সোনারগাঁয়ে একটি ক্রিকেট টূর্ণামেন্টের নামে আওয়ামী লীগ নেতাদের মিলনমেলার আয়োজন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা।  

জানা গেছে, আগামী ১ লা মার্চ সোনারগাঁ ঈশাখাঁ একাদশ ক্লাবের  উদ্যোগে আয়োজিত মাষ্টার্স কাপ টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা'কে কেন্দ্র করে একটি দাওয়াতি কার্ড করা হয়। যেখানে দেখা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক হত্যা মামলার আসামী একাধিক আ'লীগ নেতাদের অতিথি হিসেবে নাম দাওয়ার করা হয়েছে৷  

এর মধ্যে সাবেক কথিত যুবলীগ নেতা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক রাজাকারের সন্তান হিসেবে খ্যাত আবু নাঈম ইকবাল ও তার বড় ভাই সোনারগাঁ উপজেলা আ'লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক আবু তাহের ফজলে রাব্বি, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক ওরফে কালা মানিক, পৌর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ তপন, পৌর আ'লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ, আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম বিপ্লব, নীলৎপল রায়, শরীফসহ আরও কয়েকজন'কে বিশেষ অতিথি ও সম্মানিত অতিথি হিসেবে দাওয়াত করা হয়। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেতৃবৃন্দ। 

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক বিএনপি নেতা জানান, ৫ ই আগষ্টের পর স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সারাদেশের ন্যায় উপরোক্ত নেতারা গাঁ-ডাকা দিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। বর্তমানে তাদেরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সম্প্রতি দিতির মেয়ের উপর হামলায় অভিযুক্ত প্রধান মোশাররফ হোসেন খেলার নাম করে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদেরকে পূনরায় পূর্নবাসনের জন্য পায়তারা করছে। 

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, পুরো পৌরসভায় তিনি অঘোষিত সরকার হিসেবে একচ্ছত্র রাজত্ব করছেন। সম্প্রতি জমি দখলের অভিযোগ এনে অভিনেত্রী দিতির মেয়ে লামিয়া চৌধুরীকেও হত্যার উদ্দেশ্যে তার উপস্থিতিতে ৫০-৬০ জনের একটি দল সন্ত্রাসী হামলা করে।

বিষয়টি নিয়ে লামিয়া চৌধুরী তার ছবি দেখিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য খেলার নাম করে এসব হেভিওয়েট আ'লীগ নেতাদের থেকে অর্থ নিয়ে প্রশাসনের গ্রেপ্তার এড়াতে মূলত এ পরিকল্পনা করেছেন তিনি। আমরা এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে এসব নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবী জানাচ্ছি।  

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন জানান, সোনারগাঁয়ের ঈসাখাঁ ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত  টুর্নামেন্টের সভাপতি হিসেবে তাকে দাওয়াত করা হয়েছে। কার্ড করার পূর্বে দেখানো হলেও ব্যস্ততার কারণে তেমনভাবে যাচাই না করেই অনুমতি প্রদান করেছেন৷
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স ন রগ ও ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ কর ছ ন উপজ ল ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ