দেশের ছোট অথচ প্রাচীন মসজিদগুলোর অন্যতম নওগাঁর মান্দা উপজেলার চৌজা গ্রামে অবস্থিত চৌজা মসজিদ। এক কক্ষবিশিষ্ট এই মসজিদে ইমামসহ সাতজন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।

পুরোনো এই মসজিদের স্থাপত্যরীতিতে সুলতানি আমলের ভাবধারার ছাপ সুস্পষ্ট। মসজিদটি ঠিক কত সালে কে নির্মাণ করেছিলেন, সে সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

নওগাঁ জেলা তথ্য বাতায়ন ও মান্দা উপজেলা তথ্য বাতায়নেও মসজিদটি সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য নেই। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তথ্যমতে, সুলতানি আমলের স্থাপত্যরীতিতে তৈরি মসজিদটি অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে নির্মাণ করা হয়ে থাকতে পারে।

দেশের অন্যতম ছোট এই মসজিদ নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার পশ্চিমে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কসংলগ্ন মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চৌজা গ্রামে অবস্থিত।

মসজিদের বাইরে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দেওয়া সাইনবোর্ড থেকে জানা যায়, ২০০২ সালের ১৯ জুন চৌজা মসজিদকে ‘সংরক্ষিত পুরাকীর্তি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আয়তাকার মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ১৫ ফুট ও প্রস্থে ১৫ ফুট। মসজিদটির দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি, মসজিদের মূল দরজাটির উচ্চতা ৫ ফুট এবং উত্তর ও দক্ষিণ পাশের ছোট দুটি দরজার উচ্চতা ৪ ফুট ৯ ইঞ্চি।

এক গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদে মোট তিনটি খিলান দরজা এবং চার কোনায় চারটি বুরুজ বা মিনার আছে। এ ছাড়া মসজিদের মূল দরজা, উত্তর ও দক্ষিণের দরজা এবং মেহরাবের ওপরের অংশে দুটি করে মোট আটটি ছোট মিনার আছে। মসজিদের তিনটি খিলান দরজার ওপরে চালা আকৃতির ডিজাইন করা আছে। এ ছাড়া প্রতিটি বুরুজ বা মিনারের নিচের অংশে কলস আকৃতির ডিজাইন করা। মসজিদের প্রবেশ দরজার ওপর টাঙানো আছে পাঁচটি কাঠি, যা দেখে অতীতে নামাজের ওয়াক্তের হিসাব করা হতো।

চৌজা গ্রামের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক আলাউদ্দিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদারাও বলতে পারেননি এই মসজিদ কবে নির্মিত হয়েছে। এই মসজিদে স্থানীয় মুসল্লি ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে প্রতি জুমায় অনেকে নামাজ আদায় করতে আসেন। মসজিদের মূল অংশে মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ২০০৪/০৫ সালের দিকে মসজিদের সামনে অংশের মেঝে পাকা করে সেখানে নামাজ আদায় করা হয়। ভেতরে-বাইরে মিলিয়ে বর্তমানে এই মসজিদে প্রায় ১০০ জন একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।’

১২ বছর ধরে চৌজা পুরাকীর্তি জামে মসজিদে ইমামতি করছেন হাফেজ রায়হান মণ্ডল। তিনি বলেন, চৌজা পুরাকীর্তি জামে মসজিদে জুমার নামাজসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়ে থাকে। এই মসজিদের ভেতরের অংশে একজন ইমাম ও ছয়জন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। বিগত সময়ে মসজিদটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা ২০০৪ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংস্কার করা হয়।

বর্তমানে মসজিদটিতে শেওলা ধরে মসজিদটির সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া মসজিদটিতে অজু ও শৌচাগারের ব্যবস্থা না থাকায় মুসল্লিদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কাস্টোডিয়ান মুহাম্মদ ফজলুল করিম বলেন, চৌজা মসজিদ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষিত একটি পুরাকীর্তি। প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা এটি। দেশের অন্যতম প্রাচীন ক্ষুদ্রতম মসজিদ এটি। কিন্তু এত দিন এই মসজিদ দৃষ্টির আড়ালে ছিল। মসজিদটি পরিদর্শন করে সংস্কারের প্রয়োজন হলে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মসজ দ র

এছাড়াও পড়ুন:

৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী

গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) নবম ব্যাচের (নবনীতক ৯) শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সমাপনী-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের বিদায় বেলায় এক মঞ্চে আসীন হন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান সাত উপাচার্য।

বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১২টায় একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণে আনন্দঘন পরিবেশে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর ছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী, খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী, পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল আওয়াল, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন তারেক।

আরো পড়ুন:

নতুনবাজারের সেই রনির বুলেটের যন্ত্রণা আজো থামেনি

শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা 

এক মঞ্চে একইসঙ্গে এতজন উপাচার্যকে পেয়ে সমাপনী ব্যাচসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “এভাবে একসঙ্গে পুরো সেশনের শিক্ষা সমাপনী আয়োজনের আইডিয়াটি অত্যন্ত চমৎকার। এতে করে একটি ব্যাচের একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ ঘটে। যেখানে সবার একসঙ্গে পরীক্ষা হয়, রেজাল্ট প্রকাশ হয় এবং কোনো সেশন জট থাকে না। আমি এই আইডিয়াটি আমার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”

খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান বলেন, “আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এখানে এসেছি সংহতি জানানোর জন্য। আমি নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জীবনে সফলতা কামনা করছি।”

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “শিক্ষার্থীদের বিসিএস দেওয়া, বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা বা ব্যবসা করার লক্ষ্য থাকে। তবে জীবনে কোনো না কোনো কিছু করতেই হবে। এক্ষেত্রে অবসর বলে কোনো শব্দ থাকা উচিত নয়।”

পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমি যখন দেশের বাইরে পড়াশোনা করতাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমি কখনোই দেখিনি। আর বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে কখনো একসঙ্গে সাতজন উপাচার্যকেও বসতে দেখিনি, এটা অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর করে দেখিয়েছেন।”

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল আওয়াল বলেন, “আমরা যদি আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করি, আমাদের চাকরি খোঁজার পাশাপাশি এমন কিছু করার মানসিকতা রাখতে হবে, যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।”

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “শিক্ষা সমাপনী মানেই সব সম্পর্ক ছিন্ন করা নয়। বিশ্বে এমন অনেক নজির আছে, যেখানে অ্যালামনাই থেকে উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। তাই নিজেকে বিস্তৃত পরিসরে মেলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করার দায়িত্ব নিতে হবে।”

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “নিজেকে চেনাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আর শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনই বলে দেবে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কতটা জ্ঞান অর্জন করেছে।”

প্রধান অতিথিরি বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর আগত উপাচার্যদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। একইসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি তুলে ধরাও আমাদের লক্ষ্য। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায় এবং অচিরে দাঁড়াবেই।”

তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ইউজিসির দুইটি হিট প্রকল্প পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো পাব। আমরা আশা করছি, বি ক্যাটাগরি থেকে আগামী অর্থবছরের আগেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে।”

গোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসানের সভাপতিত্বে এতে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক, সব অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতি ও প্রাধ্যক্ষগণ, দপ্তর প্রধানগণ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।

শিক্ষা সমাপনী উপলক্ষে বুধবার ছাত্রদের কালার ফেস্ট ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।

ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের কাছে তেল বিক্রি করতে পারে পাকিস্তান, খোঁচা দিলেন ট্রাম্প
  • কেটি পেরি ও জাস্টিন ট্রুডোর ডিনার, গুঞ্জন
  • শিক্ষার্থী সাজিদ স্মরণে ইবিতে ব্যতিক্রমী আয়োজন
  • ৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী