বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প চীনের সব ধরনের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দেন। আরও কিছু দেশের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকির মধ্যেই আজ সোমবার থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যের ওপর চীনের আরোপ করা আমদানি কর। খবর বিবিসির

গতকাল রোববার ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রে সব স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন তিনি। এ বিষয়ে আজ সোমবার পূর্ণ ঘোষণা আসতে পারে।

এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, আরও কিছু দেশের ওপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন। তবে কোন কোন দেশ এ ক্ষেত্রে তার টার্গেট হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি।

চীন সর্বশেষ কয়লা ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর ১৫ শতাংশ আমদানি করসহ যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিলো। এছাড়া আমেরিকান অপরিশোধিত তেল, কৃষি যন্ত্রপাতি এবং বড় ইঞ্জিনের গাড়ির ওপর ১০ শতাংশ শুল্কও আরোপ করা হয়েছিলো।

গত সপ্তাহে চীনা কর্তৃপক্ষ প্রযুক্তি খাতের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান গুগলের বিরুদ্ধে অ্যান্টি মনোপলি তদন্ত শুরু করেছে। এছাড়া ডিজাইনার ব্রান্ড কালভিন ক্লেইন অ্যান্ড টমি হিলফিগারের যুক্তরাষ্ট্রের মালিক পিভিএইচকে কথিত ‘আনরিলায়েবল এনটিটি’ তালিকায় যুক্ত করেছে।

চীন একইসঙ্গে ২৫ ধরনের বিরল ধাতব পদার্থের ওপর শুল্ক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এগুলো অনেক ধরনের বৈদ্যুতিক পণ্য ও সামরিক উপকরণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এর আগে কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। পরে দুই দেশের সমঝোতায় শুল্ক আরোপ স্থগিত করা হয়। এর কয়েকদিন পর ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম মেয়াদেও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে কানাডা, মেক্সিকো ও ব্রাজিলসহ কয়েকটি বাণিজ্য অংশীদারকে শুল্কমুক্ত কোটা সুবিধা দিয়েছিলেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আমদানি করের বিষয়টি বাইডেন প্রশাসন হোয়াইট হাউজে আসার আগে পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি। এবারেও কোনো দেশ নতুন শুল্ক পরিকল্পনার বাইরে থাকবে কি না সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

ট্রাম্পের লক্ষ্য হলো নির্বাচনী প্রচারে দেওয়া পারস্পারিক শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা। তিনি তখন বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক থাকলে একই হারে যুক্তরাষ্ট্রও শুল্ক আরোপ করবে।

ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করে আসছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র যে শুল্ক নেয়; তার চেয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা গাড়ির ওপর বেশি কর নেয়।

গত সপ্তাহে বিবিসিকে বলেছিলেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর শিগগিরই শুল্ক প্রয়োগ হতে পারে। তবে যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে একটি চুক্তি হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ শুল্ক কার্যকরের পর বেইজিং ফেন্টানিলের বিষয়ে অসত্য ও অপ্রমাণিত অভিযোগ উত্থাপনের জন্য ওয়াশিংটনকে অভিযুক্ত করেছে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় দায়ের করা অভিযোগে চীন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি কর ‘বৈষম্যমূলক ও সুরক্ষাবাদী’ এবং এটি বাণিজ্য বিধির লঙ্ঘন।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এ বিষয়ে চীনের পক্ষে সিদ্ধান্ত এখনি না-ও আসতে পারে। কারণ, বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্যানেল এখনো কার্যকর নয়।

তবে ট্রাম্প তার চীনা প্রতিপক্ষ শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলছেন, এ বিষয়ে তার কোনো তাড়া নেই।

গত ২০ জানুয়ারির পর ট্রাম্প যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন করা হতে পারে।

শুক্রবার তিনি চীনের ক্ষুদ্র প্যাকেজের ওপর আরোপ করা শুল্ক স্থগিত করেছেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করা হয়েছিলো। এই স্থগিতাদেশ শুল্ক রাজস্ব সংগ্রহের পর্যাপ্ত ও পূর্ণ সুবিধা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র র ওপর শ ল ক ক র যকর আমদ ন ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত

নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।

কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।

১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)

আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)

ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।

৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)

ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।

৪. ঋণের মেয়াদ

কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।

৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)

শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।

৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)

ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।

৭. প্রসেসিং ফি

আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।

৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)

বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।

৯. জামানত (কোলেটারাল)

ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।

১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও

আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ