ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে জড়িত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক নারী শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার অবৈধ অভিবাসীদের জন্য তৈরি করা নতুন অ্যাপ ব্যবহার করে ভারতে ফিরে যান তিনি।

মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (ডিএইচএস) শুক্রবার জানিয়েছে, রঞ্জনী শ্রীনিবাসন একজন ভারতীয় নাগরিক। তিনি শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সময় ইসারয়েলবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন তিনি। হামাস একটি নির্ধারিত সন্ত্রাসী সংগঠন। এর প্রতি সমর্থনের কারণে পররাষ্ট্রদপ্তর তার শিক্ষার্থী ভিসা বাতিল করেছে।

ডিএইচএস নিশ্চিত করেছে, যে মঙ্গলবার শ্রীনিবাসন সিবিপি হোম অ্যাপ ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেছেন। এই নতুন অ্যাপে অবৈধ অভিবাসীদের স্বেচ্ছায় দেশত্যাগের জন্য একটি বিশেষ ফিচার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। 

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব ক্রিস্টি নোম শুক্রবার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও পড়াশোনার জন্য ভিসা পাওয়া একটি বিশেষ অধিকার। যখন কেউ সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে, তখন সেই অধিকার বাতিল হওয়া উচিত এবং তাদের এই দেশে থাকার অনুমতি থাকা উচিত নয়।’

নোম আরও বলেন, ‘আমি খুশি যে, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সন্ত্রাসবাদ সহানুভূতিশীল ব্যক্তি সিবিপি হোম অ্যাপ ব্যবহার করে নিজে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছেন।’

ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বাইডেন-যুগের সিবিপি হোম অ্যাপ বাতিল করে। যা বিদেশি নাগরিকদের ব্যাপকভাবে মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করার অনুমতি দিত। প্রশাসন পরে এটি নতুনভাবে ব্র্যান্ড করে সিবিপি হোম অ্যাপ হিসেবে চালু করে। যা এখন অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের ইচ্ছার তথ্য জমা দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

শ্রীনিবাসনের স্বেচ্ছায় দেশত্যাগের ঘটনা ঘটে এমন এক সময়ে যখন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যান্টি-ইসরায়েল বিক্ষোভের অন্যতম প্রধান নেতা সিরিয়ায় জন্মগ্রহণ করা মাহমুদ খলিলকে গত ৮ মার্চ অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ (আইসিই) সংস্থা গ্রেপ্তার করে। তিনি বর্তমানে লুইজিয়ানার একটি আটক কেন্দ্রে রয়েছেন এবং তার বহিষ্কার সংক্রান্ত মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

শ্রীনিবাসন ও খলিল উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হওয়া সহিংস বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যার ফলে কলাম্বিয়া কর্তৃপক্ষ নিউইয়র্ক পুলিশকে ডাকতে বাধ্য হয়। অ্যান্টি-ইসরায়েল আন্দোলনের সদস্যদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসের সম্পত্তি দখল, ইহুদি ছাত্রদের হয়রানি এবং হামাসপন্থি প্রচারসামগ্রী বিতরণ করার অভিযোগ রয়েছে।

২০২৪ সালে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভগুলো যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলমান ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশ ছিল। যা ৭ অক্টোবর হামাস সন্ত্রাসীদের দ্বারা সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের পদক্ষেপের বিরোধিতা করছিল। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অ্যান্টি-সেমিটিক ও উগ্র ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অ্যান্টি-সেমিটিজম মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

ট্রাম্প প্রশাসন মার্চ মাসে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার তহবিল বাতিল করে। কারণ, তারা ক্যাম্পাসে অ্যান্টি-সেমিটিক কার্যকলাপ দমন করতে ব্যর্থ হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। হোয়াইট হাউসের চাপে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা এখন আগ্রাসী আন্দোলনে জড়িত ছাত্রদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন। যার মধ্যে বহুবর্ষের সাসপেনশন, সাময়িকভাবে ডিগ্রি বাতিল এবং সম্পূর্ণ বহিষ্কার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। খলিল একমাত্র কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারী নন, যাকে অভিবাসন কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার করেছেন।

ডিএইচএস শুক্রবার জানিয়েছে, নিউ জার্সির নিউয়ার্ক থেকে আইসিই এজেন্টরা লেকা কোরদিয়া নামে এক ফিলিস্তিনি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি ওয়েস্ট ব্যাংক থেকে এসেছিলেন এবং তার মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্র ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। 

জানুয়ারি ২০২২ সালে উপস্থিতির অভাবে তার শিক্ষার্থী ভিসা বাতিল করা হলেও, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন এবং ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে কলম্বিয়ার ক্যাম্পাসে প্রো-হামাস কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ব যবহ র কর কল ম ব য ব ত ল কর কলম ব য র জন য ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ