নৌযানে অতিরিক্ত ভাড়া নিলে রুট পারমিটও বাতিল হবে: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
Published: 6th, March 2025 GMT
নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নৌযানে নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নেওয়া যাবে না। যাত্রীদের নির্ধারিত ভাড়া আজ থেকেই তালিকা আকারে প্রকাশ করতে হবে। যদি কেউ অতিরিক্ত ভাড়া নেয়, তবে শুধু জরিমানা নয়, সেই লঞ্চের রুট পারমিটও বাতিল করা হবে।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে প্রস্তুতিমূলক সভা শেষে নৌপরিবহন উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, আগামী ১৫ রমজান থেকে রাতে স্পিডবোট চলবে না। এ ছাড়া ঈদের পাঁচ দিন আগে ও পরের পাঁচ দিন বাল্কহেড (বালুবাহী নৌযান) চলাচল বন্ধ থাকবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, কোনো লঞ্চ নির্ধারিত সিরিয়ালের বাইরে ছেড়ে যেতে পারবে না। অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যাবে না। এসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদারকি করবে। নৌবাহিনীও সহযোগিতা করবে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপ্রয়োজনে লঞ্চে তল্লাশি করে সময় নষ্ট করবে না।
ফিটনেস সনদ ছাড়া কোনো লঞ্চ চলতে পারবে না এবং নির্ধারিত গতিসীমার বেশি গতিতে লঞ্চ চালানো যাবে না বলেও মন্তব্য করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, রাজধানীর জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত পুরো এলাকায় এমন বিশৃঙ্খলা থাকে যে তিন ঘণ্টা আগে রওনা দিলেও অনেকে লঞ্চ ধরতে পারেন না। তাই রাস্তা পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রয়োজনে রেকার দিয়ে অবৈধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি সরিয়ে নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, এসব সিদ্ধান্ত আগামী ১৫ রমজান থেকে কার্যকর হবে। একই দিন থেকে রাতে স্পিডবোট চলবে না। এ ছাড়া ঈদের পাঁচ দিন আগে ও পরের পাঁচ দিন বাল্কহেড (বালুবাহী নৌযান) চলাচল বন্ধ থাকবে। ফেরিতে কোনো বাস যাত্রীসহ উঠতে পারবে না। বাস থেকে যাত্রী নামিয়ে ফেরিতে উঠাতে হবে এবং ফেরি থেকে বাস নামার পর যাত্রীরা আবার বাসে উঠতে পারবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।