Prothomalo:
2025-05-01@04:41:03 GMT

গাজায় রমজানেও ফেরে না সুদিন

Published: 11th, March 2025 GMT

মুয়াজ্জিনের সুমধুর কণ্ঠে আজানের ধ্বনি আর ভেসে আসে না। মসজিদগুলোই নেই। বোমার আঘাতে সবকিছু মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। ফজরের আজান শুনে এখন আর রোজা শুরু করতে পারেন না ইসরা আবু কামার। মাগরিবের আজান কানে আসার পর মুখে তুলতে পারেন না ইফতার।

ইসরার বাড়ি ফিলিস্তিনের গাজায়। পবিত্র রমজানের বহু স্মৃতি তাঁর মনের গভীরে জমা। সেসব স্মৃতি এখন কাঁদায় তাঁকে, যেমনটা কাতর করে তোলে উপত্যকার সব মানুষকে। গত বছরের মতো এবারও রমজান তাঁদের জন্য উৎসবের আমেজ নিয়ে আসেনি। আসবেই–বা কীভাবে? ১৫ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নির্মম হামলা গাজাবাসীর জীবন থেকে সব খুশি কেড়ে নিয়েছে।

তবে গত রমজানের তুলনায় এবার গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে রয়েছেন। দেড় মাস হলো যুদ্ধবিরতি চলছে। মুহুর্মুহু বোমার শব্দ এখন আর ভেসে আসে না। তাই তো প্রথম রমজানে একসঙ্গে ইফতার করেছেন রাফার একটি এলাকার বাসিন্দারা। রাস্তার ওপর বিশাল সেই জমায়েতে যোগ দিয়েছিলেন মধ্যবয়স্ক নারী ফাতিমা আবু হেলাল। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাঁর একটিই চাওয়া, ‘আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন, সবকিছু আগের মতো করে দিন।’

আগের দিনে গাজায় একসঙ্গে ইফতার করাটা আনন্দের বিষয় ছিল। রোজা ছিল উপত্যকার মানুষের জন্য উৎসব, আয়োজন, মানুষে মানুষে মিলে যাওয়ার এক উপলক্ষ। সন্ধ্যা হলেই ঘরবাড়ি ও সড়কগুলো আলোকিত হতো লন্ঠন আর রংবেরঙের বাতিতে। প্রতিবেশীদের নিয়ে আয়োজন করা হতো হরেক পদের ইফতারির। রাত গড়িয়ে গেলেও রাস্তায় মানুষের আনাগোনা কমত না। পরিবার–পরিজন নিয়ে তারাবিহর নামাজ আদায় করতে যেতেন মুরব্বিরা। টেলিভিশনে চলত রমজানের অনুষ্ঠান। রাস্তায় রাস্তায় শিশুরা খেলাধুলা করত। ধর্মীয় গান গেয়ে মাতিয়ে রাখত পাড়া।

এবার সেই শিশুদের অনেকেই নেই। বহু মানুষ হারিয়েছেন বাবা–মা, ভাই–বোন, কোলের সন্তান। ইসরায়েলের হামলা এখন পর্যন্ত গাজায় ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়েছে। হারিয়ে যাওয়া কাছের মানুষগুলোর কথা দীর্ঘশ্বাস হয়ে ফেরে নগরীর বাসিন্দা ইসরা আবু কামারের কাছে। তিনি বলেন, ‘এবারের রমজানে আমার ভালোবাসার মানুষগুলো আর নেই। আমার এক ফুফা ছিলেন। প্রতি রমজানে ইফতারে নিমন্ত্রণ করতেন। তাঁকে নির্মমভাবে মেরে ফেলা হয়েছে। বান্ধবী শাইমা, লিনা আর রোয়ার সঙ্গে প্রতিদিন মসজিদে দেখা হতো। তারাও শহীদ হয়েছে।’

পুরোনো দিনগুলো আবার ফিরে পাওয়া এখন গাজাবাসীর কাছে স্বপ্নের মতো। খাবারই তো ঠিকমতো মিলছে না তাঁদের। যুদ্ধবিরতির শুরুর দিকে সীমান্ত খুলে দিয়েছিল ইসরায়েল। তাই বাজার কিছুটা স্বাভাবিক ছিল। কয়েক দিন হলো আবার সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে কমছে মজুত, হু হু করে বাড়ছে দাম। গাজা নগরীর আবু ইস্কান্দার বাজারের বিক্রেতা হাসান আবু রামির হিসাবে, সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার আগে যে টমেটের দাম ছিল ৪০০ টাকা, তা এখন বেড়ে হয়েছে ৭৩০ টাকা। আর এক কেজি রান্নার গ্যাসের দাম ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার টাকা।

পেট চালাতে শেষ সঞ্চয়টাও খরচ করে ফেলেছেন গাজার অনেক বাসিন্দা। এত দাম দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সদাই কেনা তাঁদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। উপত্যকার সাধারণ মানুষ এবার যা পাচ্ছেন, তা দিয়েই সাহ্‌রি–ইফতার সারছেন। এর মধ্যে রয়েছে ভাত, রুটি, মোলোখিয়া (একধরনের স্যুপ) বা সবজি। একটু সচ্ছল কারও কপালে জুটছে মাংস, রুটি ও পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি খাবার মুসাখান। রোজার মাসে ত্রাণের লাইনও দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এক থালা রান্না খাবারের জন্য শিশু থেকে বৃদ্ধ—কাড়াকাড়ি করছেন সবাই।

পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক উসকানিতে। গত বুধবারও তিনি বলেছেন, গাজায় বন্দী বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া না হলে ‘নরকের পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। যুদ্ধবিরতি দ্বিতীয় ধাপে যেতেও গড়িমসি করছে ইসরায়েল সরকার। ফলে গাজায় আবার হামলা শুরুর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যার অর্থ আবারও শুরু হতে পারে মৃত্যু–রক্তপাত।

এত আশঙ্কার মধ্যেও আশা ছাড়তে নারাজ ইসরা আবু কামার। তাঁদের ঘরবাড়ি, মসজিদ ভেঙেছে, তবে বিশ্বাসটা অটুট। ভাঙা বাড়ি ও তাঁবুর মধ্যেই তারাবিহর নামাজ আদায় করছেন। নামাজ শেষে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে জানাচ্ছেন সব চাওয়া–পাওয়ার কথা। মনের প্রশান্তির জন্য তিলাওয়াত করছেন পবিত্র কোরআন। এই দুর্দশার মধ্যেও ইসরা বেঁচে থাকতে চান তাঁর মা–বাবার জন্য, সবাইকে নিয়ে করতে চান ঈদ, ঠিক যেন ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারবিশের কবিতার মতো—‘জীবনকে ভালোবাসি। কারণ, আমি মরে গেলে মায়ের কান্না আমার সহ্য হবে না।’

তথ্যসূত্র: আল–জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য নিউ আরব 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র জন য রমজ ন ইফত র

এছাড়াও পড়ুন:

রাখাইনে করিডোর কি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আশার আলো দেখাবে

রোহিঙ্গা সংকট ঘিরে নতুন আলোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এর সূত্রপাত হয় সম্প্রতি মিয়ানমার সীমান্তে হিউম্যানিটারিয়ান বা মানবিক করিডর গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্যের মাধ্যমে, যেখানে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এ বিষয়ে একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

গত দুই মাসে রোহিঙ্গা সংকটকে ঘিরে ক্রমাগত নানা আলোচনা ও সমালোচনা চলমান। রোহিঙ্গা সংকটকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে প্রথম ইতিবাচক আলোচনা শুরু হয় মার্চ মাসে, যখন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে পবিত্র রোজার মাসে তাদের সঙ্গে ইফতার করেন।

এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাদের মেহমান উল্লেখ করে বলেন, তিনি প্রত্যাশা করেন আগামী রোজা রোহিঙ্গারা নিজ দেশে করতে পারবেন। 

পরবর্তী সময়ে ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে একটি পার্শ্ব আলোচনার পর মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে নীতিগতভাবে সম্মত।

এ নিয়েও জনসাধারণের মধ্যে একধরনের ধোঁয়াশা কাজ করে। কেননা, আরাকান আর্মিকে উপেক্ষা করে এ ধরনের মন্তব্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে খুব বেশি আশার আলো দেখাবে না। এর বেশ কিছুদিন পরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের সঙ্গে যে সহিংস দ্বন্দ্ব চলমান, সে প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এখনই সম্ভব নয়। 

এই চলমান আলোচনায় নতুন বিতর্ক তৈরি হয় রাখাইনে মানবিক করিডর গড়ে তোলার আলোচনার মাধ্যমে, যদিও এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন, এ বিষয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে তাঁদের এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। এমন নানামুখী আলোচনায় জনমনে বিভ্রান্তি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাখাইনে মানবিক করিডর গড়ে তোলার প্রধান যুক্তি হলো, এতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারে অবস্থানরত জনগোষ্ঠীর সাহায্যার্থে ত্রাণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনের সামগ্রী পাঠানো সম্ভব হবে। 

মানবিক করিডর ও রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে আলোচনার আগে একটু দেখে নেওয়া যাক মানবিক করিডর বলতে আসলে কী বোঝায়। 

জাতিসংঘের ব্যাখ্যা অনুযায়ী সশস্ত্র সংঘাতপূর্ণ এলাকায় সংঘাত বা যুদ্ধ পরিস্থিতির সাময়িক বিরতির জন্য অনেক ধরনের পন্থা অবলম্বন করা হয়, তার মধ্যে একটি হলো মানবিক করিডরের প্রস্তাব।

এই মানবিক করিডরের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এমন একটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়, যেখানে সশস্ত্র সংঘাত যেন না ঘটে। সে বিষয়ে দুই পক্ষ জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একমত হয়। মানবিক করিডরের পরবর্তী ধাপে সেই ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের অধিবাসীদের একটি নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় অথবা সেখানে খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবার ব্যবস্থা হয়। 

এ ধরনের মানবিক করিডরের উদাহরণ আমরা ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে সংঘাতপূর্ণ বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাপটে দেখতে পাই। এখানে সামগ্রিক কর্মকাণ্ড জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হবে, সেটাই প্রত্যাশা করা হয়। বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাপট থেকে আমরা দেখতে পাই, জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক প্রতিষ্ঠান রেডক্রস এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলির মধ্যে অন্যতম হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইহুদি শিশুদের যুক্তরাজ্যে স্থানান্তর, নব্বইয়ের দশকে সারায়েভো সংকট, ২০১৮ সালে সিরিয়ার জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা এবং সর্বশেষ দেখতে পাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে।

যদি আরও রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে হয়, তাহলে তাদের দায়দায়িত্ব নিতে বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত, সেটা ভেবে দেখা জরুরি। কেননা, এখনই এক মিলিয়নের ওপর রোহিঙ্গা বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এর সঙ্গে রয়েছে তাদের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের অর্থনৈতিক সাহায্য কমিয়ে দেওয়া, যা বাংলাদেশের জন্য এক বড় অর্থনৈতিক বোঝা। 

রাখাইনকে ঘিরে মানবিক করিডর গড়ে তোলার এই নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে গবেষক, রাজনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক ও সাধারণ জনগণের মধ্যে বেশ কিছু প্রশ্ন, আশঙ্কা ও দ্বিধা তৈরি হয়েছে।

তবে শঙ্কার পাশাপাশি কোনো কোনো গবেষক মনে করছেন, মানবিক করিডরের প্রস্তাব মেনে নেওয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলার চলমান সংলাপ আরও জোরদার হবে, যা ভবিষ্যতে এই সংকট মোকাবিলায়, বিশেষ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। 

তবে এই ইতিবাচক প্রত্যাশা ছাপিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে কেন্দ্র করে যে দ্বিধা রয়েছে, সেটি হলো এই মানবিক করিডরের মাধ্যমে ভবিষ্যতে কি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত হবে, নাকি আরও বিলম্বিত হবে, নাকি আরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার সুযোগ পাবে। 

ইতিমধ্যে আমরা দেখেছি, এক লাখের ওপরে রোহিঙ্গা শরণার্থী আবারও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ এই দায় যেমন এড়িয়ে যেতে পারছে না, তেমনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনার ভারও বহন করতেও হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ তাদের অন্যান্য সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে মানবিক করিডর কতটা বাস্তবসম্মত হবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। কেননা, কোনো বিস্তারিত দিকনির্দেশনা আমাদের সামনে নেই। 

অতীতের বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপট থেকে আমরা দেখতে পাই, মানবিক করিডরের অন্যতম প্রধান ব্যবহার হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ জাতিগোষ্ঠীকে সংঘাতপূর্ণ স্থান থেকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা। যেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে চলমান অনুপ্রবেশ কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, সেখানে মানবিক করিডরের মাধ্যমে আরও বৃহৎ অংশের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়ায় শুরু অস্বাভাবিক নয়। 

এ প্রেক্ষাপটে যদি আরও রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে হয়, তাহলে তাদের দায়দায়িত্ব নিতে বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত, সেটা ভেবে দেখা জরুরি। কেননা, এখনই এক মিলিয়নের ওপর রোহিঙ্গা বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এর সঙ্গে রয়েছে তাদের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের অর্থনৈতিক সাহায্য কমিয়ে দেওয়া, যা বাংলাদেশের জন্য এক বড় অর্থনৈতিক বোঝা। 

এর বাইরে আরেকটি চিন্তার জায়গা হলো সীমান্ত এলাকা বাংলাদেশ কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে, সেটি। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি দেখলে বোঝা যায়, সীমান্ত প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের বর্তমান প্রচেষ্টা খুব যে সুখকর, সেটি বলা যাবে না।

এ ছাড়া এই অঞ্চল বিভিন্ন কারণে মাদক ব্যবসা, মানব পাচার, সহিংসতা ও অন্যান্য নিরাপত্তাঝুঁকির জন্য একটি অন্যতম হটস্পট, যা নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের নানাভাবে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয় কি না, সেটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। মানবিক করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হতে পারে, সে বিষয়েও যথাযথ পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে এবং নিজেদের স্বার্থেই আমাদের স্বচ্ছ থাকতে হবে। 

এর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোসহ অন্য অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করারও বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কেননা, এর পরবর্তী পরিণতি ও ব্যবস্থাপনার দায়দায়িত্ব ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারকেই গ্রহণ ও বহন করতে হবে। যদিও জাতিসংঘের মানবিক করিডরের প্রস্তাব বেশ পুরোনো, কিন্তু তড়িঘড়ি করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হিতে বিপরীত হতে পারে। শরণার্থী বিষয়ে একটি টেকসই রূপরেখা এবং পরিকল্পনানীতি না থাকার কারণে সরকারকে অ্যাডহক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যা অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যাজনক হয়। 

এসব বিবেচনায় নিয়ে একজন গবেষক হিসেবে আমি বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গাবিষয়ক একটি জাতীয় রোডম্যাপ বা রূপরেখা এবং শরণার্থীবিষয়ক নীতি প্রণয়ন করার পক্ষে কথা বলে আসছি। আমাদের সে ধরনের কোনো দৃশ্যমান পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি বিগত সময়ে ছিল না। বিশেষ করে যদি প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হয় এবং জাতিসংঘের প্রস্তাবিত মানবিক করিডর আমাদের প্রত্যাশামতো কাজ না করে, তাহলে বিকল্প কী হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি আমাদের থাকা উচিত। সেটি না হলে রোহিঙ্গা সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করবে এবং তাদের নিজ দেশে স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন একটি ‘মিথ’ হিসেবে থেকে যাবে, যা আমাদের ও রোহিঙ্গা উভয়ের জন্যই হতাশার একটি বিষয় হবে। 

বুলবুল সিদ্দিকী সহযোগী অধ্যাপক, রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ