ভোজ্যতেলের আমদানি কমাতে আশার আলো ‘বিনা সরিষা-১১’
Published: 22nd, February 2025 GMT
দেশের চাহিদার ৮০ ভাগ ভোজ্যতেল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। উচ্চ ফলনশীল সরিষা আবাদ করে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমানোর সম্ভাবনা জাগিয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)। পরমাণু শক্তির ব্যবহার করে বিনা উদ্ভাবন করেছে উচ্চ ফলনশীল সরিষার নতুন জাত ‘বিনা সরিষা-১১’।
বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিনা সরিষা-১১ জাতটির পডের (ফল দণ্ড) আকার দেশের অন্যান্য সরিষার জাতের তুলনায় অনেক বড়। স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন এ জাতের সরিষা অধিক ফলন দেয়। মাত্র ৮০ দিনে কৃষক ক্ষেত থেকে ফসল সংগ্রহ করতে পারেন।
বিনা’র গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণ প্রকল্পের অর্থায়নে ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামে বিনা সরিষা-১১-এর সঙ্গে বারি সরিষা-১৪ এবং স্থানীয় একটি জাতের সরিষার পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করা হয়। এতে দেখা যায়, বিনা-১১ সরিষা প্রতি হেক্টরে ১ হাজার ৯৫০ কেজি ফলন দিয়েছে। বারি সরিষা ফলেছে ১২৫০ কেজি স্থানীয় জাতে ফলন হয়েছে মাত্র ৬শ কেজি।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাজীপাড়া গ্রামের কৃষক নান্টু মোল্লা বলেন, ‘আমার জমিতে বিনা সরিষা-১১ ব্যাপক ফলন দিয়েছে। ক্ষেতে শুধু সরিষা আর সরিষা। আমার জীবনে এত সরিষা দেখিনি। আমার ক্ষেতের সরিষা দেখে অনেকেই এ জাতের সরিষা আবাদের আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’
বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.
বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৌরভ অধিকারী বলেন, ‘বিনা সরিষা-১১’ এর ১টি পডে ৪০টি সরিষা দানা ফলেছে। বারি সরিষা-১৪ তে ফলেছে ২০-২৫ টি দানা। স্থানীয় জাতের মধ্যে পাওয়া গেছে মাত্র ১০টি দানা। বিনা সরিষা-১১ জাতের দানা মোটা। এ সরিষায় ৪৪ শতাংশ তেল রয়েছে। ভালো পরিচর্যা করা গেলে এ জাতের সরিষা হেক্টরে ২ দশমিক ১ টন ফলন দিতে সক্ষম। সরিষার এ জাত ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমানোর হাতছানি দিচ্ছে।
বিনা’র গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মাহবুবুল আলম তরফদার বলেন, দেশে ভোজ্যতেলের মোট চাহিদার সিংহভাগই আমদানিনির্ভর। দেশে উৎপাদিত তেলের মধ্যে শীর্ষে সরিষা। এছাড়া সয়াবিন, তিল, বাদাম,সূর্যমুখীসহ দু-একটি অপ্রচলিত তেলবীজের চাষ হয় সামান্য। বোরো, আমন চাষের মাঝের সময়ে দেশের বড় অংশ জমি পতিত থাকে। এ পতিত জমি ব্যবহারসহ দেশে তেলবীজের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানিনির্ভরতা অর্ধেকে আনতে ৩ বছর মেয়াদি রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করছে সরকার। রোডম্যাপ বাস্তবায়নে এর মধ্যে বেশ কিছু তেলজাতীয়
ফসলের সঙ্গে সরিষার আবাদ ব্যাপকভাবে বাড়ানোর প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। এতে সুফলও মিলতে শুরু করেছে। এ বছর সারাদেশে ব্যাপকভাবে বেড়েছে সরিষার চাষাবাদ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপ-পরিচালক আ. কাদের সরদার বলেন, স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন বিনা সরিষা-১১ হেক্টরে ২ টনের বেশি ফলন দেয়। এ সরিষার আবাদ লাভজনক। সরিষা কেটে একই ক্ষেতে বোরো ধান আবাদ করা যায়। এছাড়া দুই ফসলি জমিতে বছরে তিনটি ফসল ফলে। এসব কারণে তেলের ঘাটতি পূরণে এ সরিষা আবাদ সম্প্রসারণ করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত ল র আমদ ন ভ জ যত ল র গ প লগঞ জ ফলন দ য়
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনে জোট গঠনে সতর্ক থাকার পরামর্শ হেফাজত আমিরের
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এমন কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করা যাবে না, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষেরা আগেই সতর্ক করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’–এ লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ।
ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলকে এক হওয়ার জন্য আগেও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো তেমন পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের স্বাধীনতার অখণ্ডতার জন্য এবং ধর্মীয় কৃষ্টির জন্য এক অশনিসংকেত। এ চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে কালো তুফান দেখা যাচ্ছে। কালো তুফানের সঙ্গে মোলাকাত নয়, মোকাবিলা করতে হবে। জনগণকে ওলামাদের নেতৃত্ব কবুল করতে হবে। তখনই তুফানকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আমলে পাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। জুলাই আন্দোলন ছিল ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সেই পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত উপেক্ষা করলে হাসিনার মতো পরিণতি হবে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলেম এবং ওলামারা।
১৫ দফা প্রস্তাবনা
সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।
১৫ দফার মধ্যে আছে—ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের চুক্তি বাতিল করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও শরিয়ার সীমারেখার আলোকে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।