ব্রাশ দিয়ে চুল আঁচড়ানোর অভিনয় করে সামা তুবাইল আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলে।
মাথায় হাত রেখে সিএনএনকে সামা বলেন, “আমি খুবই দুঃখিত যে আমার ব্রাশ দিয়ে আঁচড়ানোর জন্য একটি চুলও নেই। আমি আয়না ধরে থাকি। কারণ আমি আমার চুল আঁচড়াতে চাই: আমি সত্যিই আবার আমার চুল আঁচড়াতে চাই।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আগে সামা এর চুল এমন ছিল না। তার লম্বা চুল ছিল এবং উত্তর গাজার জাবালিয়ায় তার বন্ধুদের সাথে বাইরে খেলাধুলা করত। কিন্তু তারপর থেকে, সামা এবং তার পরিবার সেই ১৯ লাখ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে রয়েছেন যাদের জোরপূর্বক তাদের বাড়িঘর থেকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে, যারা ইসরায়েলি সামরিক আদেশে প্রথমে ছিটমহলের দক্ষিণ রাফাহ অঞ্চলে পালিয়ে যায়। সহিংসতা বৃদ্ধি পেলে, সামা গাজার মধ্যাঞ্চলের খান ইউনিসের একটি বাস্তুচ্যুত শিবিরে চলে যান। ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৮ হাজার ছাড়িয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী,ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ৪৯ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ গত জুনে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, গাজার প্রায় ১২ লাখ শিশুর মানসিক সহায়তা প্রয়োজন, বিশেষ করে যারা বারবার আঘাতমূলক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে।
জানুয়ারিতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার এক সপ্তাহ পরে জাতিসংঘের মানবিক সংস্থার প্রধান টম ফ্লেচার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, “একটি প্রজন্ম মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত। শিশুদের হত্যা করা হয়েছে, অনাহারে রাখা হয়েছে এবং হিমায়িত অবস্থায় মারা গেছে। কিছু শিশু তাদের প্রথম নিঃশ্বাসের আগেই মারা গেছে - প্রসবের সময় তাদের মায়েদের সাথে মারা যাচ্ছে।”
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভোরে ইসরায়েল নতুন করে বিমান হামলা শুরু করেছে, যার ফলে যুদ্ধবিরতি ভেঙে গেছে এবং শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
একজন চিকিৎসক সিএনএনকে বলেন, গাজা সিটির একটি হাসপাতালের দৃশ্য ‘আমি আগে যা দেখেছি তা আগের মতো নয়।’ হাসপাতালে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশু দেখেছেন তিনি।
গত বছর চিকিৎসকরা নির্ণয় করেছিলেন যে সামা’র চুল পড়া ‘নার্ভাস শক’ এর ফলে হয়েছে, বিশেষ করে আগস্টে রাফায় তার প্রতিবেশীর বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর। তারা বলেছে, ৭ অক্টোবরের পর থেকে তার দৈনন্দিন জীবনের বেদনাদায়ক পরিবর্তন সম্ভবত তার অ্যালোপেসিয়ায় অবদান রেখেছে, যা চুল পড়ার কারণ।
গত বছরের শেষের দিকে ওয়ার চাইল্ড অ্যালায়েন্স এবং গাজাভিত্তিক কমিউনিটি ট্রেনিং সেন্টার ফর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের একটি প্রতিবেদনে গত বছর গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণের ফলে শিশুদের উপর যে মারাত্মক মানসিক আঘাত নেমে এসেছে তা তুলে ধরা হয়েছে। পাঁচ শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ শিশুর যত্নশীলদের উপর করা জরিপের উপর ভিত্তি করে তৈরি এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, সেই পরিস্থিতিতে ৯৬ শতাংশ শিশু মনে করে যে ,মৃত্যু আসন্ন এবং প্রায় অর্ধেক- ৪৯ শতাংশ ইসরায়েলের আক্রমণের কারণে ‘মরে যাওয়ার ইচ্ছা’ প্রকাশ করেছে।
চুল পড়ার জন্য অন্যান্য শিশুদের নেতিবাচক কথাবার্তায় সামা’র মানসিক যন্ত্রণা আরো তীব্র হয়। এর ফলে সে ঘরের ভেতরেই থেকে যায়। বাইরে, সে তার মাথার ত্বক ঢাকতে গোলাপী রঙের একটি ব্যান্ডানা পরে থাকতো।
মাকে সামা বলেছিল,“মা, আমি ক্লান্ত-আমি মরতে চাই। আমার চুল কেন গজাচ্ছে না? আমি মরতে চাই এবং আল্লাহর ইচ্ছায় জান্নাতে আমার চুল গজাতে চাই।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম র চ ল র একট ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
৭৮০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে পূবালী ব্যাংক
বেসরকারি খাতের পূবালী ব্যাংক ২ হাজার কোটি টাকার রেকর্ড পরিচালন মুনাফা করলেও বছর শেষে ব্যাংকটির নিট মুনাফা হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়নি। গত বছর শেষে পূবালী ব্যাংকের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৭৮০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি নিট মুনাফা করেছিল ৬৯৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির মুনাফা ৮২ কোটি টাকা বা প্রায় ১২ শতাংশ বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের পাশাপাশি গত বছরের জন্য লভ্যাংশও অনুমোদন করা হয় গতকালের এই সভায়। গত বছরের জন্য ব্যাংকটি ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যার মধ্যে সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ ও সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। ২০২৩ সালেও ব্যাংকটি একই হারে শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ দিয়েছিল।
ব্যাংকসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে পূবালী ব্যাংক ঋণের সুদ থেকে ১ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা আয় করেছে। বিনিয়োগ, কমিশন, মুদ্রা বিনিময় ও ব্রোকারেজ থেকে আয় করেছে ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। তাতে সব মিলিয়ে আয় হয় ৪ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। বিদায়ী বছরে বেতন-ভাতাসহ নানা খাতে খরচ হয় ১ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। ফলে পরিচালন মুনাফা হয় ২ হাজার ৩০১ কোটি টাকা। ব্যাংকটি বিদায়ী বছরে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করে ৯৬১ কোটি টাকা। এরপর কর পরিশোধের পর নিট বা প্রকৃত মুনাফা হয় ৭৮০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় আমরা চাহিদার বেশি নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক এই পরামর্শ দিয়েছে। খেলাপির তুলনায় বেশি সঞ্চিতি রাখার মাধ্যমে ব্যাংকটির ভিত্তি মজবুত করা হয়েছে।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে পূবালী ব্যাংকের আমানত বেড়ে হয়েছে ৭৪ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এ সময়ে ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। আর খেলাপি ঋণের হার কমে নেমে এসেছে ২ দশমিক ৬৭ শতাংশে। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন এখন ১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। আর কর্মীর সংখ্যা ১০ হাজার ৬৭৮। সারা দেশে ৫০৮টি শাখা ও ২২৭টি উপশাখা রয়েছে ব্যাংকটির। বর্তমানে বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বেশি নেটওয়ার্ক পূবালী ব্যাংকের।