সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তরায় হলে বাধা দেবে বিএনপি। গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে এমন মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। 

এ সময় তিনি জানান, নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণের ক্ষমতা ইসির নেই। তবে ইসির সঙ্গে তাদের আলাপে মনে হয়েছে, আগামী মে-জুনের মধ্যে ইসি পরিপূর্ণভাবে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত হবে। আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে নির্বাচনের সময় নিয়েও তারা কথা বলবেন বলে জানান বিএনপির এই নেতা। 
গতকাল বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে। আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে বিকেল সাড়ে ৩টায় নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে এই প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। অন্যদিকে, সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আব্দুর রহমানেল মাছউদ, বেগম তহমিদা আহমদ ও আবুল ফজল মো.

সানাউল্লাহ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।  

বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা নজরুল ইসলাম খানকে প্রশ্ন করেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এর আগে বলেছেন সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা খর্ব হবে। এ বিষয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে কিনা? জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তো তাদের ব্যাপার, তারা বলবে। আমরাও যদি মনে করি সংস্কার কমিশনের কোনো প্রস্তাব সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অন্তরায়, ওটা নির্বাচন কমিশন কেন, আমরাও বাধা দেব।’ 

এক ঘণ্টার এই বৈঠক থেকে বেরিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে সরকারের আলোচনা শেষে একটি সিদ্ধান্ত আসবে। সে অনুযায়ী যদি আইন ও বিধির পরিবর্তন হয়, নির্বাচন কমিশনকে তা মানতে হবে। তবে সেগুলো এখনও হয়নি। তিনি বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি কেমন, সেটি জানতে চাওয়া হয়েছিল। মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রচলিত সংবিধান ও আইন অনুযায়ী, সরকার পদত্যাগ করলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়– এ প্রশ্নে নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, এখন তো ওই আইনে দেশ চলছে না। কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় মনে হয়েছে, আগামী মে-জুনের মধ্যে তারা হালনাগাদ ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন আয়োজনের জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তুত থাকবেন। তবে নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এখন কমিশনের নেই। রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে সরকারের অনুরোধ সাপেক্ষে কমিশন নির্বাচন আয়োজন করবে। আরও কিছু প্রাসঙ্গিক সমস্যা থাকলেও সেটা দূর করে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব। 
ইসির নির্বাচনের প্রস্তুতি কেমন এবং সেটি নিয়ে বিএনপি সন্তুষ্ট কিনা– এ প্রশ্নে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ওয়েল। আমরা বুঝতে পারছি, আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের যে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা, আমার মনে হয়, তারা সঠিকভাবেই সেটা নিচ্ছে।’

বিএনপি কত দিনের মধ্যে নির্বাচন চায়– এমন প্রশ্নে এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, যেহেতু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার দায়িত্ব সরকারের, তাই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির একটি আলোচনা রয়েছে। সেখানে এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হবে।  
ভোটার তালিকা হালনাগাদ বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৩০ লাখ নতুন ভোটার আগামী দিনে যুক্ত হবে, যারা অতীতে বাদ পড়েছিলেন। আর এই সময়ে নতুন ভোটার যারা হবেন, তাদের ১৮ বছর হবে আগামী বছরের ১ জানুয়ারি। কাজেই ওটা হিসাব না। ১৫ লাখ মারা গেছেন, তারা বাদ পড়বেন। তবে এর পরও কিছু যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত নভেম্বরে অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই বিএনপির সঙ্গে প্রথম বৈঠক। এর মাধ্যমে ছয় বছর পর ইসিতে এলেন বিএনপি নেতারা।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক আজ
নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করবে বিএনপি প্রতিনিধি দল। আগামী মে মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকার কাজ শেষ হলে এই বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সমস্যা দেখছে না বিএনপি। দলটির প্রত্যাশা, নির্বাচন-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেবে সরকার। আইন অনুযায়ী, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার কথা সরকারপ্রধানের। তাই জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের অবস্থান ও স্পষ্ট রোডম্যাপ জানতে চাইতে পারে দলটি। 
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি প্রতিনিধি দল দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করবেন। এ ছাড়া ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ সারাদেশে ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে তুলে ধরা হবে বিএনপির অবস্থান।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ইতিবাচক সাড়া না পেলে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। ইতোমধ্যেই তারা বিভাগীয় সমাবেশ ও জেলায় জেলায় সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। 


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ নজর ল ইসল ম খ ন সরক র র ব এনপ র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ