আদালত প্রাঙ্গণে ইনু বললেন, আমি ঠিক আছি, চিন্তা করবেন না
Published: 9th, March 2025 GMT
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলাসহ দুটি হত্যাচেষ্টা মামলায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন কুষ্টিয়ার একটি আদালত। আজ রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে কুষ্টিয়ায় পুলিশ প্রহরায় আদালতে হাজির করা হয়। কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানা তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালতে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায় ইনুকে। সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় এজলাস কক্ষে নেওয়া হয়। এ সময় তার সঙ্গে আইনজীবীরা ছিলেন। পুলিশের কড়া পাহারার মধ্যে তার কিছু সমর্থকও হাজির হন আদালতে। সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়েন ইনু। আদালত কক্ষের কাঠগড়ায় তিনি ৪ থেকে ৫ মিনিট ছিলেন। বের হওয়ার পথে ওকালত নামায় স্বাক্ষর করেন। তিনি আইনজীবীদের বলেন, ‘আমি ঠিক আছি, আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না।’
বের হওয়ার সময় ইনুর দলের কর্মীরা প্রিজন ভ্যানের সামনে ভিড় করেন। এ সময় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। তিনি কর্মীদের উদ্দেশ্য করে কিছু বলার চেষ্টা করেন। বাহাদুর নামের এক নেতাকে ইনু বলেন, ‘বাহাদুর ভালো থেক।’ এরপর পুলিশ তাকে দ্রুত গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।
ইনুর আইনজীবী তানজিলুর রহমান এনাম বলেন, ‘তিনি (ইনু) ওকালত নামায় স্বাক্ষর করেছেন। তিনি মানসিকভাবে শক্ত আছেন বলে জানিয়েছেন। কোনো চিন্তা করতে বারণ করেছেন। তবে আদালতে তিনি কোনো কথা বলেননি। শুধু আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন।’
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২২ জুলাই একটি মানহানির মামলায় কুষ্টিয়ার আদালতে হাজিরা দিতে এলে হামলার শিকার হন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। পরে ২০২৪ সালের ১০ অক্টোবর মাহমুদুর রহমান নিজে বাদী হয়ে কুষ্টিয়া সদর থানায় ৪৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ মামলার চার নম্বর আসামি হাসানুল হক ইনু। এছাড়া ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় আহত শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। এ মামলাতেও হাসানুল হক ইনুকে আসামি করা হয়। এ দুটি মামলায় আজ দুপুর আড়াইটার দিকে হাসানুল হক ইনুকে কুষ্টিয়ায় আদালতে হাজির করা হয়।
কুষ্টিয়া আদালতের সরকারি কুঁসলি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম জানান, হাসানুল হক ইনু ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা হিসেবে হাসিনা সরকারের সব অপকর্মের দোসর। আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলার রূপকারও তিনি। এ মামলাটি ছাড়াও আরও একটি মামলাতে হাসানুল হক ইনু আসামি হওয়ায় তাকে পুলিশ শ্যোন এরেস্ট দেখিয়ে আদালতে হাজির করলে বিচারক বিধি অনুযায়ী তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইনজ ব
এছাড়াও পড়ুন:
এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে
রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম ও এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আজ বুধবার এ আদেশ দেন।
প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত এনায়েত করিম চৌধুরী ও এস এম গোলাম মোস্তফাকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আসামিপক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মাসুদ ও মোস্তফাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিমকে গত সোমবার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি র-এর (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে। এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
অপরদিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন।
এনায়েত করিম চৌধুরীর আইনজীবী ফারহান এমডি আরাফ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর মক্কেল কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি একজন মার্কিন নাগরিক। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি কোনোভাবে যুক্ত নন।
এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টোরোড থেকে এনায়েত করিম চৌধুরীকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মার্কিন নাগরিক।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।
পুলিশ বলছে, গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরী প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টোরোড এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাঁকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাশাপাশি সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।
সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।