আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিবসেই বিটিভিতে প্রচারের জন্য নির্মিত হয়েছে বিশেষ গানের অনুষ্ঠান ‘ভাষার গান’। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার ইংরেচি সংবাদের পর প্রচার হবে অনুষ্ঠানটি।

এই অনুষ্ঠানেই গান গেয়েছেন রিজিয়া পারভীন ও দিঠি আনোয়ার। রিজিয়া পারভীন গেয়েছেন ‘আমার একুশ সূর্য ঝরা দিন’। গানটি লিখেছেন খোশনূর আলমগীর, সুর সঙ্গীত করেছেন মোহাম্মদ ইসহাক। দিঠির গান ‘বর্ণমালা আমার বর্ণমালা’ লিখেছেন মুনসী ওয়াদুদ, সুর সঙ্গীত করেছেন মোহাম্মদ ইসহাক। ‘ভাষার গান’ অনুষ্ঠানটির গ্রন্থনা ও গবেষনা করেছেন পিয়াল হাসান। পিয়াল হাসান নিজেও একটি গান গেয়েছেন। বিটিভির নিজস্ব প্রযোজনায় নির্মিত এই ‘ভাষার গান’ অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে ভীষণ উচ্ছ্বসিত রিজিয়া পারভীন।

রিজিয়া পারভীন বলেন,‘অনেকদিন পর বিটিভিতে একুশে ফেব্রুয়ারির কোনো অনুষ্ঠানে গান গাইলাম। তাও আবার মৌলিক গান। আরো ভালোলাগার বিষয় হলো দীর্ঘদিন পর শ্রদ্ধেয় খোশনূর আপার লেখা কোনো গান গাইলাম। গানের কথা ভীষণ ভীষণ ভালোলেগেছে আমার। ইসহাক ভাই সুরটাও চমৎকার করেছেন। বিটিভির প্রত্যেকের আন্তরিকতা ভালোলেগেছে। যেন নতুন উদ্যমে কাজ করছেন তারা সবাই। আশা করছি গানটি সবারই ভালোলাগবে।’

অনুষ্ঠানে ‘বর্ণমালা আমার বর্ণমালা’ গানটি গাওয়া প্রসঙ্গে দিঠি আনোয়ার বলেন,‘ ভাষার গান আয়োজনটি অনেকটাই ব্যতিক্রম। কোনো উপস্থাপক নেই। শিল্পীর গান পরিবেশনের পূর্বে গীতিকার গানটি প্রসঙ্গে কিছু কথা বলবেন। আমার গানটির কথা ও সুর আমার কাছে ভীষণ ভালোলেগেছে। আশা করছি শ্রোতাদেরও ভালোলাগবে।’ 
এদিকে দিঠি জানান, এই মাসজুড়েই তার ভীষণ ব্যস্ততা। আগামীকাল মাইটিভিতে ভাষার মাসের স্পেশাল লাইভ শো’তে ভাষার গান ও তাঁর বাবা গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা গান পরিবেশন করবেন। আবার ২১ ফেব্রুয়ারি গ্লোবাল টিভিতে রাত ১০ টা ৩০ মিনিটে তার বাবাকে ট্রিবিউট করেই আয়োজিত অনুষ্ঠানে গান গাইবেন, সঙ্গে থাকবেন পলাশ ও ইমন সাহা।

২২ ফেব্রুয়ারি তার বাবারই জন্মদিনে সকালে চ্যানেল আইতে ‘গান দিয়ে শুরু’ অনুষ্ঠানে গান গাইবেন দিঠি ও মোমিন বিশ্বাস। একইদিনে রাত নয়টায় এনিগমা টিভিতে তার বাবাকে স্মরণ করে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গান গাইবেন। এছাড়া ২৮ ফেব্রুুয়ারিতেও তার বাবাকে নিয়ে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠান ‘ছুটির রাতে লাইভ’ (যমুনা টিভিতে) অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন দিঠি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা

জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।

এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।

আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?

উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’

আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ