তিনি একাধারে সাংবাদিক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক। শুরুটা হয়েছিল বিপ্লবী সাহিত্য দিয়ে; এরপর সাংবাদিকতা। একসময় চলচ্চিত্রকেই শিল্পচর্চার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন। হয়ে ওঠেন দেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের চিরস্মরণীয় নাম। তিনি আর কেউ নন, কিংবদন্তি জহির রায়হান। আজ তার অন্তর্ধান দিবস। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি রবিবার সকালে অজ্ঞাত টেলিফোন কলের ডাকে ছুটে যাওয়ার পর আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মাত্র ৩৭ বছরের ক্ষুদ্রজীবনে দাপটের সঙ্গে চলচ্চিত্র ও সাহিত্যে দোর্দণ্ড প্রভাববিস্তার করে গেছেন। জহির রায়হানের তিরোধানের দিনে রইল তার নির্মিত পাঁচ সিনেমার কথা.

..

কাঁচের দেয়াল

জহির রায়হানের মুক্তিযুদ্ধপূর্বে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘কাঁচের দেয়াল’। চলচ্চিত্রটির মুক্তির কাল ১৮ জানুয়ারি ১৯৬৩ সাল। যার রিল টাইম ৯১ মিনিট ১৬ সেকেন্ড। চলচ্চিত্রের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো–‘মানুষ যতই আপন হোক না কেন, প্রত্যেকেই স্বার্থের নিগড়ে বাধা। স্বার্থছাড়া মানুষ একপাও সামনের দিকে এগোয় না। স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে মানুষ তার আচরণকে পরিচালিত করে। চলচ্চিত্রটিতে দেখা যায় অসহায় এক তরুণী মামার বাড়িতে লালিত-পালিত। মায়ের মৃত্যুর পর তার বাবা হয়ে যায় বাউন্ডুলে। মামার পরিবারে মেয়েটির লাঞ্ছনা-বঞ্চনার শেষ নেই। তবে এক মামা(মামির ভাই) ও মামাতো ভাই(ভালোবাসে) তাকে আলাদা চোখে দেখে। মেয়েটি হঠাৎ লটারিতে অনেক টাকা পেয়ে যায়। এ সময় মামার পরিবারে তার আদর-যত্নও বেড়ে যায়। কিছুদিন পরেই সংবাদ আসে যে লটারি মিথ্যে। মেয়েটির ভাগ্যে আবার দুর্ভোগ নেমে আসে। শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহ করে এবং বাড়ি থেকে কাচের দেয়াল ভেঙে বেরিয়ে পড়ে।’ সিনেমাটির  গীত, কণ্ঠ ও সংগীতে ছিলেন খান আতাউর রহমান।

কখনও আসেনি

এটিই জহির রায়হান নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র। এতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন সুমিতা দেবী এবং তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন খান আতাউর রহমান। ১৯৬১ সালের ২৪ নভেম্বর চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। মুক্তির দিনে প্রচারিত বিজ্ঞাপনে একটি অসম্ভব সাহসী বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, দেশের জনসাধারণ ২০ বছর পর যে ছবি দেখবে বলে আশা করেছিল, ২০ বছর আগেই দেশের তরুণরা সে ছবি তাদের উপহার দিল।

জীবন থেকে নেয়া

২০২০ সালের ১০ এপ্রিল চলচ্চিত্রটি মুক্তির অর্ধশতক পূর্ণ হয় জহির রায়হানের কালজয়ী সিনেমা ‘জীবন থেকে নেয়া’র । ১৯৭০ সালে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। সিনেমাটির মাধ্যমে পরাধীনতার নিষ্পেষণের এক চিত্র সেলুলয়েডে অমর করে রেখেছেন নির্মাতা। তখনকার চলচ্চিত্রের গুণীদের মধ্যে কে ছিলেন না ছবিটিতে! ছিলেন– খান আতাউর রহমান, আনোয়ার হোসেন, শওকত আকবর, রওশন জামিল, রাজ্জাক, রোজী সামাদ, আমজাদ হোসেন। তাঁরা সবাই প্রয়াত। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’। এটি জহির রায়হানের সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বলেও বিবেচিত।

বেহুলা

এই সিনেমাটিও জহির রায়হানের আরেকটি কালজয়ী নির্মাণ। বাংলার প্রচলিত লোককাহিনি, হিন্দু পুরাণ মনসামঙ্গল কাব্যেরবেহুলা-লখিন্দরের উপাখ্যান অবলম্বনেই নির্মিত হয় সিনেমাটি। ‘বেহুলা’চরিত্রের জন্য সুচন্দাকে নিয়েছিলেন জহির রায়হান। এটি ছিল সুচন্দা অভিনীত দ্বিতীয় সিনেমা। এর আগে তিনি প্রখ্যাত পরিচালক সুভাষ দত্তের ‘কাগজের নৌকা’য় অভিনয় করেন। এতে লখিন্দরের ভূমিকায় অভিনয় করেন নায়করাজ রাজ্জাক। চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে এটিই ছিল রাজ্জাকের প্রথম সিনেমা।

সঙ্গম

জহির রায়হানের হাত ধরেই পাকিস্তানের চলচ্চিত্র রঙিন চলচ্চিত্রের জগতে প্রবেশ করেছিল। ১৯৬৪ সালে তাঁর নির্মিত উর্দু চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’ ছিল পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রের ৬টি গানই তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। বছরটি জহির রায়হানের জন্য দারুণ একটি বছর ছিল। একই বছরে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর রচিত কালজয়ী উপন্যাস ‘হাজার বছর ধরে’। এই উপন্যাসের জন্য ১৯৬৪ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র চলচ চ ত র চলচ চ ত র র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘেঁষে একের পর এক অঘোষিত ভাগাড়, বর্জ্য ফেলে পরিবেশদূষণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হাড়াতলী এলাকা। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার এই এলাকায় গেলে দূর থেকেই নাকে ভেসে আসে উৎকট দুর্গন্ধ। মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনের পাশে চোখে পড়ে সারি সারি ময়লার স্তূপ। মহাসড়কের পাশ যেন হয়ে উঠেছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড়ে।

শুধু হাড়াতলী এলাকাই নয়; ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের বেশ কয়েকটি স্থানে এমন অঘোষিত ভাগাড় গড়ে উঠেছে। মহাসড়কের প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে কুমিল্লা জেলার অংশ। এর মধ্যে অন্তত ২০টি স্থানে একইভাবে ময়লা ফেলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মতো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান মহাসড়কের পাশে তাদের সংগ্রহ করা ময়লা ফেলছে। এতে মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন স্থানে আবর্জনার স্তূপ দিন দিন বাড়তে, মহাসড়ক পরিণত হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড়ে। এভাবে পরিবেশদূষণ বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে বর্জ্য ফেলার কারণে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যদি সঠিকভাবে করতে না পারে, তাহলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের কাজটা কী? মানুষ তো ট্যাক্স দেয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য। এভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলা একধরনের অপরাধও। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এসব বিষয়ে কঠোর হওয়া দরকার।

হাড়াতলী এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, প্রায় দুই বছর আগে স্থানটিতে ময়লা ফেলা শুরু করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। এরপর সেটি ধীরে ধীরে পরিণত হয় ভাগাড়ে। দিন যত গেছে, ময়লা ফেলার জায়গাটির আকার ততই দীর্ঘ হয়েছে। এ কারণে ওই স্থান দিয়ে হেঁটে চলাচল করা বেশ দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন আশপাশের বসবাসকারীরা। ভাগাড়ের আশপাশে অন্তত তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও ময়লার দুর্গন্ধে নাকাল।

এভাবে পরিবেশদূষণ বন্ধে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করছি। তবে এ বিষয়ে মূল দায়িত্বটা পালন করতে হবে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে।মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব, উপপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লা

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ময়লা ফেলতে আমরা বারবার বাধা দিয়েছি, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। সিটি করপোরেশন সবুজে ঘেরা এলাকাটির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। এখনো প্রতিদিন ময়লা বাড়ছে। সিটি করপোরেশন বলে, তারা নাকি এখন ময়লা ফেলে না। তাহলে আমাদের প্রশ্ন, ময়লা কারা ফেলছে?’

স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, শ্রেণিকক্ষে বসা যায় না দুর্গন্ধের জন্য। একটু বাতাসেই নাকে ভেসে আসে ময়লার দুর্গন্ধ। কলেজে প্রবেশের সময় নাক চেপে ধরে আসতে হয়। এ ছাড়া পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।

জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হাড়াতলীতে তিন মাস ধরে তাঁরা আবর্জনা ফেলছেন না। সিটি করপোরেশনের ফেলা ময়লাগুলো ভেকু দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এখন রাতের আঁধারে আশপাশের লোকজন এবং বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলছে। যারা ময়লা ফেলছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার প্রবেশমুখ বালুজুড়ি এলাকায় ময়লার ভাগাড়

সম্পর্কিত নিবন্ধ