সিপিবি কার্যালয়ে ধর্ষণবিরোধী কর্মসূচি, নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
Published: 15th, March 2025 GMT
ঢাকার পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ শনিবার সকাল থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অবস্থান দেখা গেছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করেছেন দলের নেতা-কর্মীরা। বিকেলেও তাঁদের কর্মসূচি রয়েছে।
জানা গেছে, সিপিবি কার্যালয় দখল ও হামলার হুমকি রয়েছে। এ বিষয়ে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী নাসিরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কার্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক সাজেদুল হক রুবেল সাংবাদিকদের বলেন, সারা দেশে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন চলছে। কমিউনিস্ট পার্টির ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ কমিটি গতকালও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। তারই অংশ হিসেবে আজ সকালে কালো পতাকা উত্তোলন ও বিকেলে শোকমিছিল কর্মসূচির ডাক দিয়েছে দেশের ১৫টি বাম ও গণতান্ত্রিক ছাত্র ও যুব সংগঠন। যেভাবে ফ্যাসিস্টবিরোধী, স্বৈরতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা–কর্মীরা অংশ নিয়েছিলেন, আজকেও তাঁরা ঠিক একইভাবে অংশ নেবেন।
সিপিবি কার্যালয়ের সামনে সেনাবাহিনীর টহল। আজ শনিবার সকালে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের আগে লটারির মাধ্যমে ডিসি-এসপি রদবদল চান প্রধান উপদেষ্টা
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) রদবদল করা হবে। আর এসব রদবদল লটারির মাধ্যমে করা যায় কি না, সেটি ভেবে দেখতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে নির্বাচনের জন্য নানা ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
পরে রাত আটটায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওই বৈঠকের আলোচনা ও নির্দেশনাগুলো তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। এ সময় প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলে হবে। এর অর্থ হলো নির্বাচনের জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দরকার, সেটি প্রস্তুত করতে যা কিছু প্রয়োজন, তা এখন থেকেই শুরু করতে হবে।
গত জুনে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়। ওই বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা আসে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের পবিত্র রমজান মাসের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে।
আরও পড়ুননির্বাচনের সব প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যে নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার১ ঘণ্টা আগেএখন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতির প্রক্রিয়ার কথা জানাল সরকার। বুধবার প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে বৈঠকটি মূলত আইনশৃঙ্খলা বিষয় নিয়ে হলেও তাতে নির্বাচনসংক্রান্ত নানা প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বৈঠকে বলা হয়েছে, অনেক সময় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের ভোট বিষয়ে প্রশিক্ষণের অভাব থাকে। তাঁদের কীভাবে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে ভোটের জন্য প্রস্তুত করা যায়, সে বিষয়েও নির্দেশনা এসেছে।
এ ছাড়া আগে নির্বাচনের সময় চার দিনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হতো। এবার বলা হচ্ছে, এটাকে কীভাবে সাত দিনের জন্য মোতায়েন করা যায়।
আরও পড়ুনতিন নির্বাচনে দায়িত্বপালন করা কর্মকর্তাদের এবার সরিয়ে রাখার চিন্তা৫৬ মিনিট আগেপ্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনের আগে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) রদবদল করার কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, কর্মকর্তাদের পরিচিতি নম্বর ধরে লটারির মাধ্যমে এই নিয়োগ করা যায় কি না, সেটি ভেবে দেখতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা, যাতে এসব নিয়োগ নিয়ে কেউ প্রভাব খাটাতে না পারেন।
আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, বিগত সরকারের আমলে একটি উপনির্বাচনে দেখা গেছে নির্বাচন কমিশন সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে পুরো একটি আসনের নির্বাচন বাতিল করে দিয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে আইন সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনের এ ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছিল। তারা এখন শুধু নির্দিষ্ট কেন্দ্রের নির্বাচন বাতিল করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের এই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া যায় কি না, ব্যাপক অনিয়ম হলে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করতে পারে কি না, সে বিষয়েও আইনি দিক খতিয়ে দেখতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
অনেক নতুন ভোটার কীভাবে ভোট দেবেন, সে জন্য ভোটারদের প্রশিক্ষণের বিষয়ও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে ১৭ হাজার নতুন নিয়োগ
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক যত প্রস্তুতি, তা ডিসেম্বরের মধ্যে নিতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে (পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড) ১৭ হাজার নতুন সদস্য নেওয়া হচ্ছে। তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ যেন এ সময়ের মধ্যে শেষ হয়, সে বিষয়েও প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন।
শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে অনেক পাঁয়তারা হয়, যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে আগামী মাসগুলোতে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট লাখের মতো সদস্য নির্বাচনের সময় মাঠে থাকবেন। প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়, সে বিষয়ে এই আট লাখ সদস্যকেই যেন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই কাজটি করতে হবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে।
প্রেস সচিব বলেন, এবার অনেকেই প্রথম ভোট দেবেন। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছিল। বিপুলসংখ্যক তরুণ ভোট দিতে পারেননি। কীভাবে ১৮ থেকে ৩৩ বছর বয়সীদের পৃথক ভোটার তালিকা করা যায়, সেটি খতিয়ে দেখতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তাদের জন্য যাতে আলাদা ভোটিং বুথ রাখা যায়, সেটিও তিনি দেখতে বলেছেন।
সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে
বর্তমানে বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে। নির্বাচন পর্যন্ত সেনাবাহিনী এ ক্ষমতা নিয়ে মাঠে থাকবে কি না অথবা নির্বাচনে তাদের ভূমিকা কী থাকবে—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সেনাবাহিনী নির্বাচনের দিন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে।
এখন কোথাও কোথাও পুলিশ প্রশাসন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পক্ষ হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচনের সময় তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, এ জন্যই প্রধান উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিবিড় প্রশিক্ষণের কথা বলেছেন, যেন ভোটের জন্য প্রস্তুত থাকে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের দিন এক থানার পুলিশকে আরেক থানায় দেওয়ার যে প্রস্তাব, সেটি প্রধান উপদেষ্টা বিবেচনা করতে বলেছেন।
‘মবের’ বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে। যারা অপরাধগুলো করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হওয়ার কথা বলছেন।