‘কেউ নম্র হতে পারেন, সে কারণে তাকে দুর্বল ভেবে নেওয়া ঠিক নয়। বরং যে যত বিনয়ী, তার ক্ষমতা তত বেশি হতে পারে’-বললেন বেসরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রুনা খান।

নিজেকে তিনি বর্ণনা করেন একজন সামাজিক উদ্যোক্তা, একজন মা এবং একজন লেখক হিসেবে। সুবিচার, সম্মান ও সুন্দর ভবিষ্যতের আশা হলো তার কর্মশক্তির উৎস। শুধু সমস্যা সমাধান নয়, বরং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি তার লক্ষ্য।

২০০২ সালে যাত্রার পর প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষকে সহযোগিতা করে আসছে ফ্রেন্ডশিপ। সংস্থাটির রয়েছে চার হাজারের বেশি কর্মী, যাদের ৫০ শতাংশ স্থানীয় বাসিন্দা। মূলত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জাহাজের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়ে পরিচিত হয়ে উঠেছে ফ্রেন্ডশিপ। এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে রুনা খানের হাত ধরে।

রুনা খানের জন্ম ঢাকায় ১৯৫৮ সালে। লেডি ব্রাবোর্ন কলেজ ও ইডেন কলেজের পর তিনি হার্ভার্ড এক্সিকিউটিভ এডুকেশন প্রোগ্রামে পড়াশোনা করেন। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত হয় তার কয়েকটি বই এবং অশোকা ফেলোশিপ পানি তিনি। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে ছয়টি শিক্ষা বিষয়ক এবং দুটি শিশুতোষ গল্প। ১৯৯৫ সালে তিনি কাজ শুরু করেন ইউনিসেফের সঙ্গে।

দেশে-বিদেশে কল্যাণমূলক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে রুনা খান যেসব সম্মাননা পেয়েছেন, তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের সুপারব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড (২০২২), পজিটিভ প্লানেটের গ্রিন অ্যাওয়ার্ড (২০১৬), আইডিবি প্রাইজ ফর ওম্যান্স কন্ট্রিবিউশন টু ডেভেলপমেন্ট (২০০৮), রোলেক্স অ্যাওয়ার্ড ফর এন্টারপ্রাইজ (২০০৬) এবং অশোকা ফেলোশিপ (১৯৯৪)।

আগামীতে কী করার স্বপ্ন দেখেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে রুনা খান বলেন, ‘এমন একটি পৃথিবী গড়ে তুলতে চাই যেখানে স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে নারীর অবস্থান শুধু নিশ্চিত নয়, বরং শক্তিশালী হবে। ওই পৃথিবী হবে এমন, যেখানে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরাও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন, শহরের নারীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাবেন, আগামীর নেতৃত্ব দেবেন।’ নেতৃত্ব তার কাছেই যাওয়া উচিত যার মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে এবং নেহায়েত পুরনো প্রথার ভিত্তিতে কারো হাতে নেতৃত্ব যাওয়া ঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের হাতে শুধু ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নয়, বরং সেই সম্ভাবনা বাস্তবায়নের চাবিকাঠিও তুলে দিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যেন উন্নতির পদযাত্রায় কোনো নারীকে পেছনে ফেলে যাওয়া না হয়।’

ফ্রেন্ডশিপের স্বাস্থ্যসেবা দানকারী জাহাজগুলোর মধ্যে প্রথমটি হলো ‘লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল’, যেটি পরিচালিত হয় ইউনিলিভার বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। ভাসমান এই হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৬ লাখের বেশি মানুষ। ইন্টারন্যাশনাল ওমেন্স ডে ২০২৫ উপলক্ষ্যে ইউনিলিভার বাংলাদেশের ক্যাম্পেইন 'এক্সেলারেট অ্যাকশন- এম্পাওয়ার্ড ওমেন, এম্পাওয়ারিং দা ফিউচার' এর অধীনে স্মরণ করা হচ্ছে রুনা খানের এই অবদানকে।

আগামীতে উন্নয়নের হাল ধরতে চান- এমন নারীদের উদ্দেশ্যে রুনা খান বলেন, ‘এগিয়ে যাও, কারো অনুমতি বা স্বীকৃতির জন্য অপেক্ষা করো না। সাহস নিয়ে নেতৃত্ব দাও, বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলো, কাজ করো সততার সঙ্গে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অপেক্ষা করলে পৃথিবী পাল্টাবে না, পৃথিবী পাল্টাবে তখন যখন তুমিই একে বদলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে। এজন্য নিজের মূল্যবোধ যত্নে আগলে রাখতে হবে, আর ভবিষ্যতে সেটাই পথ দেখাবে।’

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন

প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।

জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।

কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।

সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গঙ্গাচড়ায় হিন্দুবাড়িতে হামলা ঠেকাতে ‘পর্যাপ্ত’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর
  • দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
  • ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
  • ডেঙ্গুতে দুজনের, করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু
  • জাওয়াইদেহ বেদুইনদের মৌখিক সাহিত্য
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ
  • সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন