বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের দপ্তরের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ খান। কমিশনের মধ্যম সারির এই কর্মকর্তার সাকল্যে বেতন পাওয়ার কথা ৬৮ হাজার ২৮৩ টাকা। তবে তিনি নিজ দপ্তর থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা ঋণ নিয়েছেন। এই মুহূর্তে অফিসের কাছে তাঁর ঋণের দেনা ৫৬ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭০ টাকা। ছয়টি আলাদা ঋণের কিস্তি বাবদ ৫৬ হাজার ৯০৮ টাকা ৭৫ পয়সা কেটে রেখে সব মিলিয়ে তিনি মাস শেষে হাতে পান মাত্র ১১ হাজার ৩৭৪ টাকা ২৫ পয়সা। প্রশ্ন উঠেছে, রাজধানীতে থেকে গৃহিণী স্ত্রী, দুই সন্তানসহ চারজনের সংসার এত কম টাকায় তিনি কীভাবে চালান?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সৎভাবে এই টাকায় চারজনের সংসার চালানো কোনোভাবে সম্ভব না। এ ছাড়া ইউজিসি কর্তৃপক্ষ অনিয়মের মাধ্যমে প্রাপ্যতার চেয়ে অতিরিক্ত ঋণ এই কর্মকর্তার নামে মঞ্জুর করেছে। এর দায় কমিশন এড়াতে পারে না।

সমকালের অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ খান ২০০৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ইউজিসিতে কম্পিউটার অপারেটর পদে যোগ দেন। সর্বশেষ গত ২৯ জানুয়ারি তাঁকে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর আগে তাঁর বেতন আরও কম ছিল। গত জানুয়ারির তাঁর বেতন বিবরণী সমকালের হাতে রয়েছে।
ইউজিসির কর্মকর্তারা জানান, মামুনুর রশিদ খান নিজেকে ইউজিসি চেয়ারম্যানের এপিএস হিসেবে পরিচয় দেন। যদিও ইউজিসির অর্গানোগ্রামে এ ধরনের পদ নেই। তিনি বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকেন। সমাবর্তন আয়োজনে ইউজিসির পক্ষ থেকে তিনি নেপথ্যে সহায়তা করেন বলে তাঁকে নিয়ে সহকর্মীদের মধ্যে আলোচনা আছে। 
মামুনুর রশিদ খান বাড়ি নির্মাণের জন্য সর্বোচ্চ ঋণ পেতে পারেন ১৩ লাখ ২১ হাজার ৩৮৭ টাকা। অথচ ইউজিসি তাঁকে অতিরিক্ত ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৫২ টাকাসহ সব মিলিয়ে ঋণ দিয়েছে ৬১ লাখ ৬৫ হাজার ৪১৩ টাকা। কিস্তি পরিশোধের কারণে এখন তা ৫২ লাখে নেমে এসেছে।

নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, বিপুল অঙ্কের ঋণ থাকলেও মামুনুর রশিদকে বর্তমান কমিশনের আমলে আরও ৪ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। তাঁর ঋণের নথিতে বলা হয়, মামুনুর রশিদের পেনশন আনুতোষিক ৩৫ লাখ ১২ হাজার ১৪ টাকা। আর ভবিষ্য তহবিলের স্থিতি ৭ লাখ ৩১ হাজার ৯০৫ টাকা। এ দুটি মিলিয়ে মোট সমন্বিত স্থিতি ৪২ লাখ ৪৩ হাজার ৯১৯ টাকা। বর্তমান ঋণ, গৃহনির্মাণ ঋণের স্থিতি ১৩ লাখ ৮২ হাজার ৫৯৩ টাকা। করপোরেট গৃহনির্মাণ ঋণের স্থিতি ৩৭ লাখ ৯৮ হাজার ৪৮৭ টাকা। আর যানবাহন ঋণের স্থিতি ৭৭ হাজার ৪০০ টাকাসহ বর্তমান মোট ঋণ ৫২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭০ টাকা।
নথিতে আরও বলা হয়, প্রাপ্যতার চেয়ে তাঁর দেনার পরিমাণ ১০ লাখ ১৪ হাজার ৫৫১ টাকা বেশি। এর আগে তিনি আরও চারবার ভবিষ্য তহবিল থেকে ঋণ চেয়ে আবেদন করেছেন। তবে দেনার পরিমাণ বেশি থাকায় কর্তৃপক্ষ ঋণ মঞ্জুর করেনি। তার পরও সম্প্রতি তাঁকে অতিরিক্ত ৪ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কর্মকর্তাদের বাড়ি নির্মাণে অন্তত দেড় কোটি টাকা অতিরিক্ত ঋণ দিয়েছে ইউজিসি। প্রাপ্যতার অতিরিক্ত টাকা নেওয়া কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টির ব্যাখ্যা চেয়েছে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর।

এত ঋণ নিয়ে কী করেছেন? জানতে চাইলে মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ খান সমকালকে বলেন, ‘আমার মেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে, তাদের পেছনে সব খরচ করেছি। বাড়ি-গাড়ি কিনিনি।’
মাত্র ১১ হাজার টাকা বেতনে কীভাবে চলেন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ চালায়। গ্রামের বাড়ি থেকে চাল-ডাল আনি, মাছ আনি। এভাবে চলি।’
অনিয়ম করে ঋণ নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঋণ তো আমি মঞ্জুর করিনি। আমি অন্যায় করে থাকলে লিখুন। নিয়মের বাইরে আমি কোনো ঋণ নিইনি।’ সর্বশেষ নেওয়া ৪ লাখ টাকা ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আমি নিয়েছি। এটা কোনো অপরাধ নয়।’ চেয়ারম্যানের এপিএস পরিচয় দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এপিএস বলি না নিজেকে। আমি চেয়ারম্যানের সহকারী সচিব।’
এ ব্যাপারে ইউজিসির সচিব ড.

মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, তিনি তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। প্রভিডেন্ট ফান্ডে তাঁর জমা আছে ৬ লাখ টাকা। আমরা ৪ লাখ টাকা তাঁকে দিয়েছি। 

ইউজিসি অতিরিক্ত ঋণ দিয়েছে যাদের
গৃহনির্মাণের জন্য সবচেয়ে বেশি অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছেন ইউজিসির পরিচালক (জেনারেল সার্ভিসেস এ স্টেট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ) জাফর আহম্মদ জাহাঙ্গীর। ‘ইউজিসি সিএইচবিএল প্রাপ্তির সর্বোচ্চ সীমা’ ২৭ লাখ ৮১ হাজার ৭২২ টাকা। অর্থাৎ ঋণ নেওয়ার সময় চাকরির বয়স অনুযায়ী তাঁর পেনশন ও অন্যান্য আনুতোষিক মিলিয়ে ২৭ লাখ টাকা ঋণ পাওয়ার যোগ্য তিনি। তবে এ কর্মকর্তাকে প্রাপ্যতার অতিরিক্ত ৪৫ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। তাঁর মোট ঋণের পরিমাণ ৬৭ লাখ টাকা।
ইউজিসির অতিরিক্ত পরিচালক (স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাশিউরেন্স বিভাগ) মো. আকরাম আলী খান গৃহনির্মাণ ঋণ নেওয়ার সময় ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা ছিলেন। ইউজিসি সিএইচবিএল অনুযায়ী ঋণপ্রাপ্তির সর্বোচ্চ সীমা ২৩ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৭ টাকা। তিনি সব মিলিয়ে ঋণ নিয়েছেন ৫৫ লাখ ২২ হাজার ৯৪৯ টাকা। প্রাপ্যতার সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে তিনি অতিরিক্ত ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৫ টাকা ঋণ নিয়েছেন।

ইউজিসিতে ১৮তম গ্রেডে চাকরি করা অফিস সহায়ক মির্জা হামিদুল ইসলাম অতিরিক্ত ১৪ লাখ ৬৯ হাজার ৩০১ টাকা, মো. আমিনুল ইসলাম অতিরিক্ত ৮ লাখ ৩১ হাজার ৫৬১ টাকা, মো. আবুল হোসেন অতিরিক্ত ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮৭ টাকা এবং মো. নুরুল ইসলাম জীবন ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা অতিরিক্ত ঋণ হিসেবে নিয়েছেন।
ইউজিসির সিএইচবিএলের সর্বোচ্চ ঋণসীমার অতিরিক্ত হিসেবে আরও টাকা তুলে নিয়েছেন ১৬তম গ্রেডের কম্পিউটার অপারেটর মো. আব্দুস সালাম ১১ লাখ ৩৩ হাজার ২১৩ টাকা, ১৮তম গ্রেডের মেশিন অপারেটর মো. শহিদুল ইসলাম ৬ লাখ ৬২ হাজার ১৩১, একই গ্রেডের বার্তা বাহক মাসুদ রানা ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৯৪, অফিস সহায়ক মো. আবুল বাশার ৩ লাখ ২৮ হাজার ৬৫ এবং নিরাপত্তা প্রহরী মো. নুরনবী ৬ লাখ ৯ হাজার ৬৯৮ টাকা।
বেশি ঋণ নেওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে পরিচালক জাফর আহম্মদ জাহাঙ্গীর সমকালকে বলেন, ‘আমি কি ইউজিসির ভল্ট ভেঙে টাকা নিয়েছি? নাকি অর্থ বিভাগের পরিচালককে জোর করে চেকে সই নিয়েছি? সম্পূর্ণ নিয়মনীতি ও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ঋণ নিয়েছি।’

নীতিমালা ভেঙে বাড়তি ঋণ
ইউজিসির করপোরেট সাধারণ গৃহনির্মাণ ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী, পঞ্চম গ্রেড ও তদূর্ধ্ব কর্মচারীর জন্য ৭৫ লাখ টাকা, নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেড ৬৫ লাখ, ১৩তম গ্রেড থেকে দশম গ্রেড ৫৫ লাখ, ১৭তম গ্রেড থেকে ১৪তম গ্রেড ৪০ লাখ এবং ২০তম গ্রেড থেকে ১৮তম গ্রেড পর্যন্ত ৩৫ লাখ টাকা সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা আছে। এ পরিমাণ টাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরি জীবনের শেষ দিকে পেয়ে থাকেন।
এ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ নীতিমালায় ঋণের সিকিউরিটি হিসেবে জমি বা ফ্ল্যাট সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে বন্ধক হিসেবে রাখতে হয়। 
তবে কমিশনের ত্রুটিপূর্ণ করপোরেট সাধারণ গৃহনির্মাণ ঋণের বিপরীতে সিকিউরিটি হিসেবে শুধু কর্মচারীর পেনশন আনুতোষিক বন্ধক হিসেবে রাখা হয়। নীতিমালায় সীমা যাই থাকুক না কেন, একজন কর্মচারী ঋণ দেওয়ার সময় তাঁর চাকরির বয়স অনুযায়ী প্রাপ্য পেনশন ও আনুতোষিকের চেয়ে বেশি ঋণ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অথচ ইউজিসির অন্তত ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি।

ইউজিসির একাধিক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, তারা অনেকে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করলেও বাড়ি তৈরির জন্য ঋণ পাচ্ছেন না। অথচ একই ব্যক্তি একাধিকবার ঋণ পাচ্ছেন। কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান, সদস্যসহ অন্যান্য কর্মকর্তার জোগসাজশে প্রাপ্যতার বাইরে দ্বিগুণ অর্থ ঋণ হিসেবে নিয়েছেন অনেকে। ইউজিসি কীভাবে প্রাপ্যতার অতিরিক্ত ঋণ দেয়? 
প্রাপ্যতার অতিরিক্ত টাকা অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘আমাদের বর্তমান কমিশনের আমলে এমনটা হয়নি। এগুলোর সবই ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে দেওয়া হয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নথি না দেখে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না।’
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ বলেন, ‘গৃহনির্মাণ ঋণ নির্ধারিত সীমার ভেতরেই দেওয়ার কথা। এর বাইরে দেওয়া হলে তা অবশ্যই অন্যায় হয়েছে। এগুলো আমরা খতিয়ে দেখব।’ তিনি বলেন, ‘গৃহনির্মাণ ঋণের সীমা কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বার্থে বাড়ানোর জন্য আমরা চেষ্টা করব।’

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঋণ কর মকর ত র ঋণ ন য় ছ ন ইউজ স র ল ইসল ম অন য য় পর ম ণ ঋণ র স ঋণ দ য় র জন য জ র কর প নশন সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

সকালের সবচেয়ে বরকতময় সময় ব্যবহারের ৭ কৌশল

সকাল মানুষের জীবনের একটি মূল্যবান সময়, যা দিনের বাকি অংশের জন্য সুর নির্ধারণ করে। সকাল আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার, শরীর ও মনকে প্রস্তুত করার এবং দিনের লক্ষ্য অর্জনের একটি সুবর্ণ সুযোগ।

সামাজিক মাধ্যম, কাজের চাপ এবং পারিবারিক দায়িত্ব আমাদের অনেক সময় কেড়ে নেয়, তাই সকালকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে আমরা জীবনকে আরও উৎপাদনশীল করতে পারি।

১. আল্লাহর সঙ্গে দিনের শুরু

ফজরের নামাজের ১৫-২০ মিনিট আগে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া এবং দোয়া করা জীবনকে আমূল বদলে দিতে পারে। এই সময়টি শান্ত ও পবিত্র, যখন আল্লাহর সঙ্গে কোনো বাধা থাকে না।

কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি রাতে, যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন আমাদের রব নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?”’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫)।

তাহাজ্জুদের সময় আপনার হৃদয়ের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করুন। এতে মানসিক শান্তি বাড়বে এবং দিনের জন্য ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। যদি আপনি নতুন হন, সপ্তাহে এক দিন থেকে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে এটি অভ্যাসে পরিণত করুন।

ফজরের আগে অবশিষ্ট সময়ে কোরআন তিলাওয়াত করুন, কারণ কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ভোরে কোরআন পড়া (ফেরেশতাদের) দ্বারা প্রত্যক্ষ করা হয়।’ (সুরা ইসরা. আয়াত: ৭৮)।

আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫২. ফজরের পর ঘুম থেকে দূরে থাকুন

ফজরের নামাজের পর ঘুমিয়ে পড়া অনেকের অভ্যাস, কিন্তু এটি সকালের বরকতময় সময় নষ্ট করে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১)।

এই সময়ে বড় বড় কাজ সহজে সম্পন্ন করা যায়, কারণ এতে আল্লাহর বিশেষ বরকত রয়েছে।

আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন। মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১

ফজরের পর ঘুমের প্রলোভন এড়াতে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। এই সময়ে পড়াশোনা, কোরআন মুখস্থ করা বা কোনো ব্যক্তিগত প্রকল্পে কাজ করা যায়। এটি দিনের বাকি সময়ে অবসরের জন্য সময় বাঁচায় এবং আগামী দিনে আরও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তৈরি করে।

বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।

৩. করণীয় তালিকা তৈরি করুন

একটি করণীয় তালিকা তৈরি করা দিনের পরিকল্পনাকে সুসংগঠিত করে। আমরা প্রায়ই মনে মনে কাজের পরিকল্পনা করি, কিন্তু মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা সীমিত। একটি ডায়েরি বা ফোনের নোট অ্যাপে কাজের তালিকা লিখে রাখলে সময় ও শক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। সম্পন্ন হওয়া কাজগুলো তালিকা থেকে কেটে দেওয়ার একটা আলাদা আনন্দ আছে।

এই তালিকায় দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যও অন্তর্ভুক্ত করুন। যেমন কোরআনের একটি নির্দিষ্ট অংশ মুখস্থ করা বা একটি নতুন দক্ষতা শেখার পরিকল্পনা। এটি আপনাকে দিনের শুরুতে ফোকাসড রাখবে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াবে।

আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।৪. সকালে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন

সকালের মূল্যবান সময় সামাজিক মাধ্যমে বা ফোনে অযথা স্ক্রল করে নষ্ট করা উচিত নয়। অনেকে সকালে ফোন হাতে নিয়ে ‘শুধু একটু দেখে নিই’ ভেবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হারিয়ে ফেলেন। এটি মানসিক চাপ বাড়ায় এবং সকালের শান্তি নষ্ট করে।

নিয়ম করুন, সকালের নাশতা বা কিছু কাজ শুরু না করা পর্যন্ত ফোন বা সামাজিক মাধ্যমে যাবেন না। সকালে খবর পড়া এড়িয়ে চলুন। কারণ, এটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে। যখন ফোন ব্যবহার করবেন, তখন ইতিবাচক ও প্রেরণাদায়ক কনটেন্ট দেখুন, যা আপনার দিনকে উজ্জ্বল করবে।

৫. শরীরচর্চা করুন

শরীরচর্চার উপকারিতা আমরা সবাই জানি। বিশেষ করে এই সময়ে, যখন অনেকে বাড়ি থেকে কাজ করছেন, শরীরচর্চা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। বাড়িতে কাজ করার ফলে ঘাড়ে ও পিঠে ব্যথা, পেশির সমস্যা বাড়ছে।

সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।

ইউটিউবে হাজারো ধরনের ব্যায়ামের ভিডিও পাওয়া যায়, যা বাড়িতে সামান্য জায়গায় করা যায়। যদি বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকে, তবে সকালে ৩০ মিনিট হাঁটুন। লক্ষ্য হলো শরীরকে সচল রাখা এবং শক্তি বৃদ্ধি করা।

আরও পড়ুনসুস্থ জীবন যাপনে মহানবী (সা.)-এর ৯ অভ্যাস২৪ জুলাই ২০২৫সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।৬. পুষ্টিকর নাশতা গ্রহণ

ব্যস্ততার কারণে অনেকে সকালের নাশতা বাদ দেন, কিন্তু গবেষণা বলছে, পুষ্টিকর নাশতা দিনভর মনোযোগ বাড়ায়, অপ্রয়োজনীয় চিনির লোভ কমায় এবং শক্তি জোগায়। নাশতায় উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন ওটস বা মাল্টিগ্রেইন রুটি, স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন অ্যাভোকাডো বা বাদাম, গ্রিক ইয়োগার্ট এবং ফল অন্তর্ভুক্ত করুন।

সময় কম থাকলে একটি স্মুদি তৈরি করুন—পালংশাক, আপেল এবং হিমায়িত কলা ব্লেন্ড করে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর নাশতা তৈরি করা যায়। এটি দিনের শুরুতে সবুজ শাকসবজি গ্রহণের একটি সহজ উপায়।

৭. নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন

বাড়ি থেকে কাজ করার সময় অনেকে ক্যাজুয়াল পোশাকে থাকেন। বরং সকালে সুন্দর পোশাক পরুন, যা আপনার মেজাজ উজ্জ্বল করবে। একটু পছন্দের সুগন্ধি ব্যবহার করলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১

নবীজি (সা) বলেছেন, ‘আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১)। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা শুধু বাহ্যিক নয়, বরং এটি আপনার মানসিক প্রস্তুতি ও দিনের জন্য উৎসাহ বাড়ায়।

সকাল আমাদের দিনের ভিত্তি। ইসলাম আমাদের শেখায় যে সকাল আল্লাহর বরকত নিয়ে আসে। তাহাজ্জুদ, ফজরের পর জাগ্রত থাকা, করণীয় তালিকা তৈরি, স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা, শরীরচর্চা, পুষ্টিকর নাশতা এবং নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন—এই সাতটি অভ্যাস আমাদের সকালকে উৎপাদনশীল করবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সূত্র: দ্য মুসলিম ভাইব ডট কম

আরও পড়ুনরহমতের দুয়ারে হাজিরা১৫ জুন ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ