের হার ৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
এখানে বলা দরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালায় পরিবেশগত বিবেচনার কথা বলা আছে। তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানি (আরই) ছাড়াও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সার্কুলার ইকোনমি, ইকো-প্রকল্প, পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদন, সবুজ/পরিবেশবান্ধব উৎপাদন, সবুজ কৃষি, নীল অর্থনীতি প্রভৃতি খাতেও ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করে। অর্থাৎ গ্রিন ফিন্যান্স মানেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিযোগ নয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন বলে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো শুধু নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে গত ছয় বছরে ২ হাজার ১১১ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে, যা মোট গ্রিন ফিন্যান্সিংয়ের মাত্র ২.৯ শতাংশ। আবার ২০২০ সালে গ্রিন ফিন্যান্স ছিল মোট বিতরিত ঋণের ৩.৯৬ শতাংশ। ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তা ছিল ১৬.৮৩ শতাংশ। এই তথ্যে পরিষ্কার, মোট বিনিয়োগের তুলনায় গ্রিন ফিন্যান্সের পরিমাণ এখনও খুবই কম। তার মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ নামমাত্র বলা চলে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ ও ২০৫০-এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না। উল্লিখিত গবেষণা বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা ১০% (৩,২৪৩ মেগাওয়াট) অর্জন করতে হলে আমাদের অবিলম্বে ২৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০% (১১,৬০০ মেগাওয়াট) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ৬ বছরে ৮৭ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। উপরন্তু, ভর্তুকি, কর অব্যাহতি, আমদানি নীতি যৌক্তিকীকরণ এবং সরকারি-বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে দীর্ঘমেয়াদি স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণের এক বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। 

প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আমরা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩ শতাংশের কাছাকাছি অর্জন করতে পেরেছি। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে একদিকে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে এবং অন্যদিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এর জন্য চাই প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক নীতিমালা ও বিনিয়োগ।
বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন– নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক আইপিপির জন্য ১৫ বছরের কর অব্যাহতি প্রদান; যার মধ্যে ১০ বছরের জন্য ১০০ শতাংশ কর ছাড়, তিন বছরের জন্য ৫০ শতাংশ এবং দুই বছরের জন্য ২৫ শতাংশ কর ছাড়। প্রধান উপদেষ্টা চীন সরকারকে বাংলাদেশে সোলার প্যানেল উৎপাদন কারখানা স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। নতুন করে প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। উপরন্তু, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের জন্য বহুপক্ষীয় এবং দ্বিপক্ষীয় অংশীদারদের আহ্বান করা হয়েছে।

মনে রাখা প্রয়োজন, অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন– বেশির ভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংকেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞান বিশ্লেষণ করার জন্য দক্ষ জনবল নেই। বেশির ভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তার রাজস্ব, নির্দিষ্ট খরচ এবং লাভ-ক্ষতি বিশ্লেষণ করে, অর্থায়ন উপযোগী করে একটি প্রকল্প প্রণয়নের দক্ষতার অভাব রয়েছে। গ্যারান্টিযুক্ত দীর্ঘমেয়াদি প্রাইভেট পাওয়ার সাপ্লাই এগ্রিমেন্টের (পিএসএ) অভাবে একটি বেসরকারি নবায়নযোগ্য প্রকল্পে অর্থায়নের ঝুঁকি ব্যাংক নিতে পারে না। 

গ্যারান্টি ছাড়া, বিশাল আস্থার ব্যবধানের কারণে ব্যাংকগুলো ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পেও অর্থায়নে উৎসাহী হতে পারছে না। এমন বাস্তবতায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কিছু বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে। এগুলো হচ্ছে: ১. বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নবায়নযোগ্য খাতে প্রযোজ্য একটি তহবিল তৈরি করা, যাতে তারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি নবায়নযোগ্য শক্তি উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দিতে পারে। ২. সবুজ অর্থায়ন নির্দেশিকা পর্যালোচনা করা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের জন্য কমপক্ষে ২৫ শতাংশ গ্রিন ফিন্যান্সিং নিশ্চিত করা। ৩. গ্রামীণ এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই অর্থায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা। ৪. স্বতন্ত্র এবং ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য একটি ফিড-ইন ট্যারিফ (এফআইটি) শুরু করা, যাতে তাদের বিনিয়োগের জন্য একটি নিশ্চিত লাভ থাকে। ৫. নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশের ওপর আরোপিত আমদানি কর, ভ্যাট এবং অন্যান্য কর সম্পূর্ণ অব্যাহতি দেওয়া। ৬. বাড়ির ছাদে সোলার সিস্টেম স্থাপনের জন্য মোট ব্যয়ের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ ভর্তুকি প্রদান করা। ৭. নবায়নযোগ্য জ্বালানি যন্ত্রাংশ উৎপাদনের জন্য জাতীয় শিল্প স্থাপনে বিনিয়োগ করা। ৮. টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (শ্রেডা) ক্ষমতা বৃদ্ধি অথবা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা। এবং ৯. বিদ্যুৎ প্রকল্পের সব তথ্যের বাধ্যতামূলক প্রকাশ নিশ্চিত করা।      

গৌরাঙ্গ নন্দী: পরিবেশ ও জ্বালানিবিষয়ক সাংবাদিক এবং চেয়ারপারসন, সেন্টার ফর এনভায়নমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ (সিইপিআর) 

nহাসান মেহেদী: জ্বালানি খাত বিষয়ে অভিজ্ঞ এবং প্রধান নির্বাহী, কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (ক্লিন)

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ন য় গ কর প রকল প র পর ব শ র জন য বছর র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ

আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।

নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।

আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরি

মিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।

এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩

বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।

বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?

মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবন

মহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।

এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।

দানের সংস্কৃতি

আজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫

কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।

ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।

যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪

বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।

আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।

ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।

আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।

আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ