Prothomalo:
2025-08-01@04:36:05 GMT

গাজায় রমজানেও ফেরে না সুদিন

Published: 11th, March 2025 GMT

মুয়াজ্জিনের সুমধুর কণ্ঠে আজানের ধ্বনি আর ভেসে আসে না। মসজিদগুলোই নেই। বোমার আঘাতে সবকিছু মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। ফজরের আজান শুনে এখন আর রোজা শুরু করতে পারেন না ইসরা আবু কামার। মাগরিবের আজান কানে আসার পর মুখে তুলতে পারেন না ইফতার।

ইসরার বাড়ি ফিলিস্তিনের গাজায়। পবিত্র রমজানের বহু স্মৃতি তাঁর মনের গভীরে জমা। সেসব স্মৃতি এখন কাঁদায় তাঁকে, যেমনটা কাতর করে তোলে উপত্যকার সব মানুষকে। গত বছরের মতো এবারও রমজান তাঁদের জন্য উৎসবের আমেজ নিয়ে আসেনি। আসবেই–বা কীভাবে? ১৫ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নির্মম হামলা গাজাবাসীর জীবন থেকে সব খুশি কেড়ে নিয়েছে।

তবে গত রমজানের তুলনায় এবার গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে রয়েছেন। দেড় মাস হলো যুদ্ধবিরতি চলছে। মুহুর্মুহু বোমার শব্দ এখন আর ভেসে আসে না। তাই তো প্রথম রমজানে একসঙ্গে ইফতার করেছেন রাফার একটি এলাকার বাসিন্দারা। রাস্তার ওপর বিশাল সেই জমায়েতে যোগ দিয়েছিলেন মধ্যবয়স্ক নারী ফাতিমা আবু হেলাল। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাঁর একটিই চাওয়া, ‘আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন, সবকিছু আগের মতো করে দিন।’

আগের দিনে গাজায় একসঙ্গে ইফতার করাটা আনন্দের বিষয় ছিল। রোজা ছিল উপত্যকার মানুষের জন্য উৎসব, আয়োজন, মানুষে মানুষে মিলে যাওয়ার এক উপলক্ষ। সন্ধ্যা হলেই ঘরবাড়ি ও সড়কগুলো আলোকিত হতো লন্ঠন আর রংবেরঙের বাতিতে। প্রতিবেশীদের নিয়ে আয়োজন করা হতো হরেক পদের ইফতারির। রাত গড়িয়ে গেলেও রাস্তায় মানুষের আনাগোনা কমত না। পরিবার–পরিজন নিয়ে তারাবিহর নামাজ আদায় করতে যেতেন মুরব্বিরা। টেলিভিশনে চলত রমজানের অনুষ্ঠান। রাস্তায় রাস্তায় শিশুরা খেলাধুলা করত। ধর্মীয় গান গেয়ে মাতিয়ে রাখত পাড়া।

এবার সেই শিশুদের অনেকেই নেই। বহু মানুষ হারিয়েছেন বাবা–মা, ভাই–বোন, কোলের সন্তান। ইসরায়েলের হামলা এখন পর্যন্ত গাজায় ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়েছে। হারিয়ে যাওয়া কাছের মানুষগুলোর কথা দীর্ঘশ্বাস হয়ে ফেরে নগরীর বাসিন্দা ইসরা আবু কামারের কাছে। তিনি বলেন, ‘এবারের রমজানে আমার ভালোবাসার মানুষগুলো আর নেই। আমার এক ফুফা ছিলেন। প্রতি রমজানে ইফতারে নিমন্ত্রণ করতেন। তাঁকে নির্মমভাবে মেরে ফেলা হয়েছে। বান্ধবী শাইমা, লিনা আর রোয়ার সঙ্গে প্রতিদিন মসজিদে দেখা হতো। তারাও শহীদ হয়েছে।’

পুরোনো দিনগুলো আবার ফিরে পাওয়া এখন গাজাবাসীর কাছে স্বপ্নের মতো। খাবারই তো ঠিকমতো মিলছে না তাঁদের। যুদ্ধবিরতির শুরুর দিকে সীমান্ত খুলে দিয়েছিল ইসরায়েল। তাই বাজার কিছুটা স্বাভাবিক ছিল। কয়েক দিন হলো আবার সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে কমছে মজুত, হু হু করে বাড়ছে দাম। গাজা নগরীর আবু ইস্কান্দার বাজারের বিক্রেতা হাসান আবু রামির হিসাবে, সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার আগে যে টমেটের দাম ছিল ৪০০ টাকা, তা এখন বেড়ে হয়েছে ৭৩০ টাকা। আর এক কেজি রান্নার গ্যাসের দাম ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার টাকা।

পেট চালাতে শেষ সঞ্চয়টাও খরচ করে ফেলেছেন গাজার অনেক বাসিন্দা। এত দাম দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সদাই কেনা তাঁদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। উপত্যকার সাধারণ মানুষ এবার যা পাচ্ছেন, তা দিয়েই সাহ্‌রি–ইফতার সারছেন। এর মধ্যে রয়েছে ভাত, রুটি, মোলোখিয়া (একধরনের স্যুপ) বা সবজি। একটু সচ্ছল কারও কপালে জুটছে মাংস, রুটি ও পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি খাবার মুসাখান। রোজার মাসে ত্রাণের লাইনও দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এক থালা রান্না খাবারের জন্য শিশু থেকে বৃদ্ধ—কাড়াকাড়ি করছেন সবাই।

পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক উসকানিতে। গত বুধবারও তিনি বলেছেন, গাজায় বন্দী বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া না হলে ‘নরকের পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। যুদ্ধবিরতি দ্বিতীয় ধাপে যেতেও গড়িমসি করছে ইসরায়েল সরকার। ফলে গাজায় আবার হামলা শুরুর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যার অর্থ আবারও শুরু হতে পারে মৃত্যু–রক্তপাত।

এত আশঙ্কার মধ্যেও আশা ছাড়তে নারাজ ইসরা আবু কামার। তাঁদের ঘরবাড়ি, মসজিদ ভেঙেছে, তবে বিশ্বাসটা অটুট। ভাঙা বাড়ি ও তাঁবুর মধ্যেই তারাবিহর নামাজ আদায় করছেন। নামাজ শেষে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে জানাচ্ছেন সব চাওয়া–পাওয়ার কথা। মনের প্রশান্তির জন্য তিলাওয়াত করছেন পবিত্র কোরআন। এই দুর্দশার মধ্যেও ইসরা বেঁচে থাকতে চান তাঁর মা–বাবার জন্য, সবাইকে নিয়ে করতে চান ঈদ, ঠিক যেন ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারবিশের কবিতার মতো—‘জীবনকে ভালোবাসি। কারণ, আমি মরে গেলে মায়ের কান্না আমার সহ্য হবে না।’

তথ্যসূত্র: আল–জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য নিউ আরব 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র জন য রমজ ন ইফত র

এছাড়াও পড়ুন:

বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম

উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।

এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে  ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ