লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে গত দুইদিন ধরে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে। ডাকাত আতঙ্কে রাতভর পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয়রা। তবে এখন পর্যন্ত কোন বাড়িতে ডাকাতির খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা বলছেন কোন বাড়িতে ডাকাতি না হলেও ডাকাতির চেষ্টা হয়েছে। পুলিশ বলছেন, আতঙ্কিত এলাকায় নিয়মিত আমাদের টহল রয়েছে।

জানা গেছে, সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া, মোহাম্মদ নগর গ্রাম, লাহারকান্দি ইউনিয়নের চাঁদখালী, জুগিরহাট, আবিরনগর, কুতুবপুর, ভবানীগঞ্জের আবদুল্লাপুর, ধর্মপুর, আলীপুর, চরভূতাসহ বিভিন্ন গ্রামের লোকজন গত মঙ্গলবার রাতভর ডাকাত আতঙ্কে ছিল। রাতভর সর্বত্র ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় কোন কোন ইউনিয়নের বাসিন্দারা লাঠিসোটা ও লাইট হাতে এলাকা পাহারায় বেরিয়ে পড়ে। মসজিদের মাইকে মাইকে ‘ডাকাত, ডাকাত’ বলে ঘোষণা দেয়। তার রেশ গতকাল বুধবার রাতেও ছিল। ঐসব এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় যুব সমাজ পাহারা দিতে দিচ্ছে এমন কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, এখনও পর্যন্ত কোন ডাকাতির ঘটনা শোনা যায়নি। তবে কিছু কিছু জায়গায় ছোট ছোট চুরির ঘটনা ঘটেছে। আবার কেউ কেউ নাকি ডাকাত দেখেছেন। তাই দ্রুত গ্রামের পর গ্রাম ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেক জায়গায় মসজিদে মাইকিং হওয়ায় তা আরো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানায় তারা।

লাহারকান্দি ইউনিয়নের পূর্ব রামানন্দী আমেনা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা শাহাদাত হোসেন বলেন, “স্থানীয়রা ডাকাতের খবর দেওয়ায় গত মঙ্গলবার মসজিদের মাইকে মাইকিং করা হয়েছে। গত রাতেও চাঁদখালী বাজার সংলগ্ন এলাকায় একজন ব্যক্তি ৮-১০ জন লোককে একসাথে দেখতে পান। লাইট মারার সাথে সাথে সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। পরে আমাকে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিতে বলে, আমি ঘোষণা না দিয়ে এলাকার কয়েকজনকে খবর দেই। এলাকার মানুষ রাত জেগে ডাকাত পাহারা দিয়েছেন।” 

ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের যুবক মো.

রাসেল বলেন, “ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন ৫নং ওয়ার্ড চুটকি সাকু এলাকার আসলাম মুন্সি বাড়ি প্রবাসী কফিলের ঘরের সামনে কে বা কারা চিরকুট রেখে যায়, তাতে লেখা ছিল ‘যদি পিছনের লাইট দেছ, তাহলে মারি হালাইওম’। এমন চিরকুটে ঐ বাড়ির লোকজন আতঙ্কে রয়েছে। এছাড়া চরমনসা, শরীফপুর, ধর্মপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে গত দুইদিন যাবত ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে, তবে এখনও কোন ডাকাত ধরা পড়েনি।”

লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল মোন্নাফ বলেন, “কয়েকটি এলাকায় ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, মসজিদে মাইকিংও হয়েছে। তবে মঙ্গলবার দিবাগত রাতেও কোথাও ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। রাতেই টহল পুলিশ ও সেনাসদস্যরা আতঙ্কিত এলাকাগুলো ঘুরে এসেছে। আমাদের পুলিশের রাতের টহল আরও জোরদার করা হয়েছে। কোনপ্রকার ডাকাতির ঘটনা যেন না ঘটে, আর জনমনে যেন এ বিষয়ে কোন আতঙ্ক তৈরি না হয় সে বিষয়ে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে।”

ঢাকা/জাহাঙ্গীর/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড ক ত আতঙ ক মসজ দ র এল ক য় র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ