সিলেটে বিএনপির নিষ্ক্রিয় নেতাদের দলে ফেরা নিয়ে গুঞ্জন
Published: 23rd, March 2025 GMT
বিএনপির পদত্যাগী, নীরব ও নিষ্ক্রিয় শতাধিক নেতাকর্মী গত শুক্রবার সিলেটে একসঙ্গে ইফতার করেছেন। নগরীর শিবগঞ্জের সৈয়দ হাতেম আলী স্কুল মাঠে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠান আয়োজনের নেপথ্যে ছিলেন এক পদত্যাগী নেতা। এর পর থেকে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, তারা কি দলে ফিরলেন?
আয়োজনে ভূমিকা রেখেছেন সামসুজ্জামান জামান। বিএনপির বিভিন্ন পদে ছিলেন তিন দশক। তিনি নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত। পদত্যাগের আগ পর্যন্ত জামান বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এর আগে ছাত্রদলের নেতৃত্ব ছাড়াও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, মহানগরীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি, কেন্দ্রীয় সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সিলেট স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে অভিমান থেকে ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট পদত্যাগ করেন। সংবাদ সম্মেলন করে ৩৬ বছরের রাজনীতিক জীবন দলকে ‘সদকা’ প্রদানের কথা জানান। এর এক সপ্তাহের মধ্যে জেলা, উপজেলা ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের শতাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগ করেন। ওই মাসে পৃথক সময়ে আরও ৩৬ নেতাকর্মী পদত্যাগ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দুই দশক আগের নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুজ্জামান চৌধুরী দুলু। ছিলেন এক সময়ের নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মো.
এই আয়োজন নিয়ে আমিরুজ্জামান চৌধুরী দুলু বলেন, ‘দিন শেষে আমরা বিএনপির মানুষ। দল যখন ক্ষমতায় ছিল, আমি কোনো কারণে দূরত্ব বজায় রেখেছিলাম। দল ক্ষমতা থেকে সরে গেলে আবার কাছে যাই। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দেশের বাইরে। তাদের ছাড়া শূন্য লাগে। তাদের জন্য দোয়া করতে মূলত বিএনপি পরিবারের ব্যানারে এ আয়োজন ছিল। সাবেক ও বর্তমান অনেক নেতাকর্মী সেখানে ছিলেন। দীর্ঘদিন পর একত্র হওয়াকে পজিটিভলি দেখতে হবে।’
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী বিষয়টি অন্য চোখে দেখছেন। তিনি সমকালকে জানান, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামে দলের একটি সেল হয়েছে। সেই নামে দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা ও অনুমতি ছাড়া কোনো কর্মসূচি করা যাবে না। যারা নীরব ও নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তারা এখন হয়তো ব্যানার রাজনীতি করছেন। নিষ্ক্রিয় থাকা নেতাকর্মীর কেউ সক্রিয় কিংবা ফিরতে চাইলে মাঠে নামতে হবে। অনুষ্ঠান করে জানান দেওয়ার প্রক্রিয়া সঠিক মনে হয় না।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বর্তমানে জেলা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘৫ থেকে ২০ বছর আগে অনেকের সঙ্গে রাজনীতি করেছি। তারা কোনো কারণে মাঠে ছিল না। কিন্তু অন্য দলে যায়নি। তাই তাদের দাওয়াত পেয়ে ইফতারে যাই।’
দলীয় সূত্রমতে, অ্যাডভোকেট জামানের সঙ্গে যারা পদত্যাগ করেছিলেন, তাদের অনেকে আবার দলে সক্রিয় হয়ে উঠছেন। গত ১৫ বছর ধরে দল ক্ষমতায় না থাকায় একটি অংশ ছিল নীরব। পদপদবিবঞ্চিত আরেক অংশ ছিল নিষ্ক্রিয়।
অনুষ্ঠানের উপস্থাপক গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা আবুল কালাম বলেন, ‘সাবেক নেতাদের পক্ষ থেকে মূলত আয়োজন করা হয়েছে। দলের জন্য তাদের ত্যাগ কখনও ভোলা যায় না।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র স ন ত কর ম অন ষ ঠ ন
এছাড়াও পড়ুন:
হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার: গোলাম পরওয়ার
স্বাধীনতার পর যারাই দেশ চালিয়েছে, তারা সবাই হিন্দুদের ব্যবহার করে শুধু নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেছেন, হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার।
আজ শুক্রবার খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাধীনতা চত্বরে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর হিন্দু কমিটির উদ্যোগে হিন্দু সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাগ্যোন্নয়ন ও ডুমুরিয়া-ফুলতলাসহ দেশের সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নে এখন প্রয়োজন ইসলামি সরকার। যাঁরা দাঁড়িপাল্লার জোয়ার দেখে ভয়-হুমকি দিচ্ছে, তাদের হুমকিতে হিন্দুরা আর ভয় পাবে না। হিন্দুদের বাধা দিলে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ৫৪ বছর যারা দেশ চালিয়েছে তারা সন্ত্রাস, দখলদারি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে হিন্দুদের শোষণ করেছে। জামায়াত রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে দেশ থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দখলদারদের নির্মূল করা হবে। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, আমরা সেই পরিবর্তন আনতে চাই। লাঙলের শাসন দেখেছি, ধানের শীষের শাসন দেখেছি, নৌকার শাসনও দেখেছি। একটি দলই বাকি—জামায়াতে ইসলামী, তার প্রতীক দাঁড়িপাল্লা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্রশিবিরের জয়ের বিষয়টি তুলে ধরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছে, আগামীতেও সেই বার্তা জনগণ দেবে।’
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে দেড় হাজার শহীদ ও ৪০ হাজার আহতের কথা উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নভেম্বরে গণভোট দিয়েই ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।
উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি বাবু কৃষ্ণ নন্দীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি দেব প্রসাদ মন্ডলের সঞ্চালনায় সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি আবুল খায়ের, শোভনা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন, শরাফপুর সর্বজনীন পূজা মন্দিরের গোঁসাই সাধু প্রমথ গাইন, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সহসভাপতি হরিদাস মন্ডল, কানাই লাল কর্মকার ও প্রশান্ত কুমার মন্ডল, কোষাধ্যক্ষ গৌতম কুমার মন্ডল, পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুভাষ সরদার, মাগুরখালী ইউনিয়ন সহসভাপতি সুজিৎ কুমার সরকার, ধামালিয়া ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুন্ডু, রুদাঘয়া ইউনিয়ন সভাপতি বিপ্লব সরকার, রঘুনাথপুর ইউনিয়ন সভাপতি কার্তিক চন্দ্র সরকার, খর্ণিয়া ইউনিয়ন সভাপতি নারায়ণ রাহা, মাগুরঘোনা ইউনিয়ন সভাপতি বিশ্বনাথ দাস, সাহস ইউনিয়ন সভাপতি তন্ময় মন্ডল, ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন সভাপতি নিরঞ্জন রায়, রংপুর ইউনিয়ন সভাপতি তরুন কুমার মন্ডল, শোভনা ইউনিয়ন হিন্দু কমিটির মহিলা সম্পাদক প্রিয়ংকা মন্ডল, মাগুরখালী ইউনিয়ন সভাপতি প্রদীপ কুমার সরকার, আটলিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অনিমেষ মন্ডল, গুটুদিয়া ইউনিয়ন সভাপতি মনোরঞ্জন মন্ডল, শরাফপুর ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুমার বিশ্বাস, শোভনা ইউনিয়ন সভাপতি স্বদেশ হালদার, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অরুন কুমার আচার্য প্রমুখ।
হিন্দু সম্মেলন ঘিরে ডুমুরিয়ার ১৪টি ইউনিয়ন থেকে বর্ণিল মিছিল এসে জমায়েত হয়। সমাবেশ শেষে একটি গণমিছিল ডুমুরিয়া সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
হিন্দু সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, নতুন প্রজন্মের প্রথম ভোট দাঁড়িপাল্লার পক্ষে হোক। আগামী নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ারকে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত করতে সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
মতুয়া সংঘের সভাপতি সুদীপ্ত কুমার সুন্দর মন্ডল বলেন, ‘আমরা আর সংখ্যালঘু বলে পরিচয় শুনতে চাই না। আমরা সবাই বাংলাদেশি। স্বাধীনতার পর কোনো সরকার হিন্দুদের দাবিতে কাজ করেনি। এবার প্রমাণ হবে, হিন্দু মানেই একটি নির্দিষ্ট দল নয়।’