পরিবারের ভাগ্য বদলাতে বছর পাঁচেক আগে সৌদি আরবে যান আল আমিন (৩৬)। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর জিজানের একটি কারখানার মসজিদে ইমামতি করতেন। পাশাপাশি গাড়ি  ভাড়ায় নিয়ে মানুষের বাড়িতে খাবার সরবরাহ শুরু করেন। সেখানেই শুক্রবার রাতে দুর্বৃত্তের গুলিতে প্রাণ গেছে আল আমিনের। 
গতকাল শনিবার বিকেলে সমকালকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তাঁর ফুফাতো ভাই ঝাউকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন সরকার। আল আমিন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার মেঘনা নদীবেষ্টিত কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের উলুকান্দি গ্রামের লাক মিয়ার ছেলে। তাঁর মৃত্যুর সংবাদে উলুকান্দি গ্রামে চলছে শোকের মাতম। শান্ত ও ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিত আল আমিনকে গুলি করে হত্যার খবরে বিস্মিত প্রতিবেশী ও স্বজনরা। 
শনিবার আল আমিনের বাড়িতে দেখা যায়, ঘরের বারান্দায় বসে ছেলের শোকে আহাজারি করছেন মা ফুল মেহের। স্ত্রী পাপিয়া আখনের কণ্ঠে কোনো কথা নেই। লোকজনের ভিড় দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না এ দম্পতির তিন বছরের মেয়ে সিফা আক্তার।
মা ফুল মেহের ছেলের সঙ্গে সর্বশেষ কথার স্মৃতিচারণ করে বলেন, শুক্রবার তারাবি নামাজ শেষে আল আমিন তাঁকে কল করে বলেছিল, ‘মা, আমি গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। কাজ শেষে আপনাকে আবার ফোন দেব।’
‘এই কথাই যে আমার বাপজানের সঙ্গে শেষ কথা হবে, তা কে-ই বা জানত।’ বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফুল মেহের। 
প্রতিবেশী সাদ্দাম হোসেনের কাছ থেকে জানা যায়, এক বোন ও তিন ভাইয়ের সংসারে আল আমিন সবার বড়। হাফেজি পড়াশোনা করেছিলেন। কোনো কিছুতেই সাফল্য না পেয়ে ভাগ্য ফেরাতে ধারদেনা করে ৫ বছর আগে সরকারিভাবে তিনি সৌদি আরবে যান। মাঝেমধ্যে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসতেন। 
জানা গেছে, সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বরে বাড়িতে এসেছিলেন আল আমিন। তখন স্থায়ীভাবে দেশেই থেকে যাওয়ার চিন্তা করছিলেন। কিন্তু এলাকায় কোনো কাজের ব্যবস্থা হয়নি। তাই সংসার পরিচালনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে আল আমিন ছুটি শেষ হওয়ায় আগেই গত ৬ ফেব্রুয়ারি ফের সৌদি আরবে যান।
এই যুবকের নিহতের ফুফাতো ভাই শিক্ষক কামাল হোসেন সরকার বলেন, সৌদি আরবের ইয়েমেন সীমান্তবর্তী শহর জিজানের একটি কোম্পানির মসজিদে ইমামতি করতেন আল আমিন। সংসারের দায়দেনা মেটাতে ইমামতির পাশাপাশি মানুষে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন। শুক্রবার মসজিদে তারাবির নামাজ শেষে গাড়ি নিয়ে একই কাজ করতে বের হন আল আমিন। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁর মরদেহ রাস্তায় পাশে পড়ে থাকতে দেখে লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সৌদি আরবে অবস্থানরত আল আমিনের ভগ্নিপতি নাজমুল ইসলাম সেখানে গিয়ে পরিচয় শনাক্ত করেন। তিনিই পরে পরিবারকে ফোনে বিষয়টি জানান।
কামাল হোসেনের ভাষ্য, আল আমিনের চোখ-বুকসহ শরীরের বেশ কয়েকটি স্থানে গুলির চিহ্ন রয়েছে। প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে তাদের ধারণা। তবে কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে– সে বিষয়ে কোনো কিছুই আঁচ করতে পারছেন না।
অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) আড়াইহাজার জোনের ফিল্ড অফিসার আমিনুল হক সমকালকে বলেন, আল আমিনের মৃত্যুর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য তাদের কর্মীদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। এসব নিয়ে আল আমিনের মরদেহ দেশে আনা, বিদেশে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির বিষয়ে কাজ শুরু করবেন। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন এ বিষয়ে পরিবারকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে দিতে। 
আড়াইহাজার থানার ওসি এনায়েত হোসেনের কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য ছিল না। তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানানো যাবে। ইউএনও সাজ্জাত হোসেনের কাছেও আল আমিনের মৃত্যুর বিষয়ে কেউ জানায়নি। তিনি বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকেও কেউ যোগাযোগ করেননি। তারা কোনো সহযোগিতা চাইলে প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিনা মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ, সারা দেশে ৮টি কেন্দ্রে

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ প্রশিক্ষণের মেয়াদ দুই মাস। প্রশিক্ষণটি আগামী ১২ অক্টোবর শুরু হবে, চলবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রশিক্ষণ শেষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সরকারি সনদ দেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের ৯ অক্টোবরের মধ্যে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে আবেদন করতে হবে।

প্রশিক্ষণের বিষয়

১. বেসিক কম্পিউটার,

২. অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও ইউনিকোড বাংলা,

৩. ইন্টারনেট,

৪. গ্রাফিক ডিজাইন,

৫. ফ্রিল্যান্সিং,

৬. মার্কেটপ্লেস ও কনসালটিং।

আরও পড়ুনহার্ভার্ড এনভায়রনমেন্টাল ফেলোশিপ, দুই বছরে ১ লাখ ৮৫ হাজার ডলার১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আবেদনের যোগ্যতা

১. ন্যূনতম দাখিল বা সমমানের পরীক্ষায় পাস হতে হবে,

২. হাফেজদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হবে,

৩. উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে,

৪. প্রার্থীকে কম্পিউটার চালনায় বেসিক জ্ঞান থাকতে হবে,

৫. যাঁদের নিজস্ব কম্পিউটার আছে, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে।যে ৮টি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে

১. ঢাকা,

২. চট্টগ্রাম,

৩. রাজশাহী,

৪. খুলনা,

৫. বরিশাল,

৬. সিলেট,

৭. দিনাজপুর,

৮. গোপালগঞ্জ।

আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ২ লাখ টাকার প্রশিক্ষণ, নন-আইটি স্নাতক শিক্ষার্থীদের সুযোগ ৭ ঘণ্টা আগেদরকারি কাগজপত্র

১. শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদের সত্যায়িত ফটোকপি,

২. জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি,

৩. এক কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হবে,

৪. ইমামদের ক্ষেত্রে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা ওয়ার্ড কমিশনারের কাছ থেকে নেওয়া ইমামতির প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে,

৫. মাদ্রাসাছাত্রদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছ থেকে ছাত্রত্ব প্রমাণের কপি জমা দিতে হবে।

নিবন্ধন ফি

মনোনীত প্রার্থীদের নিবন্ধন ফি হিসেবে ৫০০ টাকা দিতে হবে।

দেশের ৮টি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে

সম্পর্কিত নিবন্ধ