নোয়াখালীর কবিরহাটে বাজারের ইজারার দরপত্র মূল্যায়ন শেষে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কবিরহাট উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কবিরহাট উপজেলার বার্ষিক হাটবাজার ইজারার বিজ্ঞপ্তি দেয় উপজেলা প্রশাসন। এরপর অনেক নতুন ও পুরোনো দরদাতা দরপত্র জমা দেন। আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ওই দরপত্র মূল্যায়ন শেষে বাজার ইজারার প্রথম ধাপের কার্যক্রম শেষ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূদম পুষ্প চাকমা।

সূত্র জানায়, দরপত্র মূল্যায়ন শেষে ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের আমিন বাজারের ইজারার সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হন একই উপজেলার বাসিন্দা চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুল হাসান ওরফে আকাশ। তিনি দর দেন ২৩ লাখ টাকা। একই বাজারের দ্বিতীয় নিকটতম দরদাতা ছিলেন ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন যুবদলের সদস্যসচিব মো.

সুজন, তাঁদের পক্ষে দর দেওয়া হয় ২২ লাখ টাকা।

কামরুল হাসানকে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত ঘোষণার পর ইউএনও কার্যালয়ের সামনে দুই পক্ষ প্রথমে বাগ্‌বিতণ্ডা, পরে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে কবিরহাট থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহত ব্যক্তিদের ২৫০ শয্যার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালসহ স্থানীয় একাধিক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুল হাসান বলেন, প্রকাশ্যে ডাকের মাধ্যমে সেরা দরদাতা নির্বাচন করা হয়েছে। যাঁরা অতীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইজারা নিয়েছিলেন, তাঁরা এবার না পেয়ে হামলা করেছেন।

অপর দিকে ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন যুবদলের সদস্যসচিব মো. সুজনের ছোট ভাই সাবেক ছাত্রদল নেতা মিরাজুল ইসলাম দাবি করেন, ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতারা তাঁর ভাই সুজনের নামে বাজার ইজারা নেওয়ার কথা বলে তাঁর (সুজনের) কাছ থেকে কাগজে সইও নিয়েছিলেন। কিন্তু ইজারার সময় দেখা যায়, কামরুল হাসান নামের একজন উচ্চ দর দিয়ে বাজার তাঁর নামে ইজারা নিয়ে নিয়ে যান।

মিরাজের অভিযোগ, তাঁরা বাজার ইজারাকে কেন্দ্র করে আগেই পরিষদ এলাকায় লোকজন জড়ো করেন এবং তাঁদের লোকজনের ওপর হামলা করেন। এতে তাঁদের ৯-১০ জন আহত হয়েছেন।

কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহীন মিয়া বলেন, ইজারা এক পক্ষ পেয়েছে, আরেক পক্ষ পায়নি। এটা নিয়ে মনোমালিন্য ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সবাইকে বের করে দেয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

ইউএনও পূদম পুষ্প চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ইজারা শেষে ইজারায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সম্ভবত তর্কাতর্কি, হাতাহাতি হয়েছে। তাঁর কার্যালয়ে কিছু হয়নি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব জ র ইজ র র ইজ র র র সদস য দরপত র স ঘর ষ দরদ ত উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 

ফেস্টুন অপসারণ করায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল আহমেদকে শাসিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। তিনি ইউএনওকে আগের স্থানেই ফেস্টুন লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “তা না হলে যেটা করা দরকার, সেটাই করব।”

এই বিএনপি নেতার নাম কে এম জুয়েল। তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুলে তার বাড়ি। 

গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের সড়ক বিভাজকে থাকা বিভিন্ন দলের ফেস্টুন অপসারণ করেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। বিষয়টি জানতে পেরে ইউএনওকে ফোন করে ধমকান জুয়েল।

কে এম জুয়েলের ফোনকল রেকর্ড পাওয়া গেছে। এতে শোনা গেছে, কে এম জুয়েল বলেছেন- “আজকে একটা ঘটনা ঘটেছে, আমি শুনেছি। আমি ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল বলছি, সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট। আপনার গোদাগাড়ী থানার প্রোপারে যে পোস্টার সরিয়েছেন, এই বিষয়ে কিছুক্ষণ আগে আমাকে ইনফর্ম করা হয়েছে। সেখানে আমার পোস্টার ছিল। জামায়াত-বিএনপির পোস্টার ছিল। আপনি যে হটাইছেন, এর কারণ কী? কোনো পরিপত্র আছে, না ইচ্ছে করেই?”

ইউএনও তখন বলেন, “জনগণ অভিযোগ দিয়েছে।” জুয়েল বলেন, “জনগণ তো অনেক অভিযোগ দিয়েছে। সমগ্র গোদাগাড়ী থানাতে ভর্তি হয়ে আছে পোস্টার। তোলেন, সব তোলেন।”

এ সময় ইউএনও কিছু বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে জুয়েল বলেন, “শোনেন, আমি যেটা বলছি লিগ্যাল রাইট নিয়ে বলছি, সেটার সঠিক অ্যানসার করবেন। আপনি কেন ওই জায়গার পোস্টার তুলেছেন, আর অন্য জায়গার তুলছেন না কেন? আমি ঢাকাতে আছি, আমি আসতেছি।”

ইউএনও বলেন, “আচ্ছা ঠিক আছে।” জুয়েল বলেন, “না, আপনি যেখান থেকে পোস্টার তুলেছেন, সেখানে আপনি সাবমিট করবেন পোস্টার।” কথা না বাড়িয়ে ইউএনও বলেন, “ঠিক আছে।”

এ সময় আরো ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি নেতা জুয়েল বলেন, “কালকে যেন আমরা ওখানে দেখতে পাই, পোস্টার যেখানে ছিল। ঠিক আছে মানে কী? অবশ্যই করবেন। না হলে যেটা করা দরকার সেটাই করব। আপনার এগেইনেস্টে যেরকম স্টেপ নেওয়া দরকার, সেটাই আমি করব। বিশেষ করে আমরা করব। আমার নেতার ছবি তুলেছেন আপনি ওখান থেকে। জাস্ট রিমেম্বার ইট।”

জুয়েল বলতে থাকেন, “নরসিংদী বাড়ি দেখান আপনি, না? কোন দল থেকে আসছেন আপনি? কোন দল থেকে এসেছেন? কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেছেন আপনি? কালকে পোস্টার ভদ্রলোকের মতো লাগাবেন। ফাইজলামি! এহ, বিশাল ব্যাপার। উনি টিএনও হয়ে গোদাগাড়ীতে আসছেন।”

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, “ডাইংপাড়া মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন এরকম পর্যায়ে ছিল যে, যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি পৌরসভার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ ছিল। স্থানীয় জনগণ এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরানোর জন্য। দুই-তিনবার মৌখিকভাবে ও লিখিত আকারে জানানো হয়েছিল। না সরানোর কারণে ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে পৌরসভায় রাখা হয়েছে।”

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভাতেও আলোচনা হয়েছিল। সেখান থেকে সকল রাজনৈতিক দলের পোস্টারই পৌরসভার পক্ষ থেকে সরানো হয়েছে। তবে, বিএনপি নেতা কে এম জুয়েলের ফোনে শাসানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা কে এম জুয়েল বলেন, “ইউএনওর কাছে জনগণ অভিযোগ করেছে, আর আমরা কি মানুষ না? আমরা জানোয়ার? আমার ছবি তুলে ফেলুক আপত্তি নাই। আমার নেতার ছবিতে হাত দিয়েছে কেন? তার কাছে কি নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পোস্টার তুলে ফেলতে? তিন মাসের মধ্যে কি নির্বাচন? উনি জাস্টিস করতেন, আমার কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু গরু-ছাগলের মতো আচরণ করবেন, তা তো হয় না।”

বিষয়টি নিয়ে কোথাও আলোচনা হয়নি, ইউএনও কোনো চিঠিও দেননি, দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “গতকাল আমার এক লোককে ডেকে ইউএনও বলেছেন, যেখানে পোস্টার ছিল, দয়া করে আপনারা লাগিয়ে নেন। কিন্তু, আমরা তো লাগাব না। ইউএনওকেই লাগাতে হবে।”

উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা সদরের এসব ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেন এক ব্যক্তি। এক মাসেও সেগুলো অপসারণ না হওয়ায় পরবর্তী মাসের সভাতেও বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। ওই সভায় ট্রাফিক পুলিশ আপত্তি করেছিল যে, ফেস্টুনের কারণে রাস্তার একপাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যায় না। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দুটি সভার মধ্যে প্রথম সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল ছিলেন না। দুই সভার মাঝে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি পুনর্গঠন করা হলে তিনি পরবর্তী সভায় উপস্থিত ছিলেন।

তবে, কোনো আলোচনা হয়নি দাবি করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য। পোস্টার নিয়ে কোনো আলোচনা সভায় হয়নি। ইউএনও আমাদের না জানিয়ে এভাবে ফেস্টুন অপসারণ করে ঠিক করেননি। সেখানে আমাদের নেতার ছবি ছিল।”

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপির সাবেক নেতার হুমকি, সরিয়ে ফেলা পোস্টার ইউএনওকেই লাগাতে হবে
  • ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 
  • মেঘনায় নদীতে অবৈধ বালু তোলায় ব্যবহৃত ৭টি খননযন্ত্র ও ১টি বাল্কহেড জব্দ
  • নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুল
  • পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন