দেড় হাজার কর্মীকে নিয়ে নতুন পরিকল্পনা এফবিআই প্রধান ক্যাশ প্যাটেলের
Published: 22nd, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (এফবিআই) নতুন পরিচালক ক্যাশ প্যাটেল জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বলেছেন, তিনি সংস্থার এক হাজার কর্মীকে দেশের বিভিন্ন মাঠপর্যায়ের কার্যালয়ে সরিয়ে নিতে চান। এ ছাড়া আরও ৫০০ কর্মীকে আলাবামার হান্টসভিল এলাকায় এফবিআইয়ের একটি কার্যালয়ে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ক্যাশ প্যাটেলের আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি এসব কথা বলেন।
গতকাল শুক্রবার এফবিআইয়ের প্রধান হিসেবে হোয়াইট হাউসে শপথ নিয়েছেন ক্যাশ প্যাটেলে। এদিনই তিনি তাঁর পরিকল্পনার কথা জানান।
আরও পড়ুনএফবিআইয়ের প্রধান পদে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্যাশ প্যাটেলের নিয়োগ অনুমোদন২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এক বিবৃতিতে এফবিআই বলেছে, পরিচালক প্যাটেল মার্কিন জনগণের প্রতি তাঁর যে প্রতিশ্রুতি আছে, তা স্পষ্ট করেছেন। বলেছেন, এফবিআইয়ের সদস্যদের এমন হতে হবে যেন তাঁরা সহিংস অপরাধ মোকাবিলাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করেন। আর এই প্রতিশ্রুতি পূরণে একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তবে ওই বিবৃতিতে সুনির্দিষ্ট করে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় ক্যাশ প্যাটেল যে পরিকল্পনাগুলোর কথা বলেছেন, তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। এ ব্যাপারে যে সূত্র কথা বলেছেন, তিনি তাঁর নাম প্রকাশ করেননি।
গত বৃহস্পতিবার এফবিআইয়ের প্রধান হিসেবে ক্যাশ প্যাটেলের নিয়োগ অনুমোদন করে সিনেট। তাঁর পক্ষে ভোট দিয়েছে ৫১ জন আর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ৪৯ জন। নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির দুজন আইনপ্রণেতা প্যাটেলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। তাঁরা হলেন মেইন অঙ্গরাজ্যের সুসান কলিন্স এবং আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের লিসা মুরকৌস্কি।
শপথ অনুষ্ঠানে ক্যাশ প্যাটেলে বলেছেন, এফবিআইয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়াটা তাঁর জীবনের ‘সবচেয়ে সম্মানজনক বিষয়’।
গত মাসে এফবিআইয়ের একদল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে মার্কিন বিচার বিভাগ। এ ছাড়া ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে সংঘটিত দাঙ্গার ঘটনা তদন্তে অংশগ্রহণকারী কয়েক হাজার কর্মীর নাম প্রকাশেরও দাবি জানানো হয়েছে। এসব ঘটনায় এফবিআইয়ের অভ্যন্তরে অস্থিরতা চলছে। আর এর মধ্যেই সংস্থাটির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ক্যাশ প্যাটেল।
ডেমোক্র্যাটরা কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই এই নিয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন। তাঁদের আশঙ্কা, ক্যাশ প্যাটেল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুগত হিসেবে কাজ করবেন। তিনি ট্রাম্পের বিরোধীদের বিরুদ্ধে এফবিআইয়ের আইন প্রয়োগকারী ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন।
মনোনীত হওয়ার আগে ক্যাশ প্যাটেল বলেছিলেন, তিনি সরকার ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত ট্রাম্পবিরোধী ‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। আর সে প্রসঙ্গই এখন সামনে নিয়ে আসছেন ডেমোক্র্যাটরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বল ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে
আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।
এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।
ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন
সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’
এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টদেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।
ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।
আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে