বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে সবাই কমবেশি অবগত। অনেক আলোচনা হয়েছে। এমনকি তা নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একধরনের ঐকমত্যও আছে। কিন্তু শেষমেশ কোনো সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় না।

দেশে নীতিপ্রণেতা, পরামর্শক ও বাস্তবায়নকারীদের মধ্যে একধরনের দূরত্ব আছে। এমনকি বিদ্যায়তনের মানুষের কথা রাজনীতিবিদেরা মেনে নিলেও কিছু হয় না। তাতে শেষমেশ দেখা যায়, আমলাতন্ত্রের দোরগোড়ায় গিয়ে সব সংস্কার আটকে যায়।

অর্থনীবিদ সেলিম জাহানের দুটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আজ বৃহস্পতিবার বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। বাঙলার পাঠশালা আয়োজিত এই অনুষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। বই দুটির মধ্যে জাগৃতি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ এবং মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘বাংলাদেশ: কনটেমপোরারি ডেভেলপমেন্ট ইস্যুস’।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। সভাপতিত্ব করেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম। সঞ্চালনা করেন বাঙলার পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ জাভেদ। আর বক্তব্য দেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন, সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন প্রমুখ।

রেহমান সোবহান বলেন,‘ দেশের সমস্যা কী এবং তার সমাধনই-ই বা কী, তা নিয়ে এক ধরনের ঐকমত্য আছে। আমরা জানি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আরও বিনিয়োগ করা দরকার। কিন্তু শেষমেশ কোনোটি হয় না।’ কেন বারবার অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায় না, এখন তার ভেতরের গল্প তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।

পৃথিবীর অনেক দেশে সহিংসতা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে এবং তারপর তারা অনেকেই আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সেলিম জাহান বৈশ্বিক পরিসরে কাজ করেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে রওনক জাহান আহ্বান জানান, তিনি যেন সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের প্রসঙ্গে লেখেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে আবার কার্যকর করা যায়, তা বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার আলোকে লেখার আহ্বান জানান।

সংস্কার প্রসঙ্গে সব সরকারই বিশেষজ্ঞদের কথা অগ্রাহ্য করেছে বলে অভিযোগ করেন মাহ্‌ফুজ আনাম। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২৯টি টাস্কফোর্স গঠনে রেহমান সোবহান যুক্ত ছিলেন। টাস্কফোর্সগুলোর উদ্দেশ্য ছিল অর্থনীতি ও প্রশাসনপ্রক্রিয়ার নানা সমস্যার সমাধান করা। টাস্কফোর্সগুলোয় ছিলেন সেই সময়কার দেশের ২৫৫ জন সেরা পেশাদার ব্যক্তি। কিন্তু সেই টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন পরবর্তী অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সম্ভবত পড়েও দেখেননি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান চলমান সংস্কারের গতি-প্রকৃতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, সংস্কারের চাপ দেওয়ার জন্য সমাজে নানা রকম গোষ্ঠী আছে, বিষয়টি সে রকম নয়। বরং নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠী ছাড়া সমাজে আরও কেউ সংস্কার চায়, তেমনটা মনে হচ্ছে না।

সংস্কার প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, এ বিষয়ে বৃহত্তর ঐকমত্য দরকার, তা না হলে কোনো উদ্যোগই আলোর মুখ দেখবে না। এর আগে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আমলেও সংস্কার নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিছু কাজ সেই সরকার করেছিল; কিন্তু শেষমেশ তার কিছুই টেকেনি।

বই দুটি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সেলিম জাহান বলেন, এগুলো গবেষণাধর্মী বই নয়। একদম সাধারণ মানুষ যেন পড়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির হালচাল বুঝতে পারেন, সে উদ্দেশ্যে এই বই দুটি লেখা।

আলোচনায় প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন বলেন, বাংলোদেশের অর্থনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বইটি সাংবাদিকদের পড়া উচিত। উন্নয়ন ও অগ্রগতির মধ্যে কী ফারাক, তা বোঝার জন্য এই বই পড়া জরুরি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বন্ধু হওয়ার সুযোগ দিন, শত্রু নয়

ফেসবুক অফিসিয়াল বা দাপ্তরিক কোনো বিষয় নয়। এখানে বন্ধু তালিকা থাকা সবাই সবার ‘বন্ধু’। বাপ ছেলের বন্ধু, মা মেয়ের বন্ধু, শিক্ষক শিক্ষার্থীর বন্ধু, বস অধস্তনদের বন্ধু। যেহেতু সবাই সবার বন্ধু, তাই ফেসবুকের সব পোস্ট, কমেন্ট, রিয়েকশন, আলোচনা সবই বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত। এখানে বন্ধুর ভালো খবরে ইতিবাচক রিয়েক্ট বা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা যায়। খারাপ খবরে স্যাড বা দুঃখজনক প্রতিক্রিয়া– এমনকি সামাজিক কোনো অসংগতির খবরে অ্যাংরি বা রাগ প্রকাশ রিয়েকশন দিতে পারে।
তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হচ্ছে মাঝেমধ্যে আমরা বন্ধুত্বের কথাটা মাথায় রাখি না। ফেসবুক যে একটা অদাপ্তরিক পরিসর, তা ভুলে যাই। বন্ধু হয়ে বন্ধুকে আক্রমণ করে বসি, এমনকি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করে বসি; যা কোনোভাবেই ফেসবুকের স্পিরিটের সঙ্গে যায় না। যার ফলে ব্যক্তি সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফেসবুকে রাজনৈতিক, ধর্মীয় প্রচারণাও হয়ে থাকে, মাঝেমধ্যে গুজবও ছড়ানো হয়ে থাকে, যা সহিংসতায়ও রূপ নেয়। এ সমস্যা থেকে উত্তরণ খুবই সহজ। ফেসবুককে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে ব্যবহার করতে হবে। অফিসিয়াল ভাবা যাবে না। আক্রমণাত্মক হওয়া যাবে না। গুজব ছড়ানো যাবে না। সর্বোপরি সহিংস হওয়া যাবে না।

ধরেন, কেউ একজন (ফেসবুকে আপনার বন্ধু) তাঁর ওয়ালে একটা পোস্ট দিল, তখন আপনি কী কী করতে পারবেন– ভালো লাগলে লাইক দেবেন। বেশি ভালো লাগলে লাভ দেবেন। ফানি পোস্ট হলে হাহা রিয়েক্ট দেবেন। খারাপ সংবাদ হলে স্যাড রিয়েক্ট দেবেন। অসংগতি মনে হলে অ্যাংরি রিয়েক্ট দেবেন। যৌক্তিক কমেন্ট করতে পারেন।
কিন্তু কোনোভাবেই এমন রিয়েকশন বা কমেন্ট করা যাবে না, যাতে বিতর্ক সৃষ্টি হয় বা ফেসবুক বন্ধু মনে আঘাত পায়। কারণ তিনি আপনার বন্ধু। ধরেন কোনোভাবেই আপনি তাঁর পোস্টের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না বা শালীন ভাষায় প্রতিবাদ করেও শান্তি পাচ্ছেন না, তাহলে মেসেঞ্জারে চলে যান, ব্যক্তিগতভাবে আপনার রাগ প্রকাশ করুন।
 

চাইলে আপনি তাঁকে ‘আনফ্রেন্ড’ করতে পারেন। এতে অবশ্য আপনি চাইলে তাঁর প্রোফাইলে (যদি পাবলিক থাকে) ঢুকে তাঁর পোস্ট দেখতে পারবেন, এমনকি তাঁকে পুনরায় বন্ধুর অনুরোধ পাঠাতে পারবেন। তাঁকে ব্লক করে দিতে পারেন, তাহলে আর তিনি বা আপনি কেউ কাউকে নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না।
সর্বশেষ আপনি চাইলে তাঁর পোস্টটি সম্পর্কে ফেসবুককে রিপোর্ট করতে পারবেন। তখন অথরিটি যাচাই করে ওই পোস্টটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

একই কথা প্রযোজ্য আপনার ফেসবুক পোস্ট নিয়ে। তখন অন্যদের রিয়েকশন ও কমেন্টের জবাবে আপনি কী করতে পারেন– কেউ যদি পজিটিভ রিয়েকশন ও কমেন্ট করেন, তাহলে আপনি তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে পারেন। চাইলে কনভারসেশন চালিয়ে যেতে পারেন যতক্ষণ পর্যন্ত দু’জনেই এনজয় করেন। কিন্তু কেউ যদি নেগেটিভ রিয়েকশন বা কমেন্ট করেন, যা আপনার মনঃপূত নয়, মনে কষ্ট পাচ্ছেন, আপনি অপমানিত ফিল করেন বা মানসিক যন্ত্রণায় ভোগেন, তখন আপনি সম্ভব হলে এড়িয়ে যান। শালীন ভাষায় কমেন্টের রিপ্লাই দিয়ে আপনার অনুভূতি তাঁকে জানান, তিনি যদি পজিটিভলি নেন, তাহলে আপনিও মেনে নিন। কিন্তু তিনি যদি তাঁর কথায় অবিচল থাকেন বা আরও অ্যাগ্রেসিভ হন, তাহলে আপনি তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে মেসেঞ্জারে নক করে আলোচনা করতে পারেন, সমাধান না হলে তাঁর কমেন্টটি ডিলিট করে দিতে পারেন, যেহেতু এটি আপনার ফেসবুক ওয়াল।

আরেকটা বিষয় ফেসবুক সুযোগ রেখেছে, সেটা হচ্ছে প্রাইভেসি সেটিংস। আপনি চাইলে কনটেন্ট অনুসারে বিতর্ক এড়ানোর জন্য আপনি আপনার পোস্টটি পাবলিক না করে শুধু ফ্রেন্ডদের জন্য, এমনকি শুধু নির্দিষ্ট কোনো একজন/কয়েকজন ফ্রেন্ডের জন্যও সেট করে দিতে পারেন। তাতে অন্তত বিতর্ক হলেও নিজেদের মধ্যেই হবে, পাবলিকলি নয়।
এতেও যদি আপনি সন্তুষ্ট না হন, তাহলে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ ভালোভাবে জেনে নিয়ে যা করার নিজ দায়িত্বে করেন। যদিও আমার লেখার শিরোনামেই বলেছি, ব্যক্তিগত পর্যায়ে ফেসবুক ব্যবহার নিয়ে এই লেখা, তবুও পাবলিকলি ফেসবুক ব্যবহার নিয়ে দু’একটা কথা না বললেই নয়।

ফেসবুক এখন রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক, সামাজিক ও আরও নানা কাজে ব্যবহার হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ব্যবহারের নর্মসও বিভিন্ন রকম হবে। উদাহরণস্বরূপ রাজনৈতিক নেতাদের অনেকের পাবলিক প্রোফাইল ফেসবুক আছে, সেখানে তারা অনেক রাজনৈতিক পোস্ট দেন। সেসব পোস্টে লাইক, লাভ রিয়েক্ট যেমন পড়ে, হাহা, অ্যাংরি রিয়েক্টও অনেকেই দেন। ভালো ভালো কমেন্ট যেমন থাকে, গালিগালাজও অনেক ক্ষেত্রে মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে নর্মস কেমন হওয়া উচিত?
দু’জন অভিনেতা বা সেলিব্রিটির ফ্যানদের মধ্যে মাঝেমধ্যে ফেসবুকে কাদা ছোড়াছুড়ি হতেও দেখা যায়। এ ক্ষেত্রেই বা নর্মস কী হবে?

অনলাইন ব্যবসার বড় একটি ফ্ল্যাটফর্ম ফেসবুক। সেখানেও ভালো প্রোডাক্টের বিষয়ে পজিটিভ মন্তব্য যেমন আছে, মাঝেমধ্যে প্রোডাক্ট নিয়ে সন্তুষ্ট না হয়ে অনেককে খেস্তিখেউড় করতেও দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে নর্মস কী হবে? ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া পোস্ট নিয়ে তো খুনাখুনি পর্যন্ত গড়ায়। যে কেউ তাঁর নিজের ধর্ম নিয়ে পোস্ট দিতেই পারেন, কিন্তু সেটা যাতে কোনোভাবেই অন্য ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত না করে, তা সর্বোতভাবেই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

সবশেষে আবারও বলতে হয়, ফেসবুক বা সামাজিকমাধ্যম অফিসিয়াল বিষয নয়। এখানে ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা সবাই সবার বন্ধু। তাই এমন কথা বলা যাবে না, যা বন্ধুকে কষ্ট দেয়, বন্ধুত্ব নষ্ট করে। একটা কথা আছে, তোমার শত্রুকে এক হাজার সুযোগ দাও বন্ধু হওয়ার, কিন্তু বন্ধুকে একটা সুযোগও দিও না শত্রু হওয়ার।

ড. মোহাম্মদ শামসুর রহমান: অধ্যাপক, মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েলি যুদ্ধযন্ত্রকে থামাইতেই হইবে
  • বন্ধু হওয়ার সুযোগ দিন, শত্রু নয়
  • রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা মঙ্গলবার আবার শুরু
  • নরসিংদীতে চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে কলেজছাত্র নিহত
  • বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে
  • চীনা পুতুল লাবুবু সারা বিশ্বে এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কেন
  • লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি
  • ইউনূস-তারেকের বৈঠক দেশের মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা, আশার আলো
  • ড. ইউনূস ও তারেকের বৈঠক জাতির জন্য স্বস্তির বার্তা: ১২ দলীয় জোট
  • ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার ও জুলাই সনদ