বিএনপির পদত্যাগী, নীরব ও নিষ্ক্রিয় শতাধিক নেতাকর্মী গত শুক্রবার সিলেটে একসঙ্গে ইফতার করেছেন। নগরীর শিবগঞ্জের সৈয়দ হাতেম আলী স্কুল মাঠে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠান আয়োজনের নেপথ্যে ছিলেন এক পদত্যাগী নেতা। এর পর থেকে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, তারা কি দলে ফিরলেন? 
আয়োজনে ভূমিকা রেখেছেন সামসুজ্জামান জামান। বিএনপির বিভিন্ন পদে ছিলেন তিন দশক। তিনি নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত। পদত্যাগের আগ পর্যন্ত জামান বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এর আগে ছাত্রদলের নেতৃত্ব ছাড়াও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, মহানগরীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি, কেন্দ্রীয় সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সিলেট স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে অভিমান থেকে ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট পদত্যাগ করেন। সংবাদ সম্মেলন করে ৩৬ বছরের রাজনীতিক জীবন দলকে ‘সদকা’ প্রদানের কথা জানান। এর এক সপ্তাহের মধ্যে জেলা, উপজেলা ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের শতাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগ করেন। ওই মাসে পৃথক সময়ে আরও ৩৬ নেতাকর্মী পদত্যাগ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দুই দশক আগের নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুজ্জামান চৌধুরী দুলু। ছিলেন এক সময়ের নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মো.

মকসুদ। এ ছাড়া ছিলেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুর রহমান, সিনিয়র সহসভাপতি আশিক উদ্দিন আশুক, কেন্দ্রীয় তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়েজ আহমদ দৌলত, বিএনপি নেতা মিনহাজ উদ্দিন মুছা, জেলা বিএনপির সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন লস্কর, সহসভাপতি আব্দুস শহীদ চেয়ারম্যান, জেলা বিএনপি নেতা আরিফ ইকবাল নেহাল।
এই আয়োজন নিয়ে আমিরুজ্জামান চৌধুরী দুলু  বলেন, ‘দিন শেষে আমরা বিএনপির মানুষ। দল যখন ক্ষমতায় ছিল, আমি কোনো কারণে দূরত্ব বজায় রেখেছিলাম। দল ক্ষমতা থেকে সরে গেলে আবার কাছে যাই। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দেশের বাইরে। তাদের ছাড়া শূন্য লাগে। তাদের জন্য দোয়া করতে মূলত বিএনপি পরিবারের ব্যানারে এ আয়োজন ছিল। সাবেক ও বর্তমান অনেক নেতাকর্মী সেখানে ছিলেন। দীর্ঘদিন পর একত্র হওয়াকে পজিটিভলি দেখতে হবে।’
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী বিষয়টি অন্য চোখে দেখছেন। তিনি সমকালকে জানান, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামে দলের একটি সেল হয়েছে। সেই নামে দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা ও অনুমতি ছাড়া কোনো কর্মসূচি করা যাবে না। যারা নীরব ও নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তারা এখন হয়তো ব্যানার রাজনীতি করছেন। নিষ্ক্রিয় থাকা নেতাকর্মীর কেউ সক্রিয় কিংবা ফিরতে চাইলে মাঠে নামতে হবে। অনুষ্ঠান করে জানান দেওয়ার প্রক্রিয়া সঠিক মনে হয় না।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বর্তমানে জেলা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘৫ থেকে ২০ বছর আগে অনেকের সঙ্গে রাজনীতি করেছি। তারা কোনো কারণে মাঠে ছিল না। কিন্তু অন্য দলে যায়নি। তাই তাদের দাওয়াত পেয়ে ইফতারে যাই।’
দলীয় সূত্রমতে, অ্যাডভোকেট জামানের সঙ্গে যারা পদত্যাগ করেছিলেন, তাদের অনেকে আবার দলে সক্রিয় হয়ে উঠছেন। গত ১৫ বছর ধরে দল ক্ষমতায় না থাকায় একটি অংশ ছিল নীরব। পদপদবিবঞ্চিত আরেক অংশ ছিল নিষ্ক্রিয়।
অনুষ্ঠানের উপস্থাপক গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা আবুল কালাম বলেন, ‘সাবেক নেতাদের পক্ষ থেকে মূলত আয়োজন করা হয়েছে। দলের জন্য তাদের ত্যাগ কখনও ভোলা যায় না।’
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র স ন ত কর ম অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কারের প্রশ্নে ব্যক্তি–দলের স্বার্থের চেয়ে দেশকে প্রাধান্য দিতে হবে: নুরুল হক

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেছেন, আর কোনো শাসক যাতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পথ অনুসরণ করে নাগরিকদের নিপীড়নসহ দেশকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে না পারে, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংস্কার প্রশ্নে ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের চেয়ে দেশকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে।

আজ সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে সংস্কার প্রশ্নে গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের শুরুতে নুরুল হক এসব কথা বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে আজ গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

বৈঠকের শুরুতে নুরুল হক বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বান থাকবে, যে সংস্কারগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হবে, সেগুলো যেকোনো মূল্যে এই সরকারের অধীনেই বাস্তবায়ন করতে হবে।

নুরুল হক বলেন, বিগত ১৬ বছরে দেশের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হয়ছিল। গণ অধিকার পরিষদ নবীন রাজনৈতিক দল হলেও ২০১৮ সাল থেকে তাঁরা মামলা, হামলা ও নির্যাতনের শিকার।

বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের নতুন অধ্যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হয়েছে।

সম্মিলিতভাবে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, তাঁদের লক্ষ্য দ্রুততম সময়ে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা।

সংস্কার প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, শুধু আলোচনার মধ্য দিয়েই সংস্কার বাস্তবায়ন হবে না। সবার একত্রিত থাকার তাগিদ সব সময় জারি রাখতে হবে।

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক বিচারপতি এমদাদুল হক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।

আলোচনায় গণ অধিকার পরিষদের ১০ সদস্যদের প্রতিনিধিদল অংশ নিচ্ছে। নুরুল হক ছাড়া প্রতিনিধিদলে রয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, সিনিয়র সহসভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র ফারুক হাসান, গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর সদস্য খালিদ হোসেন, হাবিবুর রহমান রিজু, সাকিব হোসেন, দপ্তর সম্পাদক শাকিলুজ্জামান, সহমানবাধিকার–বিষয়ক সম্পাদক ফাতেমা দিশা, যুব উইংয়ের সদস্য মুমতাজুল ইসলাম, গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্বেচ্ছাশ্রমে চট্টগ্রামে খাল খনন করছে বিএনপি
  • গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যের ওপর নির্ভর করবে সংলাপের সাফল্য: আলী রীয়াজ 
  • জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে গণঅধিকার পরিষদ
  • সংস্কারের প্রশ্নে ব্যক্তি–দলের স্বার্থের চেয়ে দেশকে প্রাধান্য দিতে হবে: নুরুল হক