ধর্মীয় বয়ান-জিকিরে চলছে দ্বিতীয় দিনের ইজতেমা
Published: 1st, February 2025 GMT
শুরায়ি নেজামের প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি)। নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে গভীর মনোযোগে ধর্মীয় বয়ান শুনে ও জিকিরে সময় কাটছে মুসল্লিদের। কাল সকালে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই পর্ব।
মোনাজাতে অংশগ্রহণকারী ও ইজতেমা শেষে বাড়ি ফেরা মুসল্লিদের যাতায়াত সুবিধার জন্য ৯টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেলওয়ে বিভাগ। এছাড়াও আগামীকাল আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে মধ্যরাত থেকে মোনাজাত শেষ না পর্যন্ত টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের আশেপাশের মহাসড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
ইজতেমার মূল মঞ্চ থেকে বিভিন্ন ভাষায় ইসলামী বিধি-বিধানের ওপর দিক নির্দেশনামূলক বয়ান দিচ্ছেন জ্যেষ্ঠ মুরুব্বিরা। ৪১টি খিত্তায় অবস্থান নিয়ে সে বয়ান শুনছেন হাজারো মুসল্লি। শনিবার (আজ) ফজরের পর বয়ান করেন পাকিস্তানের মওলানা খোরশেদ সাহেব। সকাল ১০টায় খিত্তায় খিত্তায় তালিম হবে। বাদ যোহর বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা ইসমাঈল গোদরা সাহেব। বাদ আসর যৌতুক বিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর রাতে বয়ান করবেন ভারতের মওলানা ইব্রাহীম দেওলা সাহেব। ইজতেমা আয়োজনে সফলতার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা।
এদিকে আখেরি মোনাজাতে মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধায় ৯টি বিশেষ ট্রেন ও বাড়তি বাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বনলতা, কক্সবাজার এক্সপ্রেস, সুবর্ণলতা, পর্যটক এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা এই পাঁচটি বিশেষ ট্রেন ব্যতীত টঙ্গি স্টেশনে সকল ট্রেনের যাত্রাবিরতি রাখা হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান বলেন, “আগামীকালের আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আজ মধ্যরাত থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস থেকে আব্দুল্লাহপুর এবং ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাইপাইল থেকে আব্দুল্লাপুর পর্যন্ত মহাসড়কে আখেরি মোনাজাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা হবে।”
আগামীকাল সকালে আখেরি মোনাজাত সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে হতে পারে। শুরায়ি নেজামের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা জোবায়ের মোনাজাত পরিচালনা করবেন। আখেরি মোনাজাত শেষে দ্বীনের দাওয়াতে বের হবেন দেশ বিদেশের মুসল্লিরা।
ইজতেমার আয়োজকরা জানান, আগামীকাল আখেরি মোনাজাতে শেষ হবে প্রথম পর্বের আয়োজন। এ ধাপে অংশগ্রহণ করছেন ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মুসল্লিরা। জুবায়েরপন্থিদের দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা চলবে ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই ধাপে অংশ নেবেন ২২ জেলা ও ঢাকার বাকি অংশের মুসল্লিরা। এরপর ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে সাদপন্থিদের ইজতেমা। অন্যদিকে ইজতেমায় এখন পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকা/রেজাউল/ইমন
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।