নীরবতা ভেঙে অবশেষে মুখ খুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাগপুরে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিলেন তিনি। সোজা সাপটা ভাষায় জানিয়ে দিলেন, কোনো সহিংসতাকে তিনি সমর্থন করেন না; কখনো করেননি। সে হোক বাবরি মসজিদ ইস্যু অথবা আওরঙ্গজেবের সমাধির বিষয়।

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাগপুরে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানো নিয়ে হিন্দুত্বাবাদীদের বিক্ষোভের মধ্যে মুসলিমদের সঙ্গে দাঙ্গা বেঁধে যায়। ভারতের মুসলিমরা হিন্দুত্ববাদীদের টার্গেটে থাকলেও সাম্প্রতিক ভারতে এই ধরনের দাঙ্গার নজির নেই বললেই চলে। তবে এবার তা দেখা গেল নাগপুরে। আওরঙ্গজেবের কর্মকাণ্ড নিয়ে ঐতিহাসিক বিতর্ক রয়েছে।

নাগপুরের দাঙ্গার বিষয়ে সংবাদিকরা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তার অবস্থান জানতে চান। তিনি ইংরেজিতে উত্তর দেন। প্রথমেই বলেন, এই প্রশ্ন আমাকে করবেন না। তবে মমতা সংক্ষেপে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, “কোন সহিংসতাকেই সমর্থন করি না।” 

আরো পড়ুন:

বিজেপির আয়ু আর ২-৩ বছর: মমতা

অভিযোগ মমতার 
বাংলাদেশে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের লাঠি দিয়ে পেটানো হয়েছে

২০ মার্চ (বৃহস্পতিবার) নবান্নে সংবাদ সম্মেলনে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সাংবাদিকের প্রশ্নের  জবাবে কড়া বার্তা দেন। তিনি বলেন, “আমি কোন সহিংসতাকেই সমর্থন করি না। এমনকি আমরা যখন রাজ্যে বিরোধী চেয়ারে ছিলাম, তখনো কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে কখনোই সমর্থন করিনি।” 

এরপর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সেই সময়ে তার ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মমতা বলেন, “আমার মনে পড়ে যখন ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়েছিল, একটা বড় ধরনের দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল। আমি নিজে তখন রাইটার্স বিল্ডিংয়ে (পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তৎকালীন সচিবালয়) যাই। তখন রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় ছিল। আমি তাদের প্রতি আবেদন জানাই, আপনারা যদি কোনো পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন, সেটা আমাকে জানান, সেক্ষেত্রে আমিও আপনাদের সাহায্য করতে পারি।” 

নাগপুরের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করায় মমতা পাল্টা জানতে চান, কেন তাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “মহারাষ্ট্রে যখন এই ধরনের ঘটনা ঘটছে, তখন সেখানকার উদ্ধব ঠাকরে (শিবসেনা), শরদ পাওয়ারের (এনসিপি) মতো বিরোধী দলের নেতাদের এই প্রশ্ন করা উচিত। তারাই উত্তর দেবেন। কিন্তু আমি একটা কথাই বলতে চাই, সেটা হচ্ছে আমরা সবসময় একতার পক্ষে। কারণ ভারত এমন একটা দেশ যেখানে বৈচিত্রের মধ্যেই ঐক্য রয়েছে।”

মমতার অভিমত, “সংকটকালে ঝগড়া করা উচিত নয়। যখন কোনো সংকট তৈরি হয়, তখন সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হয়।”

মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি সম্ভাজি নগর (সাবেক আওরঙ্গবাদ) থেকে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি অপসারণের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো সংগঠন। এর মধ্যেই নাগপুরে গত ১৭ মার্চ সন্ধ্যায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। 

নাগপুরের মহাল, কোতোয়ালি, চিতনিস পার্ক, গণেশপেঠ ও শুক্রওয়ারি তালাওসহ বেশ কিছু এলাকায় সংঘর্ষর জেরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে এবং লাঠিপেটা করে। পাল্টা তাদের ওপর পাথর ছোড়া হয় এবং বেশ কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

ওই সহিংসতার ঘটনায় ১৫ জন পুলিশ সদস্যসহ প্রায় ২০ জন আহত হন। আটক করা হয় প্রায় অর্ধশতাধিক দাঙ্গাকারীকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জারি করা হয় কারফিউ। সহিংসতায় মদদ দেওয়ার অভিযোগে ঘটনার পরদিন মঙ্গলবারই মূল অভিযুক্ত 'মাইনোরিটিস ডেমোক্রেটিক পার্টি'র (এমডিপি) ফাইম খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

নাগপুরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ডিসিপি) লোহিত মাদানী বলেন, “আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভিডিও সম্পাদনা করে প্রচার করেছিলেন অভিযুক্ত ব্যক্তি (ফাহিম খান)। শুধু তাই নয়, হিংসাত্মক ভিডিওগুলোকেও অতিরঞ্জিত করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, যাতে দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে চারটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।” 

ঢাকা/সুচরিতা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছে পাকিস্তান

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তান বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করেছে। গত বুধবার রাতে দুই দেশের মধ্যে এ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এর ফলে পারস্পরিক শুল্ক কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান। যদিও কোনো দেশই নির্দিষ্টভাবে শুল্কহার নিয়ে কোনো ঘোষণা দেয়নি।

এদিকে, চুক্তির অংশ হিসেবে পাকিস্তানের তেলসম্পদ উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর ডনের।

পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব বর্তমানে ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন। পাল্টা শুল্ক নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। বুধবারই তাঁর সঙ্গে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার, বাণিজ্যসচিব হাওয়ার্ড লুটনিকের বৈঠক হয়।

চুক্তি স্বাক্ষরের পরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত পাকিস্তান দূতাবাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া পোস্টে জানায়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বাজার প্রবেশাধিকার জোরদার করা এবং বিনিয়োগ আকর্ষণ ও পারস্পরিক স্বার্থের বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা সম্প্রসারণ করাই এ চুক্তির মূল লক্ষ্য।

পাকিস্তান দূতাবাস আরও জানায়, চুক্তির ফলে পাকিস্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক কমবে। এতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য আরও ভালো হবে। অবকাঠামো ও উন্নয়ন খাতেও যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বাড়বে।

অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, ‘আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছি। এখন থেকে দেশটির বিশাল তেলসম্পদের উন্নয়নে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করবে।’ ট্রাম্প আরও লেখেন, ‘আমরা এখন তেল কোম্পানি বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় আছি। কে জানে, একদিন হয়তো পাকিস্তান ভারতেও তেল রপ্তানি করবে!’

তবে চুক্তিটির বিস্তারিত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

এ চুক্তির বিষয়ে আজ সকালে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তিনি এক্সে লেখেন, ‘এই ঐতিহাসিক চুক্তি আমাদের স্থায়ী অংশীদারত্বকে আরও জোরদার করবে। ট্রাম্প প্রশাসনের নেতৃত্বে এমন একটি চুক্তি সম্ভব হয়েছে বলে আমি কৃতজ্ঞ।’

পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী আওরঙ্গজেব চুক্তিটিকে ‘উইন-উইন’ বা উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক বলে বর্ণনা করেছেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘যে যাত্রা আমরা কয়েক মাস আগে শুরু করেছিলাম, আজ তা সফলভাবে শেষ হলো।’

আওরঙ্গজেব আরও বলেন, ‘শুল্ক আলোচনার পাশাপাশি অশুল্ক বাধা, বাণিজ্য ভারসাম্য ও শুল্ক কাঠামোর পুনর্মূল্যায়ন নিয়েও আমরা কাজ করেছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছে পাকিস্তান