রোজা রেখে ডায়াবেটিস রোগীরা কী করবেন, কী করবেন না
Published: 3rd, March 2025 GMT
অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকতে পারে রোজা রাখলে কি ডায়াবেটিস রোগীদের হাঁটতে হবে?— অথবা ইফতারে একজন ডায়াবেটিসের রোগী কি মিষ্টি ফল খেতে পারবেন?—এই সব প্রশ্নের উত্তর জানিয়েছেন মাহফুজা নাসরীন শম্পা, চীফ ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান এন্ড নিউট্রিশন কনসালট্যান্স ইউ এস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
তিনি একটি পডকাস্টে বলেন, ‘‘ডায়াবেটিসের রোগীরা ইফতারিতে শুরুতেই কোনো ধরনের শরবত পান না করে শুধু পানি অথবা কচি ডাবের পানি পান করতে পারেন। এ ছাড়া তোকমা, ইসুবগুল অথবা চিয়া সিড ভেজানো পানি পান করতে পারেন। এ ছাড়া খেজুর খেয়েও রোজা খুলতে পারেন। দুই, তিনটি খেজুর খেতে পারেন। যদি খাবার তালিকায় খেজুর রাখেন তাহলে অন্যান্য মিষ্টি ছাড়া যেসব ফল আছে সেগুলো খাবার তালিকায় রাখতে পারেন।
এই পুষ্টিবিদ আরও বলেন, ‘‘একজন ডায়াবেটিসের রোগীর রাতের খাবার হবে সন্ধ্যা রাতের খাবার। ভাত বা রুটি, মাছ, মাংস, ডাল, সবজি এগুলো খাবার তালিকায় রাখতে পারেন। এবং সেহেরিতে যে খাবার খাবেন- এই খাবার হতে হবে একজন ডায়াবেটিক রোগী দুপুরে যে খাবারটা খেয়ে থাকেন সেরকম। যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীর ব্লাড সুগার লেভেল কমে যেতে পারে তাই সেহেরির শেষ দিকে খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করতে হবে।’’
আরো পড়ুন:
ডাস্ট অ্যালার্জি প্রতিরোধে করণীয়
ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহে ‘হৃদয়’এর যত্ন নিচ্ছেন তো?
মাহফুজা নাসরীন শম্পার পরামর্শ
একজন ডায়াবেটিসের রোগী দৈনন্দিন কাজগুলো রমজান মাসে সকালের দিকে সেরে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। কেননা, হাইপোগ্লাইসেমিয়া থেকে বাঁচার জন্য তার এই কাজটি করা খুবই জরুরি।
বিকেলের দিকে বিশ্রামে থাকার চেষ্টা করতে হবে।
ইফতারের পরে-সেহেরির আগ পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগী যদি দাঁড়িয়ে তারাবির নামাজ পড়েন তাহলে তার আর আলাদা করে হাঁটার প্রয়োজন পড়বে না। কিন্তু যদি বসে তারাবির নামাজ পড়েন তাহলে ইফতারির পরে অথবা সন্ধ্যা রাতে খাবার গ্রহণের পরে হাঁটতে হবে।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর একজন ড য় ব ট ইফত র
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫