গাজায় দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে কায়রোতে আলোচনা শুরু
Published: 28th, February 2025 GMT
গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকরের বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার মিসরের কায়রোতে আলোচনা শুরু হয়।
মধ্যস্থতাকারীদের আশা, এই আলোচনার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে গাজায় যুদ্ধের অবসান হবে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ২০২৩ সালে দেশটিতে হামাসের হামলা ঠেকাতে তাদের ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থতা’ স্বীকার করার এক দিন পর এ আলোচনা শুরু হলো।
আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর গতকাল বৃহস্পতিবারই বলেছে, যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ নিয়ে ‘নিবিড়’ আলোচনায় অংশ নিতে ইসরায়েল, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল কায়রোতে অবস্থান করছে। কয়েক মাসের আলোচনার পরই কেবল প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা সম্ভব হয়েছিল।
মিসরের সরকারি সংস্থা স্টেট ইনফরমেশন সার্ভিস বলেছে, পূর্বে হওয়া সমঝোতার বাস্তবায়নের চলমান প্রচেষ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরবর্তী ধাপগুলো নিয়ে নিবিড় আলোচনা শুরু করেছে।
প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আগামীকাল শনিবার শেষ হতে চলেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে হামাস সর্বশেষ বৃহস্পতিবার শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দীর বিনিময়ে চার জিম্মির দেহাবশেষ হস্তান্তর করার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কায়রোতে আলোচকদের পাঠান।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। ইসরায়েলের সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে এএফপির করা হিসাব অনুসারে হামলায় ১ হাজার ২১৮ জন নিহত হয়েছেন। জবাবে একই দিন গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে তখন থেকে চলা ওই যুদ্ধে ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের চালানো হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত পরিচালনা করেছে। গতকাল এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এক সেনা কর্মকর্তা নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের ওই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু উল্লেখ করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ হামলা ঠেকাতে না পারাটা সম্পূর্ণভাবেই সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা।
একই সংবাদ সম্মেলনে এক জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে যে তারা অতি আত্মবিশ্বাসী ছিল। হামলার আগে হামাসের সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে তাদের ভুল ধারণা ছিল।
তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইসরায়েলের সেনাপ্রধান জেনারেল হারজি হালেভি বলেন, ‘এ দায় আমার।’ ৭ অক্টোবরের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতা স্বীকার করে গত মাসেই হালেভি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক রায়হান অভিযুক্ত হলেও নাম নেই অস্ত্র ব্যবসায়ীর
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে গত বছরের ৪ মার্চ শিক্ষার্থীকে গুলির একটি মামলায় গত ৩১ জানুয়ারি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে ডিবি। এতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে গুলি করা কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের প্রাক্তন শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে অভিযোগপত্রে নাম নেই যার কাছ থেকে ডা. রায়হান অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন সেই এস এস আল হোসাইন ওরফে সোহাগের। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার নওদাপাড়ার সোহাগের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র-বিস্ফোরক ও নাশকতার একাধিক মামলা আছে।
গত বছরের ৪ মার্চ ব্যাগভর্তি অস্ত্র-গুলি নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখান শিক্ষক রায়হান। তার দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে লক্ষ্য করে শিক্ষক রায়হান গুলি করেন। শিক্ষার্থী তমাল বাম উরুতে গুলিবিদ্ধ হলেও বর্তমানে সুস্থ। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ব্যাগভর্তি অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন শিক্ষক রায়হান। তাঁর ব্যাগে লাইসেন্সবিহীন দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি জাপানি সামুরাই, ১০টি বার্মিজ ছুরি ও ৭৮ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া যায়। ডা. রায়হানের বিরুদ্ধে সে সময় আহত শিক্ষার্থী তমালের বাবা বগুড়ার আবদুল্লাহ আল আমিন হত্যাচেষ্টা ও ডিবি পুলিশ বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন রায়হান। যদিও পরবর্তী সময়ে জামিন নিয়ে রায়হান এখন পলাতক। ঘটনার পর থেকে উধাও অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগও।
পুলিশ সূত্র জানায়, ডা. রায়হান সিরাজগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তি ও জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, সোহাগের কাছ থেকেই সব অস্ত্র কিনেছেন। এরপর অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে সোহাগ ও রায়হানের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী। অভিযোগ উঠেছে, অভিযোগপত্র থেকে সোহাগের নাম বাদ দিয়েছেন ডিবির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল ইসলাম ও ইউনিট ওসি ইকরামুল হোসাইন। ডিবির তদন্ত ও দাখিলকৃত অভিযোগপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা।
সিরাজগঞ্জ ডিবির এসআই নাজমুল হক নতুন তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলেও তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তাঁর ইউনিটপ্রধান বর্তমান ওসি ইকরামুল হোসাইন আজ ২৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে থেকে পুলিশ পদক নিতে ঢাকায় রয়েছেন। তিনি ফোনে দাবি করেন, ডা. রায়হান আদালতে ১৬৪ ধারায় বিচারকের সামনে সোহাগের নাম বললেও তাঁর বাবা বা গ্রামের নাম জানাতে পারেননি। মামলার বাদী এজাহারে যে সোহাগের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেন, তিনি এতে জড়িত নন। বিএনপি করার কারণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করতেই আগের সরকারের সময় সাবেক এসপি ও ওসি সোহাগকে জড়িয়েছেন। শিক্ষক রায়হান যে সময় অস্ত্রগুলো কিনেছিলেন, তার আগে থেকেই সোহাগ ঢাকা ও ভারতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ইমিগ্রেশন ও হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এ বিষয়ে সাবেক এসপি আরিফুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও মামলার বাদী ডিবির সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী বলেন, শিক্ষক রায়হানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সোহাগের কথোপকথন ও লেনদেনের বিষয় নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই এজাহারে সোহাগের নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়।
সমকালের অনুসন্ধানেও সাবেক এসআই ওয়াদুত আলীর এজাহার অনুযায়ী সোহাগের ফোন নম্বরের কল ডিটেইল এবং এনআইডি নম্বর সংগ্রহ করা হয়। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহাগেরই তথ্য ও ছবি পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে শিক্ষক রায়হান শরীফ গতকাল ফোনে বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। ডিবির চার্জশিটের বিষয়টি জানি না।’
মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইব্রাহিম হোসেন বলেন, চার্জশিট থেকে সোহাগকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি আত্মঘাতী ও তদন্তের নীতিমালার বাইরে।
জানা গেছে, ভেড়ামারার স্বেচ্ছসেবক দলের সদস্য সচিব কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগ। গতকাল তিনি ফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র, খুন ও নাশকতা মামলাগুলো রাজনৈতিক। আমি অস্ত্র ব্যবসায়ী নই। রাজনৈতিক এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।
রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা স্বাধীন হলেও পুলিশ সুপার, সার্কেল অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ওসি সুপারভাইজরি অথারিটি। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।