ভিয়েতনাম থেকে কেনা হচ্ছে এক লাখ মেট্রিক টন চাল
Published: 27th, January 2025 GMT
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভিয়েতনাম থেকে সরকার-সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে এক লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানি করবে সরকার। প্রতি মেট্রিক টন চালের দাম ৪৭৪.২৫ মার্কিন ডলার। এতে মোট ব্যয় হবে ৫৭৮ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখতে খাদ্য মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উৎস থেকে চাল সংগ্রহ করে থাকে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি'র অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। দেশের সরকারি মজুত বৃদ্ধি করে সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য আমদানির ক্ষেত্রে বহুবিধ উৎস থাকলে দ্রুত খাদ্যশস্য আমদানি করা সহজ হয় এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ মূল্যে খাদ্যশস্য ক্রয় করা সম্ভব হয় বিধায় খাদ্য মন্ত্রণালয় প্রতি বছর জিটুজি ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চাল সংগ্রহ করছে।
চলতি অর্থবছরে ইতোমধ্যে ৫টি আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ভারত থেকে ২.
আরো পড়ুন:
টাঙ্গাইলে ওএমএসের চাল বাজারে বিক্রি
টিসিবির ১ কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
এছাড়া আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এবং জিটুজি পদ্ধতিতে আরো ৩ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
খাদ্যের নিরাপত্তা মজুত গড়ে তোলা ও কৃষকদের উৎসাহ মূল্য দিতে ২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় চলতি আমন ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে ৩.৫০ লাখ মেট্রিক টন ধান এবং ৬.৫০ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গত ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫,২০৪ মেট্রিক টন ধান এবং ৩,৬২,৪৯২ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। আমন সংগ্রহ কার্যক্রম আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত চলমান থাকবে। দেশের বিভিন্ন জেলায় বিগত সময়ের বন্যায় আমন ফসলের ক্ষতি হওয়ায় চলমান আমন সংগ্রহ কার্যক্রম শতভাগ সফল নাও হতে পারে মর্মে বিভিন্ন পর্যায় থেকে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখাসহ নিরাপত্তা মজুত সুসংহত করার স্বার্থে এবং চালের বাজার মূল্য ভোক্তা সাধারণের জন্য সহনীয় ও স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে এ অর্থবছরে জরুরি ভিত্তিতে জিটুজি পদ্ধতিতে চাল আমদানি করা আবশ্যক।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারি ভিয়েতনামের সাউদার্ণ ফুড করপোরেশন চাল সরবরাহের আগ্রহ জানিয়ে চিঠি পাঠায়। ওই চিঠি পর্যালোচনা করে দেশের সরকারি মজুত বৃদ্ধি করে সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য ভিয়েতনামের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে চাল আমদানির জন্য হ্যানয়স্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে ভিয়েতনামের প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিদল ও ভিয়েতনামের মিনিস্ট্রি অব ইন্ডাষ্ট্রি অ্যান্ড ট্রেডসহ বাংলাদেশস্থ ভিয়েতনামের দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতকে ভার্চুয়াল সভায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। উক্ত আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে ভিয়েতনামের সাউদার্ণ ফুড করপোরেশনের সঙ্গে ১৬ জানুয়ারি ও ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশের জিটুজি পদ্ধতিতে ক্রয় বিষয়ক কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বাংলাদেশে অবস্থিত ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত এবং ভিয়েতনামে অবস্থিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন। সভায় জিটুজি পদ্ধতিতে চাল আমদানির চুক্তিনামার শর্ত এবং মূল্য নিয়ে বিশদ আলোচনা ও নেগোসিয়েশন হয়। আলোচনা ও নেগোসিয়েশন শেষে ভিয়েতনাম হতে ভিয়েতনামে উৎপাদিত এক লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়।
এই চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে সমুদ্রপথে ভিয়েতনামের প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বাংলাদেশের জিটুজি পদ্ধতিতে ক্রয় বিষয়ক কমিটির নেগোসিয়েশন শেষে ভিয়েতনাম থেকে প্রতি মেট্রিক টন আতপ চালের মূল্য ৪৭৪.২৫ মার্কিন ডলার দরে আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। যা বিভিন্ন উৎস দেশগুলোর গড় দর (৪৯৬.৯৩ মার্কিন ডলার) অপেক্ষা (৪৯৬.৯৩-৪৭৪.২৫)= ২২.৬৮ মার্কিন ডলার কম হওয়ায় বর্তমান জরুরি প্রয়োজন বিবেচনায় রাষ্ট্রের নিরাপদ খাদ্য মজুত নিশ্চিত করতে ভিয়েতনাম থেকে এই চাল সংগ্রহের উদ্যোগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রতি মার্কিন ডলার ১২২.০০ টাকা হিসেবে ভিয়েতনাম থেকে এক লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ৫৭৮,৫৮,৫০,০০০ টাকা। এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
ঢাকা/হাসনাত/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল খ ম ট র ক টন চ ল আমদ ন ম ট র ক টন চ ল আমদ ন র ম ট র ক টন আতপ চ ল এক ল খ ম ট র ক টন ক ল খ ম ট র ক টন ব তরণ ব যবস থ ন শ চ ত কর কম ট র র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।