শহীদ পরিবার এবং আহতদের নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ইফতার অনুষ্ঠানে আশুলিয়ায় শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম বলেছেন, ‘আমার সন্তানকে মারার উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আমার সন্তান হত্যার বিচারের আগে কোনো নির্বাচন মা হিসেবে আশা করব না।’

আজ সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শহীদ পরিবার এবং আহতদের নিয়ে এনসিপির ইফতার মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।

শাহিনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে মেরে লাশ ভ্যানে স্তূপ করে রেখে আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আমরা কীভাবে মেনে নিতে পারি, কত কষ্ট করে সন্তানকে বড় করেছি। সেই সন্তানকে কুকুর-বিড়ালের মত কীভাবে মারা হলো। আমার সন্তানকে কেন মারা হলো, এর উত্তর কে দেবে? প্রস্তুত থাকুন।’

তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানের বিচারের জন্য আমি সবজায়গায় যাব, আমি বসে থাকব না। হাসিনা সারাজীবন স্বজন হারানোর বক্তব্য দিয়ে এসেছে। তার জন্য এত লোককে ফাঁসি দিয়েছে। আমাদের এত মায়ের আর্তনাদ- প্রত্যেক সন্তানের জন্য যদি একবার করে ফাঁসি দেওয়া হয়, তাহলে হাসিনা সরকার এবং তার দোসরদের কতবার ফাঁসি দেওয়া দরকার, আমার প্রশ্ন।’

শহীদ জাবির ইবরাহীমের বাবা নওশের আলী বলেন, ‘শহীদ এবং আহতদের বিচার আমরা আগে চাই। বিচারের আগে কোনো রকম নির্বাচন চাই না। আগে বিচার হবে তারপর সংস্কার হবে। সংস্কার না হলে আরেকটা চব্বিশ অপেক্ষা করছে। আমরা আর বাংলাদেশে চব্বিশ, নব্বই, একাত্তরের রক্তক্ষরণ চাই না।’  

অনুষ্ঠানে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড.

ইউনূস। তাকে আমরা আমন্ত্রণ-আহ্বান জানিয়ে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করেছিলাম, অন্যান্য উপদেষ্টাবৃন্দ রয়েছেন, সেনাপ্রধান রয়েছেন। তারা প্রত্যেকে কিন্তু কমিটমেন্ট দিয়েছিলেন মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এবং বিচারের দায়িত্ব তারা নিচ্ছেন। ফলে এই কমিটমেন্ট থেকে কিন্তু তারা দূরে সরে যেতে পারবেন না, জনগণের সামনে কিন্তু দাঁড়াতে হবে। ফলে আমরা কিন্তু কড়ায় গণ্ডায় জবাবদিহিতা নেব, আমাদের বিচার কতটুকু আদায় হলো, সংস্কার কতটুকু আদায় হল।’

এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, ‘যারা আহত যোদ্ধাদের রক্তের উপরে, শহীদদের জীবনের উপরে এই নতুন বাংলাদেশে কথা বলতে পারছে তারা যদি বিচারের আগে নির্বাচনের কথা বলেন তাদের মুখের উপরে বলবেন, যে রক্তের উপর দাঁড়িয়ে নির্বাচনের কথা বল সেই রক্তের বিচার না চেয়ে বেঈমানের মত নির্বাচনের কথা বলতে লজ্জা লাগে না?’

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে নির্বাচন চাই, কিন্তু যে খুনি হাসিনার হুকুমে এতগুলো প্রাণ গেল সেই খুনি হাসিনার বিচার হওয়ার আগে কোন মুখে শুধু নির্বাচনের কথা বলেন?’

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ‘খুনি হাসিনার বিচারের দাবিতে আমরা একমত। আমরা অলরেডি সবাই শহীদ। আমাদের বুকে আর ভয় নাই। আমরা আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামব। আওয়ামী লীগের খুনি মন্ত্রী, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী যারা হাসিনা রেজিমকে টিকিয়ে রেখেছিলেন, বুদ্ধিজীবী-শিক্ষক যারা খুন-গুম-নির্যাতনের মাধ্যমে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলেন, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যে সংবিধানের কারণে আমাদের এত ভাই শহীদ হয়েছে, সেই সংবিধান ছুঁড়ে ফেলে নতুন করে মাঠে নামতে হবে। নতুন সংবিধান গণপরিষদ বিচার এবং সংস্কারের দাবিতে আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং আহত শহীদ পরিবার আবার মাঠে নামব, রাজপথের লড়াইয়ে দেখা হবে।’

এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, ‘সকল খুনের নির্দেশদাতা ওই খুনি হাসিনা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। অতিদ্রুত শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করতে হবে। এটি সম্ভব না হলে আন্তর্জাতিকভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনার বিচার করতে হবে। খুনিদের বিচার যেন আমরা দেখে যেতে পারি।’

ইফতার অনুষ্ঠানে আরও কথা বলেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনীম জারা, আহত আসিফ শাহরিয়ার। এ সময় এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প ইফত র এনস প র আম দ র র উপর

এছাড়াও পড়ুন:

৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে

জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।

বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।

বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।

এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।

অবরোধকারীদের দাবি

অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হতাহতের ছবি-ভিডিও সরাতে ও ছড়িয়ে পড়া বন্ধে পদক্ষেপ চেয়ে রিট, আদেশ ৩ আগস্ট
  • ৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
  • জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ