রমজানের ‘মুকাবেলে’ অনুষ্ঠান মুসলমানদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। একাধিক ব্যক্তির একে অন্যকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনানোর বিশেষ পদ্ধতিকে বলা হয় মুকাবেলে। ৯০০ বছর ধরে এই পদ্ধতিই চালু রয়েছে তুরস্কের ঐতিহাসিক সালাহউদ্দিন আইয়ুবী মসজিদে। খবর ডেইলি সাবাহর।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বরাবরের মতো এবারের রমজানেও তুরস্কের শতাব্দী প্রাচীন এই মসজিদে কোরআন তিলাওয়াতের ঐতিহ্য অব্যাহত রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের দিয়ারবাকিরের সিলভান জেলায় অবস্থিত শতাব্দী প্রাচীন সালাহাদ্দীন আইয়ুবী মসজিদটি নয় শতাব্দী ধরে মুকাবেলের ঐতিহ্য পালন করে আসছে। ১১৮৫ সালে নির্মিত মসজিদের প্রবেশপথের শিলালিপি অনুসারে, পবিত্র রমজান মাসে দুপুর ও বিকেলের (যোহর ও আসর) নামাজের পর মসজিদে মুকাবেলে অংশগ্রহণকারীরা মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.

) সুন্নাহের ওপর ভিত্তি করে এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

মুকাবেলের সময় ইবাদতকারীরা ধর্মীয় কর্মকর্তাদের কোরআন তিলাওয়াত অনুসরণ করেন এবং যারা তিলাওয়াত জানেন না তারা আয়াত পাঠ করা শোনেন। সিলভান জেলা মুফতি মুরাত ডেমির বলেছেন, মসজিদটিতে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্যই ভিড় হয়, বিশেষ করে দুপুর এবং বিকেলের নামাজে আরও বেশি লোক উপস্থিত হয়।

তিনি বলেন, এই মসজিদটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী স্থান। এর প্রায় এক হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে। কিছু সূত্র অনুসারে, ১০৩১ সালে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল, আবার অন্যরা ইঙ্গিত দেয় যে এটি আরতুকিদ আমলে নির্মিত হয়েছিল, যার রেকর্ড ১১৫২ সাল থেকে রয়েছে। পরবর্তীতে আইয়ুবী আমলে সালাহাদ্দিন আইয়ুবী মসজিদটি সংস্কার করেন, যার কারণ মসজিদটি তার নামই বহন করছে।

দোকানদার মুস্তাফা ডেমিরার তার প্রবীণ ও পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে মসজিদ সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, মসজিদটি ৮৫০ থেকে ১০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইবাদতের জন্য উন্মুক্ত। আমরা এখানে আমাদের নামাজ, রমজানে মুকাবেলে, তারাবিহের নামাজ এবং অন্যান্য পবিত্র দিনগুলোতে আমাদের ধর্মীয় কর্তব্য পালন করে চলেছি। আমরা আশা করি, আমাদের মতো তরুণ প্রজন্মও প্রবীণদের কাছ থেকে শিখবে এবং এই মসজিদে মুকাবেলে পড়ার এই ঐতিহ্য অব্যাহত রাখবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মসজ দ ত রস ক ক রআন ত ল মসজ দ রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।

মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?

তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি  যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?

সরকারের পক্ষ থেকে  রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।

দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।

এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন,  সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!

এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ