হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন সাবিনা ইয়াসমিন, থাকতে হবে বিশ্রামে
Published: 4th, February 2025 GMT
তিন দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বাসায় ফিরেছেন দেশের বরেণ্য সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। আজ (৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে তিনি বাসায় ফিরেছেন বলে জানান সংগীতশিল্পী জাহাঙ্গীর সাইদ।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে জাহাঙ্গীর সমকালকে বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে সাবিনা ইয়াসমিনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। শরীরের অবস্থা এখন ভালো। তার শারীরিক তেমন কোনো জটিলতা নেই। আজ দুপুরে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। তবে বেশ কিছুদিন সাবিনা ইয়াসমিনকে বিশ্রামে থাকতে হবে।’
দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় পর গত শুক্রবার গান গাইতে মঞ্চে উঠেছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন। সোয়া এক ঘণ্টা গানও গেয়েছিলেন। আমন্ত্রিত দর্শক-শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনছিলেন সেই গান। এর মধ্যে হঠাৎই মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়েন শিল্পী। দ্রুত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় গুলশানের একটি হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাতে তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ভোরে শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হলে তাকে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে তিনি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। সেই হাসপাতালেই এখন আছেন শিল্পী।
প্রসঙ্গত, সাবিনার জন্ম ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, ঢাকায়। পৈতৃক নিবাস সাতক্ষীরায়। বেড়ে উঠেছেন সংস্কৃতিমনা পরিবারে। বাবা লুতফর রহমান ও মা মৌলুদা খাতুনও গানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সাবিনার পাঁচ বোনের মধ্যে ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান, নীলুফার ইয়াসমিনও গানের জগতের মানুষ।
সংগীতের সঙ্গে সাবিনার বসবাস ছয় দশকের বেশি সময় ধরে। মাত্র সাত বছর বয়সে প্রথমবার স্টেজে গান করেছেন সাবিনা; ১৯৬২ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম গান করেন। ১৯৬৭ সালে প্রথম প্লেব্যাক করেন আমজাদ হোসেন ও নুরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমায়। এরপরের ইতিহাস কবেল জয় এবং সাফল্যের।
ভারতের প্রখ্যাত সুরকার আর ডি বর্মণ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সত্য সাহা, সুবল দাস, আলম খান, বাপ্পি লাহিড়ী, আলী হোসেন, খন্দকার নুরুল আলম, আলাউদ্দিন আলী, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মত সুরকারদের সুরে অসংখ্য চলচ্চিত্রের গান কণ্ঠে তুলেছেন তিনি।
সহশিল্পী হিসেবে, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, কুমার শানু, আশা ভোঁসলের মত শিল্পীকে পেয়েছেন তিনি। দশ হাজারেও বেশি গান কণ্ঠে তুলেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। গীতিকার নয়ীম গহরের লেখা ও সুরকার আজাদ রহমানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া দেশাত্মবোধক গান ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ একাত্তরের রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গানের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে সব শ্রেণির শ্রোতাদের মাঝে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন।
সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার ও ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তিনভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আর্থিক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে
সরকারের ওপর তিনভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মাঝারি মাত্রায় আর্থিক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানখাত সম্পর্কিত বিশ্লেষণে করে দেখা গেছে- সম্মিলিতভাবে এসওই খাত দেশের সরকারের জন্য মাঝারি মাত্রার ফিসকাল ঝুঁকি সৃষ্টি করে। এসওই এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো সার্বিকভাবে সরকারের আর্থিক অবস্থার ওপর তিনভাবে প্রভাব ফেলে।
প্রথমত, যদি এসওই-এর ঋণের জন্য গ্যারান্টি দেয় এবং তারা সেই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তাহলে সরকারের তা পুনর্ভরণসহ আর্থিক ও অন্যান্য ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। এটি ঘটতে পারে যদি প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে যায় বা তাদের প্রকল্পগুলো আশানুরুপ উৎপাদশীলতা দেখাতে ব্যর্থ হয়।
দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপি না হলেও যদি তারা ক্রমাগত লোকসান করে, তাহলে তাদের সচল রাখতে সরকারকে বাড়তি পুঁজি যোগান দিতে হতে পারে।
তৃতীয়ত, যদি এসব প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশিত মুনাফা না করতে পারে তাহলে সেটিও সরকারের রাজস্ব আয়ে চাপ বাড়াতে পারে। সার্বিকভাবে দেখা গেছে যে, এসওই সমূহের সম্পদকে সুচিন্তিতভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন, যাতে সর্ব্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করা যায়।
এ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারকে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদে আট ধরণের নীতি কৌশল গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। এই নীতি কৌশলের মধ্যে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের জনগণকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব থেকে সুরক্ষা দিতে সরকার ওএমএস (খোলা বাজারে খাদ্য পণ্য বিক্রি) টিসিবি’র ফ্যামিলি কার্ডের মতো কর্মসূচি চালু করেছে। সরকার ডায়নামিক সোশ্যাল রেজিস্ট্রি তৈরির মাধ্যমে উপকারভোগীর সহায়তাপ্রাপ্তি ব্যবস্থা পূর্ণ অটোমেশন করার উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারে।
বিদ্যুৎখাতের পরিকল্পনা বিষয়ে নীতি কৌশলে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎখাতে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সরকার ২০২৬ -২০২৭ অর্থবছরে তিন বছর মেয়াদে একটি রোডম্যাপ তৈরি করছে, যার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে ভর্তুকি কমিয়ে এখাতকে আর্থিকভাবে টেকসই করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার সার ব্যবস্থাপনা পুনঃমূল্যায়ন করছে এবং কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপকরণের প্রাপ্যতা ও সরবরাহে যেনন কোনো বিঘ্ন না ঘটে তা নিশ্চিত করছে।
ঋণ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ও আর্থিক ঝুঁকি কমাতে সরকার অর্থ বিভাগের অধীনে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং বন্ড/বিল বাজার উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
নীতি কৌশলের বিষয়ে আরও রয়েছে, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ জোরদারে সরকার আর্থিক লেনদেনের অটোমেশন করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা যেতে পারে।
রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ‘মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল(এমএলটিআরএস,২০২৫)’ ও ‘ট্যাক্স এক্সপেন্ডিচার নীতিমালা’ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কাঠামোগত সংস্কার পরিকল্পনা গ্রহণ ও কার্যকর করার মাধ্যমে সরকার ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের সক্ষমতা উন্নয়নের জন্য দক্ষ এসেট ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি গ্রহণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। একইসঙ্গে সরকার একটি দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে, যার মাধ্যমে মধ্যমেয়াদে বিভিন্ন ঝুঁকি অর্থায়নের উত্তম বিকল্পের মূল্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। একটি সামগ্রিক দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং সাড়া প্রদান কৌশল তৈরি করা যেতে পারে বলে অর্থমন্ত্রণালয়ের নীতি বিবৃতি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/হাসনাত/টিপু