প্রশাসনের কর্মকর্তারা থাকবেন মাঠে, সচিবালয় চলবে ‘এসইএসে’
Published: 5th, February 2025 GMT
বিদ্যমান বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারকে ‘বাংলাদেশ প্রশাসনিক সার্ভিস’ করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এই ক্যাডার সার্ভিসের পদগুলো মাঠ প্রশাসনেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আর সচিবালয় চলবে সব সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস (এসইএস)’-এর কর্মকর্তাদের দিয়ে। এখানে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদের কর্মকর্তারা থাকবেন। ‘এসইএসে’ উপসচিব পদে প্রশাসনের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য সার্ভিসের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখা হবে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এ প্রতিবেদন তুলে দেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। পরে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ সাংবাদিকদের দেওয়া হয়।
সুপারিশ অনুযায়ী, মাঠপর্যায়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের শুরুর পদের নাম এখনকার মতো সহকারী কমিশনার। মাঠপর্যায়ে তাঁদের শীর্ষ পদ হবে বিভাগীয় কমিশনার; যাঁদের পদমর্যাদা হবে গ্রেড-১; যা সচিবের সমান। তবে এই সার্ভিসের জন্য একটি শীর্ষ পদ থাকবে, নাম হবে ‘প্রধান কমিশনার’; যিনি বিশেষ গ্রেড পাবেন; যা মুখ্য সচিবের সমান। এর সঙ্গে মিল রেখে অন্যান্য সার্ভিসের জন্যও ভিন্ন নামে পদ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
বিসিএসের আওতায় বিদ্যমান একীভূত ‘ক্যাডার সার্ভিস’ বাতিল করে সার্ভিসের ধরন অনুযায়ী আলাদা নামকরণের সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান ২৬টি ক্যাডারকে কমিয়ে ১৩টি প্রধান সার্ভিসে বিভক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে সার্ভিসগুলোর পদসোপান কেমন হবে, তা–ও উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রশাসন সার্ভিসের শুরুর পদ হবে সহকারী কমিশনার। তারপর পর্যায়ক্রমে জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ও উপজেলা কমিশনার (এখনকার ইউএনও), যাঁদের বেতন গ্রেড হবে ৬; তারপর অতিরিক্ত জেলা কমিশনার (এখনকার এডিসি), যাঁদের বেতন গ্রেড-৫; তারপর জেলা কমিশনার (এখনকার ডিসি), যাঁদের বেতন গ্রেড-৩, অর্থাৎ যুগ্ম সচিবের সমান। বর্তমানে তাঁদের বেতন গ্রেড-৫। তার ওপরের পদ হবে অতিরিক্তি বিভাগীয় কমিশনার, যাঁদের বেতন গ্রেড হবে ২। তারপর বিভাগীয় কমিশনার।
অনুরূপভাবে অন্যান্য সার্ভিসের পদগুলো হবে পর্যায়ক্রমে সহকারী পরিচালক, উপজেলা প্রধান, অতিরিক্ত পরিচালক, পরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও মহাপরিচালক। এর বাইরে প্রতিটি সার্ভিসের জন্য একটি শীর্ষ পদ থাকবে। যেমন ‘চিফ অব হেলথ সার্ভিস’। প্রতিটি সার্ভিসের কর্মকর্তারা পরীক্ষার মাধ্যমে ওই সব পদে পদোন্নতি পাবেন।
সব সার্ভিসের কর্মকর্তারা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস (এসইএস)’-এ নিয়োগ পেতে পারবেন। এই কর্মকর্তারা সচিবালয়ে দায়িত্ব পালন করবেন, যেখানে বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাই সচিবালয় চালাচ্ছেন।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বলছে, প্রশাসন সার্ভিসের যেসব কর্মকর্তা এসইএসে যাওয়ার জন্য পরীক্ষা দেবেন না বা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হবেন, তাঁরাও নিজ সার্ভিসের পদগুলো, অর্থাৎ অতিরিক্ত জেলা কমিশনার, জেলা কমিশনার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, বিভাগীয় কমিশনার ও প্রধান কমিশনার পদে পদোন্নতির সুযোগ পাবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স র ভ স র জন য র স প র শ কর পর ক ষ ত রপর সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশের এখনকার ভূমিকার প্রশংসায় বিএনপির মাহদী আমিন
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এসে পুলিশের আচরণে পরিবর্তন দেখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন।
মাহদী আমিন বলেছেন, ‘অন্ততপক্ষে গত এক বছরে পুলিশকে দেখছি আমরা অনেক কমফোর্টেবল একটা জায়গা থেকে। আমাদের রেসপেক্ট হচ্ছে। আজকে এভাবে কথা বলছি বা ফ্রিলি কমপ্লেন দিতে পারছি।’
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন মাহদী আমিন। যৌথভাবে এ গোলটেবিলের আয়োজন করে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান।
বৈঠকে আলোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের আমলের পুলিশকে প্রশংসায় ভাসানোর আগে আওয়ামী লীগ আমল নিয়ে সমালোচনা করেন মাহদী আমিন। তখন বিএনপি সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘দেখা গেছে, বিএনপির অনেক নেতা আছে, যাদের নামে ৩০০, ৪০০ বা সাড়ে ৪০০ করে মামলা হচ্ছে। গায়েবি মামলা, যিনি মারা গিয়েছেন, ওনার নামেও মামলা হচ্ছে। বিদেশে আছেন, ওনার নামেও মামলা হচ্ছে।’
মাহদী আমিন বলেন, ‘হিউম্যান রাইটসের ক্ষেত্রে পুলিশের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ছিল মানবাধিকার ধরে রাখা, তারাই মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছিল, একটা অংশ। বাক্স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার বদলে বাক্স্বাধীনতা হরণ করেছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে আইন লঙ্ঘন করেছে।’
আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১ ঘণ্টা আগেপুলিশকে ‘রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গসংগঠনের মত’ ব্যবহার বন্ধ করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দেন তারেক রহমানের উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। ভবিষ্যতে যারা সরকারে আসবে, সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব তাদের। এর সঙ্গে জড়িত সব অংশীজনকেও পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
পুলিশের সামাজিক মর্যাদা ও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মাহদী আমিন বলেন, ‘আমরা ও যারা ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসবে, কীভাবে আরও ডিগনিটি দেওয়া যায়, আরও রেসপেক্ট নিশ্চিত করা যায়, একটা সোশ্যাল মর্যাদা নিশ্চিত করা যায়, তার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
আরও পড়ুনগোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংস্কার না হলে পুলিশ সংস্কার অর্জিত হবে না: ইফতেখারুজ্জামান২ ঘণ্টা আগেস্বাধীন পুলিশ কমিশন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক মতৈক্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন মাহদী আমিন।
এই গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীমও বৈঠকে অংশ নেন।
আরও পড়ুন‘আমার লোক, তোমার লোক’ ব্যাধি থেকে দলগুলোকে বের হতে হবে: আসিফ নজরুল২ ঘণ্টা আগে