Prothomalo:
2025-05-01@12:11:24 GMT

বিশ্বাসীদের ৯ গুণ

Published: 8th, March 2025 GMT

আজ খতমে তারাবিহতে পবিত্র কোরআনের ১১তম পারা; সুরা তওবার ৯৪ থেকে সুরা হুদের ৫ নম্বর আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করা হবে। এই অংশে কপটদের থেকে দূরত্ব বজায়, নবী করিম (সা.)–এর বিশেষ গুণ, মুনাফিকদের নিন্দা, সত্য সাক্ষ্যদানকারীদের পুরস্কার, সত্যবাদীদের সংস্পর্শে থাকার নির্দেশ, মসজিদ নির্মাণ, তাকওয়া অর্জন, জ্ঞান ও গবেষণার গুরুত্ব, নবীজি (সা.

)–এর অনুসরণ, কিয়ামতের ঘটনা, বিশ্বাসীদের গুণাবলি, কোরআন আল্লাহর কালাম, বিপদ কেটে গেলে আল্লাহকে ভুলে যাওয়া, দ্বীনের ব্যাপারে ছলচাতুরীর পরিণামসহ বিভিন্ন বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে।

নবী করিম (সা.)–এর মসজিদ পোড়ানোর কারণ

রাসুল (সা.) তখন তাবুক যুদ্ধে যাচ্ছিলেন। পথ চলতে চলতে জুআওয়ান নামক স্থানে এলেন। কুবায় মসজিদে জিরার নির্মাণকারীরা নবীজি (সা.)–এর কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, দুর্বলদের জন্য এবং বৃষ্টির রাতে নামাজ পড়ার জন্য আমরা একটি মসজিদ নির্মাণ করেছি। আমরা চাই যে আপনি তাতে আসবেন এবং নামাজ পড়ে মসজিদটি উদ্বোধন করে দেবেন।’ তিনি বললেন, ‘আমি সফরে যাচ্ছি। ফেরার পথে তোমাদের এখানে যাব, ইনশা আল্লাহ।’

রাসুল (সা.) তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরছিলেন। ভাবলেন, যাওয়ার পথে সেই মসজিদ উদ্বোধন করবেন। তখন আল্লাহ সুরা তওবার ১০৭ আয়াত নাজিল করেন, ‘আর যারা মসজিদ তৈরি করেছে ক্ষতিসাধন, কুফরি আর মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে, আর যে ব্যক্তি আগে থেকেই আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের নিমিত্তে, তারা অবশ্যই শপথ করবে যে আমাদের উদ্দেশ্য সৎ ব্যতীত নয়। আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তারা নিশ্চিত মিথ্যাবাদী।’

রাসুলুল্লাহ (সা.) আর দেরি করলেন না। সঙ্গে সঙ্গে দুই সাহাবিকে এই মসজিদ ধ্বংসের জন্য পাঠালেন। নবীজি (সা.) তখনো মদিনায় পৌঁছাননি; মসজিদটি তাঁরা পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেন। চারটি উদ্দেশ্যে অবিশ্বাসীরা মসজিদে জিরার নির্মাণ করেছিল—১. পাশে অবস্থিত মসজিদে কুবাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য। ২. আল্লাহর সঙ্গে কুফরি করতে। ৩. বিশ্বাসীদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এবং ৪. মুসলিমদের বিরুদ্ধে বহিঃশত্রুর আক্রমণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।

মসজিদ নির্মাণ সওয়াব ও আল্লাহকে খুশি করার কাজ হলেও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি, সামাজিক অবক্ষয় ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, লোকদেখানো, আধিপত্য বিস্তার, কালো টাকা সাদা বা মানুষের প্রশংসা কিংবা পাপ লুকানোর জন্য মসজিদ নির্মাণ করা ভয়াবহ অপরাধ ও গুনাহ।

আরও পড়ুনইসলাম যাদেরকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছে১৩ মার্চ ২০২৪

বিশ্বাসীদের ৯ গুণ

আল্লাহ তাআলা সুরা তওবার ১১২ আয়াতে বিশ্বাসীদের ৯টি গুণের কথা বলেছেন। এই গুণের অধিকারীদের সুসংবাদ দিয়েছেন। গুণগুলো হলো— তওবাকারী, ইবাদতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, রোজাদার, রুকুকারী, সিজদাকারী, ভালো কাজের আদেশদাতা, মন্দকাজে বাধাদানকারী ও আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা হেফাজতকারী।

বিশ্বাসীদের আল্লাহর চার বিষয়ে তাগিদ

সুরা তওবার ১১৯ থেকে ১২১ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বিশ্বাসীদের চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের তাগিদ দিয়েছেন, যথা এক. তাকওয়া অবলম্বন করা। দুই. সত্যবাদীদের সান্নিধ্য গ্রহণ করা। তিন. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গ ত্যাগ না করা। চার. সওয়াবের প্রত্যাশায় দ্বীনের জন্য কষ্ট করা।

আরও পড়ুননারীর মর্যাদা ও অধিকার এবং অলৌকিক তিন ঘটনা১২ মার্চ ২০২৪

ইসলামে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণা

তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে। যুদ্ধ নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে। অবিশ্বাসীদের তুলনায় মুসলমানদের লোক কম। রসদও তেমন নেই। যুদ্ধে গেলে এ বছরের খেজুরও ঘরে তোলা মুশকিল হবে। এই যুদ্ধ করতে হবে মদিনার বাইরে গিয়ে। এর মধ্যে কিছু লোক বেঁকে বসেছে। সেই কঠিন পরিস্থিতির তাবুক যুদ্ধে যখন মুসলমানেরা সবচেয়ে বড় যুদ্ধের মুখোমুখি হচ্ছেন, সবাইকে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য নবী করিম (সা.) আদেশ দিয়েছেন, তখন আল্লাহ একদল লোককে দ্বীনের জ্ঞান অর্জনে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আর সমস্ত বিশ্বাসীদের অভিযানে (একসঙ্গে যুদ্ধে) বের হওয়া সংগত নয়। তাই তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হলো না, যাতে দ্বীনের জ্ঞান লাভ করে এবং সংবাদ (জ্ঞান) দান করে স্বজাতিকে, যখন তারা তাদের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে, যেন তারা (গুনাহ থেকে) বাঁচতে পারে।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ১২২)

ইসলামে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নারী-পুরুষের জন্য আবশ্যক। মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে সুখ, শান্তি, সফলতা ও উন্নতির জন্য যতগুলো শাস্ত্রের জ্ঞানচর্চা দরকার, ইসলাম সেই সমুদয় শাস্ত্রের জ্ঞানচর্চাকে উৎসাহিত করে।

আরও পড়ুনতারাবির নামাজে কোন দিন কোন সুরা পড়া হবে২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সুরা ইউনুসের বিষয়

সুরা ইউনুস মক্কায় অবতীর্ণ। এ সুরার আয়াত সংখ্যা ১০৯। কোরআনুল কারিমের ১০ নম্বর সুরা এটি। এ সুরায় ইমানের মৌলিক আকিদা-বিশ্বাস, পবিত্র কোরআনের মাহাত্ম্য ও মানুষের প্রতি চ্যালেঞ্জ, কিছু উপদেশ ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলি সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। সুরার একটি অংশে ইউনুস (আ.)-এর ঘটনার বর্ণনা রয়েছে, সে দৃষ্টিকোণ থেকে এ সুরার নাম রাখা হয় সুরা ইউনুস।

ইউনুস (আ.)-এর জাতি রক্ষা পাওয়ার কাহিনি

ইউনুস (আ.) মায়ের নামে পরিচিত ছিলেন। মায়ের নামের সঙ্গে মিলিয়ে তাকে ডাকা হতো ইউনুস ইবনে মাত্তা (আ.)। কোরআনে তাঁর তিনটি নাম পাওয়া যায়, ইউনুস, জুননুন ও সাহিবুল হুত। ইউনুস (আ.) বর্তমান ইরাকের মসুল নগরীর কাছে নিনাওয়া বা নিনেভা জনপদের অধিবাসীদের নবী ছিলেন। তিনি তাদের আল্লাহর পথে ডাকলেন। আখেরাতের বিষয়ে সতর্ক করলেন। অনেক দিন এভাবে গেল। জাতির লোকেরা তাঁর কথা শুনল না। তিনি হতাশ হয়ে পড়লেন। তিন দিনের মধ্যে আল্লাহর আজাবের সতর্কবার্তা দিয়ে এলাকা ছাড়লেন। এ ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষা করলেন না। ইউনুস (আ.) চলে যাওয়ার পর লোকজন ভয় পেয়ে বসল। তারা সবাই মিলে আল্লাহর কাছে তওবা করল। খাঁটি তওবার ফলে আল্লাহ তাদের ওপর থেকে আজাব সরিয়ে নেন।

এদিকে ইউনুস (আ.) ভাবলেন, তার জাতি হয়তো এর মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু যখন জানলেন, তারা তওবা করে ভালো হয়ে গেছে, তখন বিস্মিতও হলেন, ভয়ও পেলেন। তখন আর স্বদেশে না ফিরে ভিন্ন দেশের উদ্দেশে মানুষবোঝাই নৌকায় চড়লেন। নৌকা মাঝনদীতে পৌঁছামাত্র প্রচণ্ড ঝড় শুরু হলো। এটা দেখে নৌকার মাঝি বলল, কোনো একজনকে নদীতে ফেলে দিতে হবে। অন্যথায় সবাইকে ডুবে মরতে হবে। লটারি হলো। লটারিতে পরপর তিনবার ইউনুস (আ.)-এর নাম আসে। অবশেষে তিনি নদীতে নিক্ষিপ্ত হন। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর হুকুমে বিরাটকায় এক মাছ এসে তাঁকে গিলে ফেলে। মাছের পেটে তিনি বেঁচে ছিলেন। পরে একসময় মাছ থেকে নদীর পাড়ে উগরে দেয়।

সুরা ইউনুসের ৯৮ নম্বর আয়াতে সেই জাতির তওবা করে আল্লাহর আজাব থেকে বেঁচে যাওয়ার বয়ান রয়েছে।

রায়হান রাশেদ : লেখক ও আলেম

আরও পড়ুনপ্রাচীন ৬ জাতি ধ্বংসের কাহিনি১৬ মার্চ ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মসজ দ ন র ম ণ ম সলম ন আল ল হ র জন য ম নদ র ইউন স ক রআন তওব র

এছাড়াও পড়ুন:

রুয়া নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (রুয়া) কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা। এর আগে তাঁরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রুয়া অ্যাডহক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ মে পুনর্মিলনী এবং ১০ মে রুয়ার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপিপন্থী সাবেক শিক্ষার্থীরা। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুই পক্ষের নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি যুক্তি চলতে থাকে।

এদিকে গতকাল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রুয়া নির্বাচন কমিশনের প্রধান কমিশনার পদত্যাগ করেন। সেই সঙ্গে গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদের বাসভবনে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়ে নোটিশ জারি করেন রুয়ার অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করছেন।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘সিলেকশন না ইলেকশন, ইলেকশন ইলেকশন’, ‘প্রশাসন জবাব দে, রুয়া কি তোর বাপের রে’, ‘রুয়া নিয়ে টালবাহানা, চলবে চলবে না’, ‘অ্যাডহক না নির্বাচন, নির্বাচন নির্বাচন’, ‘সিন্ডিকেট না রুয়া, রুয়া রুয়া’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

এ সময় ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা-কর্মীদেরও উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। পরে জামায়াত ইসলামীর কয়েকজন নেতাও কর্মসূচিতে যোগ দেন। একপর্যায়ে বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। বিকেল ছয়টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ মে রুয়া নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ হঠাৎ সেই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তে ক্যাম্পাসের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে। যারা রুয়া নির্বাচন দিতে পারে না, তারা রাকসু নির্বাচন কীভাবে বাস্তবায়ন করবে? ১০ মের নির্বাচন সেই একই তারিখে হতে হবে। এই সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ