টস হেরে ব্যাটিং, শুরুতে ফিরলেন মিরাজ-রস
Published: 5th, February 2025 GMT
বিপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে অধিনায়ক মেহেদী মিরাজ সাজঘরে ফিরেছেন। পরেই আউট হয়েছেন অ্যালেক্স রস। ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে চট্টগ্রামের বিপক্ষে খুলনা ৪ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ২০ রানে ব্যাট করছে।
আউট হওয়া মিরাজ ৬ বলে ২ রান করেছেন। বিনোরা ফার্নান্দোর বলে বোল্ড হন তিনি। অ্যালেক্স রস ৬ বল খেলে শূন্য করে ফিরে যান। ক্রিজে আছেন নাঈম শেখ ও আফিফ হোসেন।
খুলনা টাইগার্সের একাদশ: মেহেদী মিরাজ, নাঈম শেখ, অ্যালেক্স রস, আফিফ হোসেন, সিমরন হেটমায়ার, মাহিদুল ইসলাম, জেসন হোল্ডার, মোহাম্মদ নওয়াজ, নাসুম আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও মুশফিক হাসান।
চট্টগ্রাম কিংসের একাদশ: পারভেজ ইমন, খাজা নাফি, মোহাম্মদ মিঠুন, হুসাইন তালাত, শামীম হোসেন, গ্রাহাম ক্লার্ক, বিনোরা ফার্নান্দো, আরাফাত সানি, শরিফুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ ও আলিস ইসলাম।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব প এল
এছাড়াও পড়ুন:
ইজিবাইকের জটে স্থবির রংপুর, সমাধান কী
রংপুর নগরে চিকিৎসা, পড়াশোনা, চাকরি ও অন্যান্য কারণে মানুষের চাপ বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে যানজট। নগরে যানজটের কারণ হিসেবে অনিবন্ধিত দুই–তিন গুণ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশা চলাচলকে দায়ী করছেন স্থানীয় লোকজন।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, ইজিবাইক ও রিকশা-ভ্যানের নিবন্ধন–বাণিজ্য, জনসংখ্যা ও নগরের আয়তনের তুলনায় কম রাস্তা, খানাখন্দে ভরা ও সরু সড়ক, ফুটপাত দখল, ক্লিনিক ও হাসপাতালে পার্কিং না থাকা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে গুরুত্ব না দেওয়া যানজটের অন্যতম কারণ। এই সমস্যার পেছনে কর্মসংস্থানের সংকটকেও সামনে আনছেন তাঁরা।
রংপুরের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও পরিবেশকর্মী মুনীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সড়কে কোনো শৃঙ্খলা নেই। অটোরিকশাগুলোর যেখানে–সেখানে থামা ও নিয়ম না মানার ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশকে তেমন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। সিটি করপোরেশন ও মেট্রোপলিটন পুলিশের সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা গেছে।
সিটি করপোরেশন এলাকার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা ও ভ্যানের নিবন্ধন দেয় রংপুর সিটি করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ১১ হাজার ৪৯২টি তিন চাকার পরিবহনের নিবন্ধন আছে। তবে সরকার পরিবর্তনের পর ইজিবাইকের নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ রয়েছে।
সিটি করপোরেশন এবং ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশা শ্রমিক সংগঠনের নেতারা জানান, রংপুর শহরে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার ইজিবাইক ও রিকশা চলাচল করছে। বিভিন্ন উপজেলা শহর থেকে ইজিবাইক ও রিকশা বিনা বাধায় শহরে ঢুকে পড়ছে।
এ বিষয়ে রংপুর মহানগর ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক–অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি এনামুল কবীর বলেন, নগর ভবনে মেয়র নেই। প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশ একে ওপরকে দোষারোপ করছে। জনগণেরও সচেতনতা নেই। দেখা যাচ্ছে, সিটি বাজারে বাজার করতে গিয়ে কেউ কেউ রাস্তায় রিকশা দাঁড় করিয়ে রাখছেন। এই কারণে যানজট কমছে না।
জেলা বাসদের (মার্ক্সবাদী) সাধারণ সম্পাদক আহসানুল আরেফিন বলেন, গরিব মানুষ ঋণ করে, জমানো টাকা দিয়ে ইজিবাইক কিনে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। এর সঙ্গে যন্ত্রাংশ বিক্রি, চার্জ দেওয়া ও মেকানিকসহ বিভিন্ন মানুষ যুক্ত আছেন। সংকট হলো, সরকার প্রচুর আমদানি করতে দিয়েছে। কিন্তু নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে না।
যানজটের কারণ
সরেজমিন দেখা গেছে, রংপুর নগরের জাহাজ কোম্পানি থেকে সিটি বাজার পর্যন্ত ফুটপাত দখল করে দোকান বসানো হয়েছে। পথচারীরা রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন। এসব কারণে নগরের বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মেডিকেল মোড়, টাউনহল থেকে পৌরবাজার, পায়রা চত্বর থেকে জাহাজ কোম্পানি, জাহাজ কোম্পানি থেকে লায়ন্স স্কুল ও শাপলা চত্বর এলাকার সড়কে অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে রোগী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
গত ১০ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রাম থেকে রংপুর নগরের ধাপ এলাকায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসক দেখাতে আসেন আলমগীর হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাতমাথা থেকে মেডিকেল মোড় এই ৮-৯ কিলোমিটার সড়কে ইজিবাইকে আসতে তাঁর সময় লেগেছে এক ঘণ্টার বেশি। ইজিবাইকের জটে রংপুর স্থবির হয়ে গেছে।
রংপুর মহানগর পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মহানগরে ট্রাফিক পুলিশে কর্মরত আছেন ১০১ জন। তাঁদের মধ্যে ছুটি ও অসুস্থতা বাদ দিয়ে প্রতিদিন দুই শিফটে ৭০ জন দায়িত্ব পালন করেন।
ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ জানায়, তারা প্রতিদিন ১০ থেকে ২০টি নিবন্ধনহীন ইজিবাইককে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে জরিমানা করে। ৭-৮টি করে ইজিবাইক জব্দ করে। তবে এটি সমস্যার সমাধান নয়। তিন চাকার ইজিবাইক ঘিরে শহরের সংঘবদ্ধ চক্র আছে। তারা সিটি করপোরেশন থেকে নিবন্ধন নিয়ে ভাড়া দেয়। এমনও ঘটনা আছে, সকালে এক ইজিবাইকের নিবন্ধন বিকেলে অন্য ইজিবাইকে লাগানো হয়।
রংপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মো. আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ যানজট নিরসনের চেষ্টা করছে। তবে এ ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সফলতা একটাই, কোনো সিনক্রিয়েট (মব ভায়োলেন্স অর্থে) হয়নি।
সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রংপুর-দিনাজপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক। এই মহাসড়কের চেকপোস্টের কাছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে ক্লাস শুরু ও ছুটির সময় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, জিলা স্কুল ও সুরভী উদ্যানের পাশে অবৈধ মাইক্রোস্ট্যান্ড করা হয়েছে। মেডিকেল মোড়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতেও বাস পার্ক করা হয়। ট্রাফিক পুলিশ এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে যানজট অর্ধেক কমবে।
সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
রংপুরের স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নগরের যানজট নিরসনে সিটি করপোরেশনের কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ সিটি করপোরেশন থেকে প্রয়োজনের বেশি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশার নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন ঘিরে ইজিবাইক ও রিকশার নিবন্ধন বেচাকেনার চক্র তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা এবং সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত।
রংপুর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, গত আগস্টে জুলাই যোদ্ধা হিসেবে ২৪৮ জন ইজিবাইকের নিবন্ধনের জন্য সিটি করপোরেশনের তৎকালীন প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলামের কাছে আবেদন করেন। ৩১ আগস্ট সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর লিটন পারভেজ জুলাই রাজবন্দী নামে আরেক সংগঠনের আহ্বায়ক হিসেবে ৪৫১ জনের নামে ইজিবাইকের নিবন্ধনের আবেদন করেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশনের মাসিক সভায় এ বিষয়টি লিখিত এজেন্ডা হিসেবে তোলা হয়।
এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে ২১ সেপ্টেম্বর রংপুরের এক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে হেনস্তা করা হয়। এরপর বিষয়টি থেমে গেছে। রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) উম্মে ফাতিমা বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় কথা বলতে রাজি হননি। তবে যানজট সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, সচেতনতা কর্মসূচি ছাড়া তেমন করণীয় নেই সিটি করপোরেশনের।
সমাধান কী
নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) মহানগর কমিটির সভপাতি খন্দকার ফখরুল আনাম প্রথম আলোকে বলেন, নগরে যানবাহন বেড়েছে। যানবাহন নিয়ন্ত্রণে পুলিশের মুখ্য ভূমিকা থাকা দরকার। কিন্তু সেটা দেখা যাচ্ছে না। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে আর ইজিবাইকের নিবন্ধন দেওয়া ঠিক হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, নগর এলাকায় বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে ইজিবাইক ও রিকশা কমিয়ে চক্রাকারে বাস সার্ভিস চালু করা যেতে পারে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নগরের যানজট কমাতে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের মিঠাপুকুরের গড়ের মাথা থেকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের হাজীরহাট এবং ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের দমদমা থেকে মাহীগঞ্জ হয়ে রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের নব্দীগঞ্জ পর্যন্ত দুটি বাইপাস সড়কের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো অনুমোদন হয়নি।