কুমিল্লায় ফেসবুকে মন্তব্যের জেরে বিএনপি–জামায়াতের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ, বাড়িঘর ভাঙচুর
Published: 18th, March 2025 GMT
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের পুরোনো একটি পোস্টে মন্তব্য করাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি এবং কেউ থানায় মামলাও করেনি বলে জানিয়েছেন চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিলাল উদ্দিন আহমেদ।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে জামায়াতের পক্ষের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মোহাম্মদ তারেক, আবু হানিফ, জাহিদ হোসেন, শাকিল হোসেন, সজীব হোসেন, নাছির উদ্দিন, একরামুল হক ও বিএনপির পক্ষের মোহাম্মদ সবুজ, নাহিদ হোসেন, রিসাদ মিয়া, মো.
পুলিশ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলকরা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের জামায়াতের সমর্থক মোহাম্মদ তারেক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২০২০ সালে একটি ধর্ষণের মামলা হয়। তখন বিষয়টি নিয়ে অনেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। ১৩ মার্চ পুরোনো একটি স্ট্যাটাসে মন্তব্য করেন স্থানীয় যুবদলের কর্মী হৃদয়। এর জেরে ১৬ মার্চ হৃদয়কে লক্ষ্মীপুর বাজারে মারধর করেন জামায়াত–শিবিরের নেতা–কর্মীরা। পরে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার জন্য গতকাল রাতে বৈঠক বসে। বৈঠককে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের দুই শতাধিক লোক জড়ো হন। রাত আটটার দিকে বৈঠক চলাকালে বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষে জামায়াতের অন্তত আটজন আহত হন। তাঁদের মধ্যে একজনকে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে, তিনজনকে ফেনীর একটি হাসপাতালে ও চারজনকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বিএনপির আহত ২০ জনের মধ্যে দুজনকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে জানা গেছে।
আলকরা ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শরিফ হোসেন বলেন, ২০২০ সালে জামায়াত–সমর্থক মোহাম্মদ তারেক চৌধুরীর বিরুদ্ধে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। তখন স্থানীয় লোকজন এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন। ১৩ মার্চ পুরোনো একটি পোস্টে যুবদলের কর্মী হৃদয় মন্তব্য করেন, ‘এ ঘটনায় তো এখনো ধর্ষণকারীর বিচার হয়নি।’ এর জেরে তাঁরা হৃদয়কে মারধর করেন। ঘটনাটি মীমাংসার কথা বলে গতকাল রাতে তাঁদের ডেকে নিয়ে হামলা করেছেন। এতে তাঁদের ১০ থেকে ১২ জন আহত হন। জামায়াত–শিবিরের নেতা–কর্মীরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হামলা করেছেন এবং বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করেছেন।
জানতে চাইলে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি বেলাল হোসাইন বলেন, মূলত ফেসবুকে পুরোনো পোস্টে মন্তব্যকে কেন্দ্র করে একই গ্রামের দুই যুবকের বিরোধ সামাজিক বিরোধে রূপ নেয়। এ ঘটনা থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত। বিএনপি এখন এটাকে ইস্যু বানিয়ে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাঁরা শান্ত চৌদ্দগ্রামকে অশান্ত করতে চান না। বিএনপির এই অপরাজনীতির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন তিনি। হামলায় তাঁদের সাত থেকে আটজন আহত হয়েছেন।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা বলেন, জামায়াতের নেতা–কর্মীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা করেছেন। তাঁরা এ ঘটনার বিচারের দাবি করেন।
যোগাযোগ করলে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে রাতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। মূলত ফেসবুকে মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ন দ র কর ম হ ম মদ ব এনপ র এ ঘটন য় জন আহত কর ছ ন স ঘর ষ ব ড় ঘর ফ সব ক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল