বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘আমাদের একটি বন্ধু সংগঠন নির্বাচনের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তারা ভাবছে নির্বাচন দিলেই ক্ষমতায় এসে যাবে। এত ব্যস্ততার কারণ জানতে চেয়ে তিনি বলেন, যাদের টাকা আর মাস্তান আছে এবং রাতের আঁধারে ভোট কেটে বাক্স ভর্তি করতে পারবে তারাই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর যেহেতু টাকা অথবা মাস্তান নেই, তাই নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়।’ 

বুধবার বরগুনা টাউন হল মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বরগুনা জেলা শাখার কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, এক শাসকের পতনের পর আরেকটি গ্রুপ হাট-বাজার ইজারা, মাদ্রাসা-স্কুল, মসজিদ কমিটি, বাস-ট্রাক স্ট্যান্ড সব দখল করে নিচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী সম্পৃক্ত নয়।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেকে জামায়াত ইসলামকে অপব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করছে। তারা বলতে চান, জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রের সবকিছু সংস্কারের আগে জাতীয় নির্বাচন চায় না। কিন্তু আমরা জামায়াতে ইসলামী সে কথা বলিনি। আমরা বলেছি- একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন সেটা শেষ করে নির্বাচন দিতে। বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন, নির্বাচন পদ্ধতি, সিভিল প্রশাসন, সংবিধানের কিছু অংশ এবং বিচার বিভাগসহ ৫-৬টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।

তিনি বলেন, বেশিরভাগ মানুষ ক্ষমতা পেলে আর ছাড়তে চায় না। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তাঁর জায়গায় চলে যেতে চান। এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা, সেনা প্রধান, উপদেষ্টা পরিষদসহ অনেকের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। কিন্তু ৫ আগস্টের বিপ্লবের পর অন্তত ৪টি প্রতি বিপ্লবের চেষ্টা করা হয়েছে। বারবার সরকারকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে আনা হচ্ছে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারে সে ব্যাপারে আমাদের সকলের সহযোগিতা করতে হবে।

আওয়ামী লীগের উদ্দেশে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‌‘শেখ হাসিনা যেখানের লোক সেখানেই চলে গেছেন। কিন্তু সেখানে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশে আসার স্বপ্ন দেখছেন। আর তার দলের কিছু লোক পুনরায় দেশে আনার চিন্তুা করছেন। কিন্তু তা আর বাস্তবায়ন হবে না। গত ১৫ বছরের দুঃশাসনের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তাদের (জামায়াতে ইসলাম) দলের সিনিয়র নেতাদের অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। মানুষের ভোটের অধিকার, বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল। এখন বস্তায় বস্তায় টাকা পাচার করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বরগুনা জেলা আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য অধ্যাপক মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ্ হারুনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়ায্যাম হোসাইন হেলাল, বরিশাল মহানগরী আমীর অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা ও অঞ্চল টিম সদস্য এ কে এম ফখরুদ্দীন খান রাযী, ঢাকা মহানগরী মজলিসে শুরা সদস্য ডা. সুলতান আহমেদ।

বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার বরগুনার দু’টি আসনের জন্য মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ্ হারুন ও ডা. সুলতান আহমেদের নাম ঘোষণা করে তাদের পরিচয় করিয়ে দেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ জ ম য় ত ইসল ম ক ষমত বরগ ন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

সাতকানিয়ায় প্রার্থী হয়েই পদ হারালেন শাহজাহান চৌধুরী

শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ঘোষণার করার কয়েক ঘণ্টার মাথায় দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে শাহজাহান চৌধুরীকে। নগর জামায়াতের আমিরের পদ থেকে তাকে সরিয়ে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মো. নজরুল ইসলামকে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্র ও স্থানীয় পর্যায়ে স্পষ্ট বিভক্তির চিত্র ফুটে উঠেছে।

শুক্রবার সকালে সাতকানিয়ার কেরানীহাটের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত ‘দায়িত্বশীল সমাবেশে’ শাহজাহান চৌধুরীকে প্রার্থিতার ঘোষণা দেন দলের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। একইদিন বিকেলে নগরীর দেওয়ানবাজারে মহানগর জামায়াতের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘দায়িত্বশীল সমাবেশে’ শাহজাহান চৌধুরীকে সরিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মো. নজরুল ইসলামকে। তিনি এতদিন নায়েবে আমিরের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। মিয়া গোলাম পরওয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেন। অবশ্য দলটির নেতাকর্মিরা এই সিদ্ধান্তকে ‘সমঝোতার ফল’ হিসেবে দেখছেন।

শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীতে আয়োজিত ‘জরুরি দায়িত্বশীল বৈঠকে’ মহানগরের আমির পদে পরিবর্তনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘সাতকানিয়া শাহজাহান  চৌধুরীকে দলের প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারষর তাকে এখন থেকে সাতকানিয়ায় বেশি সময় দিতে হবে। এসব  তার বদলে নায়েব আমির নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত আমির করা হয়েছে।’ 

চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩টি আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে। তবে চট্টগ্রাম-১৫ আসনটিকে সে সময় ফাঁকা রাখা হয়, যদিও শাহজাহান চৌধুরী শুরু থেকেই দাবি করে আসছিলেন যে এই আসনে তিনিই চূড়ান্ত প্রার্থী। এ নিয়ে দলটির মধ্যে আলোচনা সমালোচনা চলছিল। এরই মধ্যে শুক্রবার তাকে আসনটি থেকে দলের প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করা হলো।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাতকানিয়ায় প্রার্থী হয়েই পদ হারালেন শাহজাহান চৌধুরী