ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠে সংসার গুছিয়ে বেরিয়ে পড়েন র‌্যাচেল কৌর, বিমানবন্দরে গিয়ে বিমানে ওঠেন অফিসের জন্য। অতঃপর কর্মদিবস শেষে সন্ধ্যা নাগাদ ফ্লাইটে করে ফিরে আসেন দুই সন্তানের কাছে, এটিই তাঁর প্রতিদিনের রুটিন। কর্মজীবন ও পরিবার—দুটোই সামলানোর অসাধারণ ক্ষমতার জন্য তিনি ‘সুপার কমিউটার’ নামেও পরিচিতি পেয়েছেন। তবে এর চেয়ে বড় পরিচয়, তিনি একজন ‘সুপারমম’।

র‍্যাচেল কৌর মালয়েশিয়ার বিমান কোম্পানি এয়ার এশিয়ার সহকারী অর্থ ব্যবস্থাপক, থাকেন পেনাংয়ে, কিন্তু কাজ করেন রাজধানী কুয়ালালামপুরে। শুরুর দিকে তিনি কাজের সুবিধার্থে কুয়ালালামপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে সপ্তাহান্তে বাড়ি ফিরতেন। কিন্তু সন্তানদের থেকে দূরে থাকার কারণে কাজে ঠিকঠাক মন বসাতে পারছিলেন না। সন্তানদের প্রতিদিনের জীবন, স্কুলের কার্যক্রম এবং ছোট ছোট মুহূর্ত মনে করে র‍্যাচেল বেশ কষ্ট পেতেন। সন্তানদের বেড়ে ওঠার সুন্দর মুহূর্তগুলো হারাতে চাননি। তাই একটা সাহসী পদক্ষেপ নেন। সিদ্ধান্ত নেন, পরিবারের সঙ্গে থাকার জন্য প্রতিদিন বিমানে করে অফিসে যাতায়াত করবেন। সপ্তাহে পাঁচ দিন বিমানে যাতায়াতের খরচ নিশ্চয়ই আকাশছোঁয়া। আদতে তা নয়। র‍্যাচেল বলেন, আগের তুলনায় তাঁর খরচ বরং অনেকটাই কমে গেছে। কুয়ালালামপুরে বাসা ভাড়া ও থাকা-খাওয়া বাবদ প্রতি মাসে ব্যয় করতেন ৪৭৪ ডলার বা ২ হাজার ১০৬ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত। আর এখন তাঁর মাসিক খরচ কমে হয়েছে ৩১৬ ডলার বা ১ হাজার ৩৯৬ রিঙ্গিত।

আরও পড়ুনমা–বাবার বিষণ্নতা যেভাবে সন্তানের জন্য ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনতে পারে২৭ নভেম্বর ২০২৪

যেখানে বেশির ভাগ মানুষ কর্মক্ষেত্রে পৌঁছানোর জন্য দীর্ঘ যানজট নিয়ে অভিযোগ করেন, সেখানে র‍্যাচেল দৈনিক ৭০০ কিলোমিটার আকাশপথ পাড়ি দেন এবং তিনি মনে করেন, সন্তানদের হাসিমুখের কাছে এটি কোনো কষ্টই নয়। এই রুটিন বজায় রাখতে শুধু শারীরিক সক্ষমতাই নয়, দরকার অসীম মানসিক শক্তির। র‍্যাচেলের জন্য এই যাত্রা ক্লান্তিকর হলেও মূল্যবান।

র‍্যাচেল দৈনিক ৭০০ কিলোমিটার আকাশপথ পাড়ি দেন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত

ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা  ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ