পটুয়াখালীর বাউফলে ইতি দাস (১৯) নামে এক শিক্ষার্থী বন্ধুর সঙ্গে রেস্তোরাঁয় নাস্তা কারার সময় বখাটেদের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার (৩ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৭টার দিকে নিজ বাড়ির দোতলা থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেন স্বজনরা। 

মারা যাওয়া ইতি উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সমির দাসের মেয়ে। তিনি বরিশাল বিএম কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

আরো পড়ুন:

ঝালকাঠিতে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ 

বৈষম্যবিরোধী কমিটিতে ‘প্রকৃত বিপ্লবীরা’ স্থান না পাওয়ায় বিক্ষোভ

পরিাবরের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গতকাল সোমবার সকালে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে বের হন ইতি। দুপুর ১২টার দিকে তারা পাবলিক মাঠ সংলগ্ন ঢাকাইয়া ফাস্টফুড নামে এক রেস্তোরাঁয় যান। সেখানে হৃদয় রায়হান নামে এক যুবক তাদের দেখে জিজ্ঞাসাবাদ এবং উত্যক্ত করেন। এক পর্যায়ে হৃদয় ইতি এবং তার বন্ধুর পরিবারকে ডেকে নিয়ে যেতে বলেন।

তাদের পরিবারের লোকজন হৃদয় রায়হানের ভয়ে ওই রেস্টুরেন্টে না গিয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানান। বাউফল থানার এসআই শাহিন গিয়ে ইতি ও তার বন্ধুকে থানায় নিয়ে যান। কিছু সময় পর সেখান থেকে তাদের ছেড়ে দেন তিনি। বিকেল ৪টার দিকে ইতি বাড়িতে গিয়ে কাউকে কিছু না বলে বাড়ির দোতালায় চলে যান। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খাবার খাওয়ার জন্য পরিবারের সদস্যরা ইতিকে ডাকাডাকি করেন। কোনো শব্দ না পেয়ে তার (ইতি) মা দোতলায় গিয়ে মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। 

এসময় তিনি চিৎকার দিলে স্বজনরা এসে ইতিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইতিকে মৃত ঘোষণা করেন। 

ইতির বাবা সমীর দাস বলেন, “এ বিষয়ে আমার কিছুই বলার নেই। তবে আর যেন কোনো মেয়ে বখাটেদের হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।”

হৃদয় রায়হান বলেন, “ওই মেয়ে ও ছেলেকে আপত্তিকর অবস্থায় পেয়েছি। পরে পরিবারকে খবর দিয়ে তাদের নিয়ে যেতে বলি। তারা না এসে উল্টো পুলিশ পাঠায়। ফলে বিষয়টা জানাজানি হয় বেশি। একপর্যায়ে মেয়েটি কান্না করতে করতে চলে যান।” 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইতির বান্ধবীরা জানান, ইতি খুব হাস্যমুখ এবং আড্ডা প্রিয় মানুষ ছিল। সামান্য কারণে তিনি আত্মহত্যা করতে পারে না। তার মৃত্যুর আসল রহস্য খুঁজে বের করার দাবি জানান তারা। 

বাউফল থানার ওসি কামাল হোসেন বলেন, “ইতি দাসের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।”

ঢাকা/ইমরান/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র ব উফল

এছাড়াও পড়ুন:

১ জন ডাক্তারে চলছে হাসপাতাল!

দীর্ঘদিন ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে। তাই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে বাড়তি সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসরা নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাই মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে কোনো রকমে চলছে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার কাজ।

এদিকে, চিকিৎসক সঙ্কটে কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নিয়োগের দাবি তাদের।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দর, তিনটি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশনসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পে কর্মরত রয়েছে দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার শ্রমিক। এসব শ্রমিকসহ কলাপাড়া ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা রাঙ্গাবালীর প্রায় চার লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র আশ্রয়স্থল এই কলাপাড়া ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। 

বছরের অধিকাংশ সময়ে রোগীতে ভরা থাকে হাসাপাতালটি। অনেক সময় ওয়ার্ডে সিট না পেয়ে রোগীরা চিকিৎসা নেয় হাসপাতালের মেঝে কিংবা করিডোরে। অথচ এ হাসাপতালে চিকিৎসকের ৩৬টি পদের মধ্যে ২৭টি পদই শূন্য। বাকি ৯ জনের মধ্যে দুজন ঢাকায় সংযুক্তিতে, দুজন বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে ও একজন রয়েছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। 

বর্তমানে মাত্র চার জন চিকিৎসক রয়েছেন এ হাসপাতালে। এর মধ্যে উপেজলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয় দাপ্তরিক কাজে। এছাড়া দুজন রয়েছেন জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে। এরমধ্যে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ এবং অপরজন গাইনি ও অবস বিশেষজ্ঞ। যাদের কাজ শুধুমাত্র রেফার অর্থাৎ জটিল রোগের শিশু এবং গাইনি বিষয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া। এছাড়া শুধুমাত্র একজন রয়েছেন মেডিকেল অফিসার। যার আউটডোর, ইনডোর ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা। 

সীমবদ্ধার মধ্যে এই চার চিকিৎসক সময় ভাগ করেই চালাচ্ছেন পুরো ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। তবে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে চার চিকিৎসকই এখন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বার বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। 

এদিকে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনরা। 

কলাপাড়া হাসাপতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী মুরাদ হোসেন বলেন, “মঙ্গলবার দুপুরে জ্বর ও শাসকষ্ট নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছি। আজ সকালে শুধু একজন ডাক্তার এসে দেখে গেছে। এখানে ডাক্তারের সংকট থাকার কারণে আমরা ঠিকমতো সেবা পাচ্ছি না।” 

শিশু ওয়ার্ডের ভর্তি রোগী জুবাইদার (৫ মাস) নানি হোসনেয়ারা বলেন, “এখানে শুধু একজন শিশু রোগের চিকিৎসক রয়েছেন। তিনি এতো শিশু রোগীর কীভাবে সেবা দিবেন? নার্সরা তো সব বোঝে না। এখানে নাতীকে ভর্তি করানোর পর আমাদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে বেশ কয়েকবার ডাক্তারের পার্সোনাল চেম্বারে গিয়ে ওষুধ লিখে নিয়ে আসতে হয়েছে। আমরা এ হাসপাতালের চিকিৎসক সঙ্কটের সমাধান চাই।”

কলাপাড়া হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি ও অবস) ডা. শরীফ শায়লা ইসলাম বলেন, “আমাদের এখানে প্রচুর চিকিৎসক সংকট। যার কারণে অতিরিক্ত সময় ধরে সেবা দিতে গিয়ে আমি নিজেই এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছি। শরীরে জ্বর উঠেছে। আপনাদের আসার খবর পেয়ে ওষুধ খেয়ে জ্বর কমিয়ে এখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি। আসলে এভাবে রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়।” 

অপর জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক্স) ডা. কামরুননাহার মিলি বলেন, “আমাদের তো আসলে আউটডোরে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা না। তারপরও সঙ্কটের কারণে দিতে হচ্ছে। অতিরিক্ত সময় ধরে সেবা দিতে গিয়ে আমি নিজেই এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এত বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকার দিক বিবেচনা করা হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসক সঙ্কট সমাধানের অনুরোধ জানাচ্ছি। এতো সঙ্কটে আসলে রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।” 

কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জুনায়েদ হোসেন লেলিন বলেন, “চিকিৎসক সঙ্কটের ব্যাপারে বার বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে- এমনকি চিঠি দিয়েও এর সুরাহা পাইনি।”

পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ খালেদুর রহমান মিয়া বলেন, “শুধু কলাপাড়া নয়, পুরো জেলা জুড়েই চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে।”

ঢাকা/ইমরান/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খেলতে গিয়ে পুকুরে পড়ে প্রাণ গেল দুই শিশুর
  • ১ জন ডাক্তারে চলছে হাসপাতাল!