হলিউডে অ্যাকশন, থ্রিলার ও হরর মুভির পাশাপাশি বক্স অফিস কাঁপিয়ে বেড়ায় রোমান্টিক ছবিগুলোও। বহু ছবি যুগে যুগে ভালোবাসার বার্তা দিয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে হলিউডে। এবারের বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো হলিউডের দর্শকনন্দিত কয়েকটি রোমান্টিক সিনেমার কথা…

কাসাব্ল্যাঙ্কা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। যুক্তরাষ্ট্র যদিও তখনও যুদ্ধে যোগ দেয়নি, কিন্তু ইউরোপ মোটামুটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে বাঁচার আশায় দলে দলে মানুষ ইউরোপ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে সরাসরি যাওয়ার উপায় নেই। যেতে হয় প্যারিস, মার্সেই, ভূমধ্যসাগর, ওরান, কাসাব্ল্যাঙ্কা, লিসবন, যুক্তরাষ্ট্র অনুসরণ করে। এখন সমস্যা হচ্ছে কাসাব্ল্যাঙ্কা পর্যন্ত আসতে পারলেও এখান থেকে লিসবন যাওয়ার অনুমতিপত্র জোগাড় করা খুবি কঠিন। তাই কাসাব্ল্যাঙ্কায় দিন দিন বাড়ছে উদ্বাস্তুর সংখ্যা, যারা কিনা বৈধ-অবৈধ যেকোনো উপায়ে অনুমতিপত্র জোগাড় করতে ইচ্ছুক। আবার এটি জোগাড় করে দেওয়া নিয়ে কালোবাজারে চলছে রমরমা ব্যবসা। শুধু অর্থই নয়, সেই সঙ্গে উঁচু পর্যায়ের দহরম-মহরম ছাড়া এ অনুমতিপত্র জোগাড় করা মোটামুটি অসম্ভব। কাসাব্ল্যাঙ্কায় জনপ্রিয় ক্যাফে চালায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত রিক ব্লেইন। ঘটনাক্রমে ট্রানজিটের দুটো কাগজ পায় ব্লেইন। এই শহরেই সে আবিষ্কার করে সাবেক প্রেমিকা ইলসাকে। ইলসার স্বামী লাজলো চেকেস্লোভাকিয়ার বিদ্রোহী নেতা, জার্মানরা যাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। ইলসা জানে, কেবল ব্লেইনই সাহায্য করতে পারবে তাদের। ঈর্ষাকাতর ব্লেইন কি সাহায্য করবে? সে কি ছিনিয়ে নেবে তাঁর ভালোবাসাকে, নাকি পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে তাকে। প্রেমিকার স্বামীর ব্যাপারে বা কি পদক্ষেপ নেবে সে? এ উত্তরগুলো পেতে আপনাকে দেখতে হবে সিনেমাটি। ১৯৪২ সালে মুক্তি পাওয়া এ সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন মাইকেল কার্টিজ। এতে অভিনয় করেছেন হামফ্রি বোগার্ট, ইনগ্রিড বার্গম্যান প্রমুখ। ছবিটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হিসেবে গণ্য করা হয়।

গন উইথ দ্য উইন্ড
১৯৩৯ সালের ছবি। গৃহযুদ্ধ চলাকালীন জর্জিয়ার এক তুলা বাগানের প্রেক্ষাপটে এ ছবির গল্প গড়ে উঠেছে। খামার মালিকের চঞ্চল কন্যা স্কারলেট ভালোবাসে এসলে উইলকেসকে। ওদিকে এসলের সঙ্গে মেলানি হেমিল্টনের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। এসলের কাছে প্রশ্রয় না পেয়ে স্কারলেট নজর দেয় রেথ বাটলারের দিকে।  দুরন্ত রেথ বিয়েতে আগ্রহী নয়। এক রকম জেদের বশেই স্কারলেট অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে। তবুও এসলের প্রতি তার টান যায় না। স্কারলেট দুটি বিয়ে করেও সুখী হতে পারে না। যুদ্ধের দামামায় সে রেথকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়ে যায়। রেথও শেষ পর্যন্ত তার কাছে ধরা দেয় না। গৃহযুদ্ধ আর স্কারলেটের অস্থিরতা পাশাপাশি চলে। নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছেও স্কারলেট দেখে তার বাবার বাড়ি-ঘর সব ভেঙে গেছে। খামারের একবিন্দু অংশও অবশিষ্ট নেই। ভিক্টর ফ্লেমিং পরিচালিত এ সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে মার্গারেট মিচেলের লেখা একই নামের উপন্যাস থেকে। ১০৩৭ পৃষ্ঠার ঢাউস উপন্যাস ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে। এ উপন্যাস পুলিৎজার পুরস্কারও পায়। প্রযোজক ডেভিড ও সেলজনিক উপন্যাস ছাপা হওয়ার পর পরই লেখকের কাছ থেকে এর চলচ্চিত্র কিনে নেন ৫০ হাজার ডলারে। তখন পর্যন্ত এটিই ছিল কোনো উপন্যাসের সর্বোচ্চ দাম। প্রায় ৫০ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এ ছবি ১৯৩৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর আটলান্টায় মুক্তি পায়। মুক্তির আগে ছবির প্রচারণা চলে তিন বছর ধরে। মুক্তি পাওয়ার পর শুধু হলিউডে নয়, সারা বিশ্বেই এ ছবি একটি ইতিহাস হয়ে ওঠে। অস্কারে ১৩ নমিনেশন ও ১০টি পুরস্কার পায় এ ছবি।

রোমান হলিডে

রাজকুমারী অ্যান বেরিয়েছেন ইউরোপ ভ্রমণে। ছুটিতেও শান্তি নেই। সব সময় নিরাপত্তারক্ষীদের বর্মের আড়ালে থাকলে কি আর ছুটি কাটানো যায়? এক রাতে হোটেল ছেড়ে পালিয়ে গেল অ্যান। তার সঙ্গে দেখা হলো রোমে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে আসা মার্কিন সাংবাদিক জোয়ের। অ্যান তখন ঘুমিয়ে ছিল বেঞ্চিতে। জো নিজের ঘরে নিয়ে এলো অ্যানকে। দু’জনের মনের কোণে উঁকি দিল প্রেমসূর্য।  জো আবিষ্কার করল, অ্যান আর কেউ নয়, মহামান্য রাজকন্যা! এমনই এক গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমা ‘রোমান হলিডে’। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি পরিচালনা করেছেন উইলিয়াম ওয়াইলার। এ সিনেমাটি চলচ্চিত্রপ্রেমীর কাছে ভালোবাসার ছবি, আবেগের নাম। চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের রায়ে ধ্রুপদি সিনেমা। এ সিনেমার শেষ দৃশ্য বুকের মধ্যে যেমন হাহাকার জাগায়, মন খারাপ করিয়ে দেয়। অড্র্রে হেপবার্ন ও গ্রেগরি পেক অভিনীত ‘রোমান হলিডে’ তিনটি অস্কারসহ, গোল্ডেন গ্লোব ও আমেরিকান রাইটার্স গিল্ডের পুরস্কারও পায়। এ ছাড়াও আরও অনেক পুরস্কার অর্জন করে সিনেমাটি। এছাড়াও অনেক পুরস্কারের জন্যে নমিনেশনও পায়। হয়তো এত অর্জন বলেই সিনেমাটি নিয়ে কাটাছেঁড়াও কম করেননি সুশীল সমাজ। বেলজিয়ান অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন এ ছবির মাধ্যমে হলিউড এবং সারাবিশ্বের নজর কাড়েন। এর আগে রেইনি ডে ইন প্যারাডাইস জাংশন ছবিতে তিনি অভিনয় করলেও এটিই তাঁর প্রথম বড় চরিত্র। শুধু কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগই নয়, এ ছবির কল্যাণে তিনি অস্কার, নিউইয়র্ক ফিল্ম ক্রিটিক সার্কেল এবং বাফটায় সেরা অভিনেত্রীর ক্যাটেগরিতে পুরস্কার জেতেন। গ্রেগরি প্যাক এবং অড্রে হেপবার্ন দু’জনেই চেয়েছিলেন এ ছবির সিক্যুয়াল তৈরি হোক। ১৯৭০ সালে রানী অ্যানের মেয়ে এবং লেখক জোর ছেলেকে নিয়ে একটা গল্পও তৈরি করা হয়। শেষ পর্যন্ত সে ছবি আলোর মুখ দেখেনি। রোমান হলিডে সিনেমার পরে আরও অনেক সিনেমা হয়েছে কাছাকাছি কাহিনি নিয়ে। মেকিং, গল্পসহ জনপ্রিয়তায় এর ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারেনি একটিও। বিশেষ করে ১৯৪০ সালে হার হাইনেস অ্যান্ড দ্য বেলবয় এবং ১৯৪২ সালে প্রিন্সে ও’ রুকে উল্লেখযোগ্য। যত কথাই হোক না কেন, অসাধারণ সিনেমা সবসময়ে অসাধারণই থেকে যাবে।

ওয়েস্ট সাইড স্টোরি

শেক্সপিয়ারের অমর সৃষ্টি রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট-অনুপ্রাণিত এ ছবির গল্প। নিউইয়র্ক শহরে রাস্তার দুই মাস্তান দলের মধ্যে মহাবিরোধ। জেটস বনাম শার্কস একে অপরের ছায়াও সহ্য করতে নারাজ। দুই শত্রুগোষ্ঠীর দুই তরুণ-তরুণীর মধ্যে অলৌকিক প্রেম বাসা বাঁধে। জেটস দলের নেতা টনি প্রেমে পড়ে শার্কস দলনেতা বার্নার্ডোর বোন মারিয়ার। কী ভবিষ্যৎ এই প্রেমের? মিউজিক্যাল ধাঁচের এ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬১ সালে। ছবির পরিচালক রবার্ট ওয়াইজ ও জেরম রবিনস।

অ্যান অ্যাফেয়ার টু রিমেম্বার

নিকি হচ্ছে ‘প্লেবয়’, প্রেম তার কাছে ছেলেখেলাই। ইউরোপ থেকে নিউইয়র্কের জাহাজে করে যাওয়ার সময় নিকের সঙ্গে পরিচয় টেরির। দু’জনের মধ্যে হয়ে গেল প্রেম। কথা ছিল ছয় মাস পর এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ছাদে আবার দেখা হবে দু’জনের। দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে টেরি যেতে পারল না নির্দিষ্ট দিনে। অপেক্ষা করে ভাঙা মন নিয়ে ফিরে এলো নিকি। ভাবল, হয়তো টেরি সত্যিই তাকে ভালোবাসেনি। হয়তো সে বিয়েথাও করে ফেলেছে। কখনোই কি দেখা হবে না নিকি-টেরির? পরিচালনা করেছেন লিও ম্যাকক্যারি। ১৯৫৭ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন ক্যারি গ্র্যান্ট এবং ডেবরা কের। 

দ্য ওয়ে উই ওয়্যার

কেটি আর হাবেল পড়ত একই কলেজে। দু’জনের জীবনদর্শন একেবারে আলাদা। কেটি মনেপ্রাণে সাম্যবাদী। স্পেনের গৃহযুদ্ধ কিংবা ইউরোপে হিটলারের উন্মেষ কোনোটাই সে ভালো চোখে দেখে না। কঠোর পরিশ্রম করে তাকে খরচ মেটাতে হয় পড়াশোনার। হাবেল খেলাধুলা নিয়ে মেতে থাকে। রাজনীতির ধার ধারে না। দুই ভিন্ন জগতের দুই বাসিন্দার দেখা হয় বহু বছর পর। পরিচালক সিডনি পোলাক। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭৩ সালে।

সিটি লাইটস

পথের ধারে ফুল বেচে অন্ধ এক মেয়ে। তার ফুল কিনতে গিয়ে এক ভবঘুরে আবিষ্কার করে, মেয়েটি নিজেই সদ্য ফোটা নিষ্পাপ এক ফুল যেন। মেয়েটার প্রেমে পড়ে যায় সেই হতদরিদ্র ভবঘুরে। মেয়েটি ভাবে, ছেলেটা বুঝি অনেক ধনী পরিবারের কেউ। ভবঘুরেটি চায়, মেয়েটি ফিরে পাক দৃষ্টি। এর জন্য চাই অনেক টাকা। সেই টাকা জোগাড়ের চেষ্টায় নামে ভবঘুরেটি। এমনকি এর জন্য জেলেও যেতে হয়। মেয়েটি চোখের দৃষ্টি ফিরে পায়। আবিষ্কার করে, তাঁর স্বপ্নের রাজপুত্র আসলে হতদরিদ্র একজন। চার্লি চ্যাপলিনের সেরা সৃষ্টিগুলোর একটি। ১৯৩১ সালে মুক্তি পাওয়া এ ছবিটি নির্বাক, কিন্তু বাঙময়!

টাইটানিক

মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিওনার্দো ডিকাপ্রিও এবং কেট উইন্সলেট। নর্থ আটলান্টিক সমুদ্রের বুকে সৃষ্টি একটি মানবিক প্রেম এবং তার করণ সমাপ্তি নিয়ে তৈরি টাইটানিক ছবিটি। ১৯৯৭ সালে নির্মিত একটি ট্র্যাজেডিক প্রেমকাহিনি টাইটানিক। বিপুল জনপ্রিয়তার সঙ্গে এই ছবিটি অস্কার জয় করে।

প্রিটি ওম্যান

মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিচার্ড গিয়ার এবং জুলিয়া রবার্ট। ভালোবাসা যেকোনো সময় মনের কোণে এসে উঁকি দিতে পারে। প্রিটি ওম্যান ছবিতে এক সম্পদশালী পুরুষের কাছে তাই প্রেম হয়ে এসেছিল বন্ধনহীন প্রেমহীন এক নিশীথচারিণী। ১৯৯০ সালে নির্মিত ভীষণ সাবলীল ও সুন্দর এক প্রেমের ছবি প্রিটি ওম্যান।

রোমিও জুলিয়েট

বিশ্ববিখ্যাত লেখক উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের কালজয়ী ট্র্যাজেডি গল্প অবলম্বনে ১৯৯৬ সালে নির্মিত হয় রোমিও জুলিয়েট। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিওনার্দো ডিকাপ্রিও এবং ক্লেয়ার ডেনিস। এর আগেও অনেকবার এ প্রেমকাহিনি নিয়ে ছবি নির্মিত হয়েছে। দুটি ভিন্ন পরিবারের পূর্ববর্তী রেষারেষি এবং আভিজাত্যের অহংকারকে পেছনে ফেলে দু’জন মানুষ প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে যায়। নানা রকম টানাপোড়েনের পর তাদের বিয়ে হয় এবং তথ্যগত ভুলের কারণে জীবনে একসময় নেমে আসে প্রেম উপাখ্যানের ট্র্যাজেডি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ম ন হল ড ন র ম ত হয় চলচ চ ত র উপন য স ও অন ক ব ল ইন পর চ ল র জন য ইউর প জনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিষ্ঠার ৮ বছরেও নিজস্ব ভবন পায়নি ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড 

ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর এবং জামালপুর চার জেলা নিয়ে ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। প্রতিষ্ঠার ৮ বছর পার হলেও শিক্ষা বোর্ডটি এখনও পায়নি নিজস্ব ভবন। বর্তমানে নগরীর কাঠগোলায় পৃথক দু’টি ভাড়া ভবনে চলছে শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম। শিক্ষা উপকরণ রাখার জন্য আরও তিনিটি আলাদা ভবন ভাড়া নেয়া হলেও এগুলোর অবস্থাও নাজুক। 

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ভবন ১ ও ২ এর মধ্যবর্তী দূরত্ব দুই কিলোমিটার। আবার গোডাউন গুলোর অবস্থানও নগরীর ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। এতে দুই অফিস ও গোডাউনগুলোতে কাজ করতে বেগ পোহাতে হচ্ছে কর্মকর্তা কর্মচারীদের। 

তাছাড়া জনবল সংকটেও ধুকছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। এখন পর্যন্ত স্বায়ত্তশাসিত এ প্রতিষ্ঠানটির নির্দিষ্ট কোনো অর্গানোগ্রাম নেই। ১২২ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি চলছে মাত্র ২২ জন কর্মকর্তা ও ১৯ জন কর্মচারী দিয়ে। স্বল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে চার জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কার্যক্রম পরিচালনা করতে খেতে হচ্ছে তাদের। 

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের কাঠগোলা বাজারে অবস্থিত ভবন ১ এ কার্যক্রম চলে চেয়ারম্যান, সচিব, হিসাব ও আই টি শাখার। এই ভবনের নিচ তলায় গাদাগাদি করে থাকেন আনসার সদস্যরা। আর ভবন ২ এ আছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর, স্কুল কলেজ পরিদর্শন শাখা। 

বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দুটি মূল ভবন ও তিনটি গোডাউন বাবদ প্রতিমাসে ৭ লাখ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। শিক্ষা বোর্ডে নিজস্ব ভবন থাকলে বছরে কোটি টাকা ভাড়া বেঁচে যেত সরকারের। 

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. শহিদুল্লাহ যোগদান করেছেন চলতি বছরের জানুয়ারিতে। তিনি সমকালকে জানান, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের ভবন তৈরির জন্য চারটি জমি প্রাথমিকভাবে দেখা হয়েছে। এরমধ্যে রহমতপুর বাইপাস এলাকায় ১.৯৫ একরের একটি জমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ময়মনসিংহের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে ভিজিট করা হয়েছে। 

পরে প্রতি ফ্লোরে ১০ হাজার স্কয়ার ফিটের ১০ তলা ভবনের চাহিদা দিয়ে শিক্ষা প্রকৌশলে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আট বছরে কেন নিজস্ব ভবন হয়নি শিক্ষা বোর্ডের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমি এ বছরই বোর্ডে যোগদান করেছি। আগে জমি কেনা ও  ভবনের কাজ কেন হয়নি তা আগের চেয়ারম্যানরা বলতে পারবেন। 

সরেজমিন দেখা যায়, ভবনে ১ ও ২ এ ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা পরীক্ষার খাতা ও আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র নিতে এসে ভিড় জমাচ্ছেন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা এই ভবন থেকে ওই ভবনে বারবার যাতায়াত করছেন। দুই ভবনের দূরত্ব ২ কিলোমিটার এবং গোডাউন গুলো আরও দূরত্বে অবস্থিত হওয়ায় এগুলো সংগ্রহ করতে তাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। 

শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, দুই ভবন ও গোডাউনে দৌড়ঝাঁপ করে তাদের কাজের গতি কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থায়ী বিল্ডিং জরুরী হয়ে পড়েছে। এছাড়া তাদেরকে অফিসের কাজ সামলে বিভিন্ন জেলায় জেলায় গিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে হয়। 

এসব সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন অরাজক পরিস্থিতি সামাল দিতে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর ড. দিদারুল ইসলামের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন ভবনে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছেন তারা।

জানা যায়, প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে আইটি শাখার কাজ স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে করতে পারছে না ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। এক্ষেত্রে ফলাফল তৈরি ও রেজিস্ট্রেশন করার জন্য যশোর শিক্ষা বোর্ডের সহায়তা নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। 

বোর্ড চেয়ারম্যান আরও জানান, আমরা চেয়েছিলাম এই পরিস্থিতিতে মূল দুটি ভবনকে একীভূত করতে। ভবন এক ছেড়ে দিয়ে ভবন ২ এর কাছাকাছি একটি বাড়ি ভাড়া নিতে পারলে বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ও সেবা গ্রহীতাদের অনেকটা হয়রানি মুক্ত করা যেত। কিন্তু এক্ষেত্রে এক নম্বর ভবনের থাকা আইটি শাখাকে ট্রান্সফার করে নতুন ভবনে নিয়ে যেতে অনেক টাকা খরচ হবে। এতে সরকার ব্যাপক পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এই চিন্তা করে নতুন কোন বাড়িভাড়াও নিতে পারছি না। 

জানা যায়, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে সরকারিভাবে বরাদ্দ একটিমাত্র গাড়ি বোর্ড চেয়ারম্যান ব্যবহার করছেন। বৃহৎ পরিসরে পরিচালিত শিক্ষা বোর্ডের জন্য আরও দুইটি গাড়ি সরকারের কাছে চাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ময়মনসিংহ থেকে কর্মকর্তারা নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুর গেলে ভাড়া করা গাড়িতে তাদের যেতে হয়। 

তাছাড়া একটি ভবন থেকে আরেকটি ভবনে কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য পরিবহনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। 

নিজস্ব ভবন ও পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে সমকালের সাথে কথা হয় বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর সৈয়দ আখতারুজ্জামানের সাথে। তিনি জানান, ইতিপূর্বে ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার শিক্ষা বোর্ডকে ৩ একর জায়গা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সাবেক বোর্ড চেয়ারম্যান অতিরিক্ত অহংকার করে এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বর্তমানে জমি কিনে নিজস্ব ভবন তৈরি করার মত পর্যাপ্ত টাকা বোর্ডের হাতে নেই। 

তবে বর্তমান চেয়ারম্যান নিজস্ব জমি ও ভবন তৈরি করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। সরকারের কাছে প্রকল্পের মাধ্যমে জমি কিনে ভবন তৈরি করে দেয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দ্রুত সময়ের ভিতরেই নিজস্ব ভবনে শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম চালাতে পারব বলে আশা করছি। 

চলতি বছরের ১৫ মার্চ ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের জমি কেনার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে সাইট ভিজিটে যান ময়মনসিংহ শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ আলী। তিনি জানান, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড একটা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। নগরের বাইপাস মোড়ে ১.৯৫ একর জমি কেনার জন্য তারা আমাদেরকে চিঠি দেয়। সে অনুযায়ী জমি পরিদর্শন করে ২৩ মার্চ প্রধান প্রকৌশলী বরাবর আমি একটি রিপোর্ট পাঠাই। 

এখন শিক্ষা প্রকৌশল এবং ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেই জমি কেনার প্রক্রিয়া শুরু হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ