পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হিমশৈলের (আইসবার্গ) নাম এ২৩এ। অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে অবস্থিত বিশাল এই হিমশৈল আকারে হিমালয়ের চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বড়। বিশাল আকারের হিমশৈলটি প্রতিদিন প্রায় ৩০ কিলোমিটার গতিতে আটলান্টিকের পাড়ে অবস্থিত দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, ১৯৮৬ সালে অ্যান্টার্কটিকার রনে-ফিলচনার আইস শেল্ফ অঞ্চলে তৈরি হয়েছে এ২৩এ নামের হিমশৈল। এরপর ২০২০ সাল থেকে ধীরগতিতে চলতে শুরু করলেও বর্তমানে হিমশৈলটি প্রতিদিন প্রায় ৩০ কিলোমিটার গতিতে স্থান পরিবর্তন করছে। শিগগিরই সমুদ্রের উষ্ণ পানিতে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে এটি ভেঙে যাবে। এর ফলে হিমশৈলটির কারণে আশপাশের এলাকার সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র বিস্তৃত হতে পারে।

দিগন্তজুড়ে বিস্তৃত এ২৩এ হিমশৈলটির ওজন প্রায় এক লাখ টন। গত বছর ছয় মাস সাগরের স্রোতে আটকে ছিল এটি। তবে বর্তমানে দ্রুতগতিতে স্থান পরিবর্তনের ফলে শিগগিরই হিমশৈলটি উষ্ণ পানিতে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে গলে যাবে। এর ফলে পেঙ্গুইন ও সিলের বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রসঙ্গত, অতীতে যখনই স্থলভাগের সঙ্গে কোনো হিমশৈলের সংঘর্ষ হয়েছে তখনই অনেক পেঙ্গুইনছানা ও সিলশাবকের মৃত্যু হয়েছে। আর তাই এক লাখ টন ওজনের এই বিশাল হিমশৈল এখন অ্যান্টার্কটিক এলাকার আতঙ্ক। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সমুদ্রের জেট স্ট্রিম বা স্রোতের মধ্যে আছে হিমশৈলটি, যে কারণে আঘাতের মাত্রা অনেক বেশি হতে পারে।

সূত্র: ইকোনমিক টাইমস

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ