গাজীপুরে অপারেশন ডেভিল হান্টে আরও ৪৮ জন আটক
Published: 12th, February 2025 GMT
গাজীপুরে অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে জেলা ও নগর থেকে আরও ৪৮ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে নগর থেকে ৪০ জন ও জেলা থেকে ৮ জনকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গতকাল মঙ্গলবার রাতে গাজীপুর নগরের সদর থানার পুলিশ ৯ জনকে, বাসনে ৭ জন, কোনাবাড়িতে ৪ জন, গাছায় ৫ জন, পুবাইলে ৩, কাশিমপুরে ১, টঙ্গী পূর্বে ৩, টঙ্গী পশ্চিমে ৪ জনকে আটক করা হয়। এ ছাড়া পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিবি) ৪ জন ও জেলা পুলিশ ৫টি থানায় ৮ জনকে আটক করে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (বিশেষ শাখার) আলমগীর হোসেন জানান, মেট্রোপলিটন ৮টি থানায় অভিযান চালিয়ে নতুন করে ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
পুলিশ সুপার চৌধুরী মো.
গত শুক্রবার রাতে আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন গাজীপুরে দিনভর বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। বিক্ষোভের মুখে দায়িত্বে অবহেলার কথা স্বীকার করে ক্ষমা চান মহানগর পুলিশ কমিশনার। প্রত্যাহার করা হয় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে।আরও পড়ুন‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’: গাজীপুরে আটক আরও ৮১ জন১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
এ ঘটনার পরদিন শনিবার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের গাজীপুরের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ মোহিত বাদী হয়ে গাজীপুর সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় ২৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি আমজাদ হোসেন মোল্লা নামের আওয়ামী লীগের এক কর্মী।
আরও পড়ুনঅপারেশন ডেভিল হান্টে আরও ৬০৭ জন গ্রেপ্তার, তিন দিনে গ্রেপ্তার দুই হাজারের বেশি১৪ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
হাড়ভাঙা পরিশ্রমে পুরুষের অর্ধেকের কম বেতন নারীর
লিমা আক্তার কাজ করতেন ময়মনসিংহ নগরীর একটি রেস্তোরাঁয়। প্রতিদিন তাঁর ডিউটি শুরু হতো বেলা ১১টায়, শেষ হতো রাত ১২টায়। তাঁর কাজ ছিল বাবুর্চির রান্নার কাজে সহায়তা করা। প্রতিদিন ১৩ ঘণ্টা কাজ করেও তাঁর দৈনিক মজুরি ২৫০ টাকা। অথচ মূল বাবুর্চির দৈনিক বেতন এক হাজার টাকা। সংসার সামলে স্বল্প বেতনে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় কাজ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বাধ্য হয়েই চাকরি ছাড়েন তিনি।
একই চিত্র দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বেলায়। সরেজমিন দেখা যায়, রাত ১০টার পর থেকে বিপণিবিতানগুলো বন্ধ হলে কাজ শুরু হয় তাদের। এ কাজে পুরুষের চেয়ে নারীর অংশগ্রহণ বেশি। তাদের অভিযোগ, রাত ১১টা থেকে কাজ শুরু হলে শেষ হয় রাত ২-৩টায়। এত রাতে কাজ শেষ করে নিরাপদে বাসায় যাতে পারেন না। এ কাজে মজুরিও অনেক কম।
সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, নগরীতে নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। তারা মাসিক বেতন পান ৭ হাজার ৮০০ টাকা। নারী অধিকারকর্মীরা জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানেও নারীর প্রতি বৈষম্য মেনে নেওয়ার মতো না। তাদের দাবি– বিশ্ববিদ্যালয়, সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম মজুরি সরকারি প্রজ্ঞাপনে ধরা আছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাচ্ছেন মাত্র ২০০-২৫০ টাকা।
সুলেখা নামে এক নারী কর্মীর ভাষ্য, এত অল্প আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। আবার রাত-বিরাতেও কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন ঝামেলা পোহাতে হয়।
ময়মনসিংহের ইটভাটাগুলোতে কাজ করেন শতাধিক নারী কর্মী। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করলেও পুরুষের চেয়ে অর্ধেক বেতন জোটে। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে তারা মজুরি পান ২৫০-৩০০ টাকা। যেখানে একজন পুরুষ একই কাজ করে মজুরি পান ৬০০-৭০০ টাকা। একই অবস্থা চালকলগুলোতে। শতাধিক চালকলে কাজ করেন কয়েক হাজার নারী শ্রমিক। নারীর তুলনায় এখানে দ্বিগুণ বেতন পান পুরুষ।
ময়মনসিংহ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সূত্রমতে, জেলার ইটভাটাগুলোতে ৮০ শতাংশ পুরুষের সঙ্গে কাজ করেন ২০ শতাংশ নারী। তবে ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন পোশাক কারখানা ও স্পিনিং মিলগুলোতে কাজ করেন ৬৫-৭০ শতাংশ নারী শ্রমিক। সরকারি প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস হলেও এসব কারখানায় খুব একটা ছুটি মেলে না। তাদের অভিযোগ, অধিকাংশ নারীকেই অন্তঃসত্ত্বা হলে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। পরে আবার নতুন চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়।
ট্রেড ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, নারীদের সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কাজ না করানোর নির্দেশনা থাকলেও নিয়ম মানছে না অধিকাংশ কারখানা। রাত ১২টা থেকে ১টায় অনেক কারখানা ছুটি হলে ঘরে ফিরতে অনিরাপদ বোধ করেন নারী কর্মীরা। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে ও রাস্তায় যৌন হেনস্তার শিকার হন অনেকে। এসব বিষয়ে ‘অ্যান্টি হেরেজমেন্ট কমিটি’ থাকলেও বাস্তবে সুফল পাচ্ছেন না শ্রমিকরা।
ট্রেড ইউনিয়নের নারী নেত্রী নওশীন বৃষ্টি জানান, মাঝে মাঝেই খবর আসে অফিস বা কর্মস্থলেই সন্তান প্রসব করেন নারী শ্রমিকরা। যা একইভাবে নিয়োগ কর্তার গাফিলতি ও শ্রমিকের অসচেতনার ইঙ্গিত দেয়। নিয়োগ কর্তা বা মালিক পক্ষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ছুটি দিতে চান না। তার ওপর আবার বেতনসহ ছুটি দেওয়া তো আকাশ ছোঁয়ার মতো ব্যাপার।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন সমকালকে বলেন, ময়মনসিংহে হোটেল রেস্টুরেন্টে সব মিলিয়ে পাঁচ হাজার নারী শ্রমিক কাজ করেন। তাদের দিয়ে পুরুষের তুলনায় অনেক কম বেতনে কাজ করানো হয়। তাঁর মতে, নারীরা সমাজে পুরুষের সমকক্ষ হওয়ার জন্য দেশে প্রচলিত বিভিন্ন রকম শ্রমশোষণ ও বিভাজন ভেঙে ফেলতে হবে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ময়মনসিংহের শ্রম পরিদর্শক (সেফটি) তুহিনুর রহমান জানান, কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে শ্রমিকদের প্রতি মাসে ৫০-৬০টি অভিযোগ আসে। ১২৪-এর ক ধারায় ত্রিপক্ষীয় সালিশের মাধ্যমে এগুলো নিষ্পত্তি করা হয়। এ ছাড়া ১৬৩৫৭ নম্বরে ট্যুল ফ্রি ফোন করে অভিযোগ জানালে বিষয়গুলো বিবেচনা করে শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় কাজ করে অধিদপ্তর।