স্ত্রী-শ্যালিকাকে হত্যার দায় স্বীকার করে আসামির জবানবন্দি, অন্য ব্যক্তির সঙ্গে স্ত্রীর প্রেমের সন্দেহ
Published: 5th, March 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় স্ত্রী ও শ্যালিকাকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেপ্তার আমির হোসেন (২৮)। তাঁর দাবি, স্ত্রী জ্যোতি আক্তারের সঙ্গে অন্য ব্যক্তির প্রেমের সম্পর্ক চলছে—এমন সন্দেহের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
আজ বুধবার বিকেল চারটার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (চতুর্থ আদালত) আসমা জাহান তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রিপন দাস।
আরও পড়ুনব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্ত্রী ও শ্যালিকাকে হত্যার অভিযোগ, স্বামী পলাতক০৩ মার্চ ২০২৫গত রোববার রাতে উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ধজনগর গ্রামে দুই বোন খুন হন। তাঁরা হলেন একই গ্রামের মৃত রওশন আলীর মেয়ে ও আমিরের স্ত্রী জ্যোতি আক্তার (২০) ও জ্যোতির বোন স্মৃতি আক্তার (১৪)। প্রায় দেড় বছর আগে জ্যোতির সঙ্গে আমিরের বিয়ে হয়। তিনি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার জামতলী গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনার পরপর পলাতক ছিলেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে অবস্থান নিশ্চিত করে গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রামের বাঁকলিয়া এলাকা থেকে আমিরকে গ্রেপ্তার করে কসবা থানা-পুলিশ। গতকাল রাতেই জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্ত্রী-শ্যালিকাকে হত্যার দায় স্বীকার করেন তিনি।
আমিরের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাতে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রিপন দাস জানান, ঘটনার পাঁচ-সাত দিন আগে সন্ধ্যায় শ্বশুরবাড়ি ধজনগর গ্রামে আসেন আমির। ওই সময় স্ত্রী জ্যোতিকে অন্য পুরুষের সঙ্গে কথা বলতে দেখেন। বিষয়টি নিয়ে আমিরের সন্দেহ হয়। বিষয়টি নিয়ে রোববার রাতে জ্যোতির সঙ্গে আমিরের কথা হয়। ওই সময় স্বামীর কাছে ক্ষমা চান জ্যোতি। আমির শর্ত দেন, তাঁর সঙ্গে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার জামতলীতে নিজেদের বাড়িতে ফিরলে মাফ করবেন। কিন্তু জ্যোতি জানান, তিনি শ্বশুরবাড়িতে পরে যাবেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে আমির শ্বাসরোধে জ্যোতিকে হত্যা করেন।
শ্যালিকা স্মৃতিকে হত্যার বিষয়ে আমির জবানবন্দিতে জানান, স্ত্রীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও হত্যার ঘটনা দেখে শ্যালিকা সেখান থেকে পালিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। রান্নাঘরে গিয়ে শ্যালিকা স্মৃতিকেও শ্বাসরোধে হত্যা করেন আমির।
এ ঘটনায় পরদিন গত সোমবার কসবা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন জ্যোতি ও স্মৃতির ভাই মোবারক হোসেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল কাদের।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।