দুটি জানাজা শেষে আজ শুক্রবার রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হলো অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মরদেহ। বাবা–মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য।

রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক। ৬ মার্চ ইফতার কেনার জন্য ঢাকা ক্লাবে (রমনায়) গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলার মধ্যেই পড়ে যান এই শিক্ষক। তাঁকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসা শুরুর পর অধ্যাপক আরেফিনকে নিউরো আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এর পর থেকে তিনি সেখানে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডির গ্রিন রোড এলাকায় বায়তুল আকসা মসজিদে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অধ্যাপক আরেফিনের শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা অংশ নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানও জানাজায় অংশ নেন।

জানাজা শেষে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক অত্যন্ত বিনয়ী ও সজ্জন মানুষ ছিলেন। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় মসজিদে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের জন্য বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি আরও বলেন, ‘সাবেক উপাচার্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যে সম্মাননা দেওয়া হয়ে থাকে, অধ্যাপক আরেফিনকে তা আমরা পরিপূর্ণভাবে দিচ্ছি। তাঁর অসুস্থতার সময় পরিবারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল।’

জুমার নামাজের পর ধানমন্ডির ঈদগাহ মাঠে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রয়াত আরেফিন সিদ্দিকের শিক্ষার্থী, সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ী ও স্বজনেরা এই জানাজায় অংশ নেন। এই জানাজা শেষে অধ্যাপক আরেফিনের মরদেহ আজিমপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাবা–মায়ের কবরের পাশে মরদেহ দাফন করা হয়।

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের জন্ম ১৯৫৩ সালের ২৬ অক্টোবর ঢাকার ধানমন্ডিতে। তাঁর পুরো নাম আবু আহসান মো.

সামসুল আরেফিন সিদ্দিক। পৈতৃক নিবাস ছিল নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষে ১৯৮০ সালে এই বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন আরেফিন সিদ্দিক। ভারতের মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন আরেফিন সিদ্দিক।

২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক। ২০১৭ সালে তিনি উপাচার্যের দায়িত্ব পালন শেষ করে আবারও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ২০২০ সালের জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে অবসরে যান তিনি। অধ্যাপক আরেফিন একাধিকবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরে যাওয়ার পর আরেফিন সিদ্দিক বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ক্যাম্পাসে জানাজা না হওয়া নিয়ে সমালোচনা

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টানা ৮ বছর উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁর শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের অনেকে চেয়েছিলেন সেই ক্যাম্পাসে তাঁর অন্তত একটি জানাজা হোক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্যাম্পাস বা শহীদ মিনারে আরেফিন সিদ্দিকের মরদেহ নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়টি নিয়ে আরেফিন সিদ্দিকের শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ীদের অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। অবশ্য এ বিষয়ে আরেফিন সিদ্দিকের ছাত্র ও পরে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে তাঁর সহকর্মী সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম আজ সকালে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আরেফিন স্যারের জানাজা ঢাবিতে হতে বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটির (কর্তৃপক্ষ) কোনো বাধা বা অসহযোগিতা নেই। স্যারের পরিবার সেলফ সেন্সরড হয়ে ঢাবিতে জানাজার আয়োজন করছে না। ঢাবি পাবলিক রিলেশনস প্রধান তা–ই জানালেন।’

এদিকে গ্রিন রোড এলাকায় বায়তুল আকসা মসজিদে প্রথম জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানও এ প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, পরিবারের সিদ্ধান্তক্রমে তাঁর (অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক) দুটি জানাজার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তাঁর দাফনের বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা এই সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানাই।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর ফ ন স দ দ ক র ন য় জ আহম দ খ ন গণয গ য গ ও স উপ চ র য সহকর ম ব দ কত পর ব র মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

অফিসে প্রেম করার আগে জেনে রাখুন

আমরা যাঁরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করি, তাঁদের দিনের বড় একটি অংশ সহকর্মীদের সঙ্গেই কাটে। আসা–যাওয়া আর ঘুমের সময়টুকু বাদ দিলে দেখা যাবে, পরিবারের সদস্যদের চেয়ে তাঁদের সঙ্গেই কাটছে বেশি সময়। স্বাভাবিকভাবেই সহকর্মীদের সঙ্গে একধরনের সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়, তাঁরা হয়ে ওঠেন বন্ধু, মনের কথা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গী। কখনো কখনো এই সম্পর্ক পেশাগত সীমারেখাও ছাড়িয়ে যায়।

প্রশ্ন হলো, সহকর্মীদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে এই সীমারেখা কোথায় টানতে হবে? অফিসে বা বাইরে বিপরীত লিঙ্গের সহকর্মীর সঙ্গে কোন কথাটা বলা যাবে, কোন ঠাট্টাটা করা যাবে, মোটের ওপর কতটা মেলামেশা করা যাবে?

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে কোল্ডপ্লের কনসার্ট দেখতে গিয়ে অন্তরঙ্গ অবস্থায় ক্যামেরায় ধরা পড়েন মার্কিন সফটওয়্যার সংস্থা অ্যাস্ট্রোনোমার প্রধান নির্বাহী অ্যান্ডি বায়রন ও সংস্থাটির এইচআর প্রধান ক্রিস্টিন ক্যাবট। যাঁদের দুজনেরই রয়েছে আলাদা পরিবার। তাঁদের সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই অফিসের ক্ষেত্রে সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যের সম্পর্ক নৈতিকতার কোন মানদণ্ড মেনে চলবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

সহকর্মীর সঙ্গে কেমন আচরণ করবেন সেসব নিয়ে প্রতিটি ভালো অফিসেই আচরণবিধি থাকে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অফিসে প্রেম করার আগে জেনে রাখুন
  • দুই ভাইয়ের গ্রেপ্তারের খবর ‘বিশ্বাস করতে পারছেন না’ বাবা