পটুয়াখালীর বাউফলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বাউফল পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়কসহ কমপক্ষে ২০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে চারটি মোটরসাইকেল। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার নাজিরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বাউফল পাবলিক মাঠে বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল আলম তালুকদারের জনসভা করার কথা রয়েছে। এ উপলক্ষে গত কয়েক দিন ধরে পোস্টার ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফাসম্বলিত প্রচারপত্র বিতরণ কার্যক্রম করছিলেন বাউফল পৌরসভা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল ফাহাদের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি দল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পোস্টার ও প্রচারপত্র নিয়ে নাজিরপুর গ্রামে প্রচারণা চালাতে গেলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহতদের মধ্যে ১০ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর বাউফল উপজেলা ও পৌর ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ছাত্রদল নেতা আবদুল্লাহ আল ফাহাদ অভিযোগ করেছেন, নাজিরপুর গ্রামের আবদুল মোতলেব খানের বাড়ির সামনে পৌঁছালে নাজিরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন খানের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি দল লাঠিসোঁটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাঁদের নেতা-কর্মীদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে। এ সময় চারটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, বাউফল পৌরসভা বিএনরি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মো.

পলাশের পরোক্ষ নির্দেশে এই হামলা চালানো হয়েছে। তাঁকে (ফাহাদ) মুঠোফোনেও যুবদল নেতা পলাশ দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এনায়েত হোসেন পলাশের শ্বশুর।

তবে বিএনপি নেতা এনায়েত হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ফাহাদ ও তাঁর লোকজন পরিকল্পিতভাবে এলাকায় ঢুকে তাঁদের লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছেন। তখন তাঁর লোকজন আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে তাঁর লোকজনও আহত হয়েছেন। তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মু. মুনির হোসেনের পক্ষে রাজনীতি করেন বলে দাবি করেন।

বাউফল পৌরসভা বিএনরি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. পলাশ বলেন, তিনি ঢাকায় আছেন। তিনি ছাত্রদল নেতা ফাহাদকে ফোন করে মারামারি না করার জন্য বলেছেন। কোনো হুমকি দেননি।

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, বিএনপির দলীয় বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব উফল প র ছ ত রদল র ব এনপ র স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘেঁষে একের পর এক অঘোষিত ভাগাড়, বর্জ্য ফেলে পরিবেশদূষণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হাড়াতলী এলাকা। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার এই এলাকায় গেলে দূর থেকেই নাকে ভেসে আসে উৎকট দুর্গন্ধ। মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনের পাশে চোখে পড়ে সারি সারি ময়লার স্তূপ। মহাসড়কের পাশ যেন হয়ে উঠেছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড়ে।

শুধু হাড়াতলী এলাকাই নয়; ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের বেশ কয়েকটি স্থানে এমন অঘোষিত ভাগাড় গড়ে উঠেছে। মহাসড়কের প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে কুমিল্লা জেলার অংশ। এর মধ্যে অন্তত ২০টি স্থানে একইভাবে ময়লা ফেলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মতো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান মহাসড়কের পাশে তাদের সংগ্রহ করা ময়লা ফেলছে। এতে মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন স্থানে আবর্জনার স্তূপ দিন দিন বাড়তে, মহাসড়ক পরিণত হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড়ে। এভাবে পরিবেশদূষণ বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে বর্জ্য ফেলার কারণে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যদি সঠিকভাবে করতে না পারে, তাহলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের কাজটা কী? মানুষ তো ট্যাক্স দেয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য। এভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলা একধরনের অপরাধও। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এসব বিষয়ে কঠোর হওয়া দরকার।

হাড়াতলী এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, প্রায় দুই বছর আগে স্থানটিতে ময়লা ফেলা শুরু করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। এরপর সেটি ধীরে ধীরে পরিণত হয় ভাগাড়ে। দিন যত গেছে, ময়লা ফেলার জায়গাটির আকার ততই দীর্ঘ হয়েছে। এ কারণে ওই স্থান দিয়ে হেঁটে চলাচল করা বেশ দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন আশপাশের বসবাসকারীরা। ভাগাড়ের আশপাশে অন্তত তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও ময়লার দুর্গন্ধে নাকাল।

এভাবে পরিবেশদূষণ বন্ধে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করছি। তবে এ বিষয়ে মূল দায়িত্বটা পালন করতে হবে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে।মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব, উপপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লা

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ময়লা ফেলতে আমরা বারবার বাধা দিয়েছি, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। সিটি করপোরেশন সবুজে ঘেরা এলাকাটির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। এখনো প্রতিদিন ময়লা বাড়ছে। সিটি করপোরেশন বলে, তারা নাকি এখন ময়লা ফেলে না। তাহলে আমাদের প্রশ্ন, ময়লা কারা ফেলছে?’

স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, শ্রেণিকক্ষে বসা যায় না দুর্গন্ধের জন্য। একটু বাতাসেই নাকে ভেসে আসে ময়লার দুর্গন্ধ। কলেজে প্রবেশের সময় নাক চেপে ধরে আসতে হয়। এ ছাড়া পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।

জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হাড়াতলীতে তিন মাস ধরে তাঁরা আবর্জনা ফেলছেন না। সিটি করপোরেশনের ফেলা ময়লাগুলো ভেকু দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এখন রাতের আঁধারে আশপাশের লোকজন এবং বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলছে। যারা ময়লা ফেলছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার প্রবেশমুখ বালুজুড়ি এলাকায় ময়লার ভাগাড়

সম্পর্কিত নিবন্ধ